কলকাতায় নামার জন্য তৈরি হয়েও ঝড়ের দাপটে ফের অনেক উঁচুতে উঠে যেতে হল বিমানকে। আর তার পরে আকাশে প্রায় এক ঘণ্টা ২১ মিনিট চক্কর। অসুস্থ হয়ে পড়লেন বেশ কয়েক জন যাত্রী। বমি করতে থাকেন অনেকেই। তার মধ্যেই পাইলটের ঘোষণা, “জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে। হাতে মাত্র ৪০ মিনিটের জ্বালানি রয়েছে।” ভীত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। ৮১ মিনিট চক্কর কাটার পরে বিমানটি অবশ্য নির্বিঘ্নেই নামে। তখন বিমানে মাত্র ১৪ মিনিট ওড়ার মতো জ্বালানি অবশিষ্ট ছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই বিপত্তি ঘটে দিল্লি থেকে আসা ইনডিগোর বিমানে। তাতে ছিলেন ১০৩ জন যাত্রী। দিল্লি থেকে ছেড়েছিল বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রথম বার কলকাতার মাটি ছোঁয়ার চেষ্টা করেও ঝড়ের দাপটে বিমানটি রানওয়ের মাথার উপর থেকে উড়ে যেতে বাধ্য হয়। শুধু ইনডিগোর বিমানটিই নয়। ঝড়ের মুখে পড়ে নামতে না-পেরে চক্কর কাটতে বাধ্য হয় আরও ১১টি বিমান।
কনক সিংহ নামে ইনডিগোর ওই বিমানের এক যাত্রী জানান, সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে বিমানটি কলকাতার মাটি ছোঁয়ার জন্য চলে আসে। কনকদেবী বলেন, “একটা ঝাঁকুনি খেয়ে মনে হল, বিমানটি মাটিতে নেমেছে। কিন্তু পরক্ষণেই পাইলট ঘোষণা করেন, আমরা ঝড়ের মধ্যে পড়েছি। বিমান আবার উপর দিকে উঠতে শুরু করে। তখনও বেশ কয়েক বার ঝাঁকুনি লাগে।” অনেক যাত্রীই ভয়ে চিৎকার শুরু করে দেন। বিমান সংস্থার এক কর্তা জানান, বিদ্যুৎবাহী মেঘ ছাড়িয়ে পাইলট অনেক উপরে উঠে যেতে বাধ্য হন। ওই কর্তার কথায়, “তাতেও ভয় কাটেনি যাত্রীদের। যাঁরা নিয়মিত বিমানে চড়েন না এবং বিমানের পিছন দিকে বসে ছিলেন, তাঁদের অনেকেই বমি করতে শুরু করেন।”
কনকদেবীকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী তীর্থ সিংহ। তাঁর কথায়, “সাড়ে ৬টার পরে এক বার বিমানটি নেমে এসেছে বলে ডিসপ্লে বোর্ডে দেখানো হয়। ২০ মিনিট পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমানটি তখনও নামেনি।” কনকদেবী শুক্রবার বলেন, “সন্ধ্যা ৭টাতেও আমরা উড়ছিলাম। বুঝতেই পারছিলাম না, কখন বিমান নামবে। তখনই পাইলট জানান, বিমানে মাত্র ৪০ মিনিট ওড়ার মতো জ্বালানি অবশিষ্ট রয়েছে। অনেকেই ভয়ে বিমানসেবিকাদের ডাকাডাকি করতে শুরু করেন।” ৭টা ২৬ মিনিটে বিমানটি নামে কলকাতায়। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারের ঝড়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। ইনডিগোর বিমানটি দুর্যোগে নামতে না-পেরে ফের উড়ে যায়। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কেও জ্বালানি ফুরিয়ে আসার কথা জানান পাইলট। ইতিমধ্যে ঝড় প্রায় থেমে আসে। বিমানটি নির্বিঘ্নেই নামে।
শুক্রবার সকালে এটিসি-র সঙ্গে আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানের। ৫৪ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ার যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৬টায় উড়ে বিমানটি সওয়া ৭টায় কলকাতায় ফিরে আসে। আটকে পড়া যাত্রীদের পরে অন্য বিমানে পোর্ট ব্লেয়ারে পাঠানো হয়। বিকল বিমানটি সারিয়ে দুপুর ১২টায় পাঠানো হয় আইজলে। |