বৃহস্পতিবার রাত তখন পৌনে ন’টা। এলগিন রোডের শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ট্যাক্সিটা। চালককে অনুরোধ করলাম, বেহালার পর্ণশ্রীতে নিয়ে যেতে। কিন্তু পর্ণশ্রী শুনেই বেঁকে বসলেন তিনি। মুখের উপরেই বলে দিলেন, অত দূরে যেতে পারবেন না, বড়জোর তারাতলা অবধি যাবেন। তা-ও মিটারে যা ভাড়া উঠবে, তার চেয়ে ৬০ টাকা বেশি দিলে। কারণ, রাত ন’টার পর থেকেই নাকি যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য সরকার।
আমি বললাম, রাত ন’টা নয়, রাত সাড়ে দশটা থেকে ভোর সাড়ে চারটে পর্যন্ত মোট ভাড়ার উপরে ১৫ শতাংশ বেশি দিতে বলেছে সরকার। ট্যাক্সিচালক তর্ক করে বললেন, “৬০ টাকা বেশি দিতেই হবে। না হলে তারাতলা পর্যন্তও যাব না।” রাত হয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে বেশি টাকাও ছিল না। ভাবলাম, তারাতলা পর্যন্ত তো পৌঁছই। তার পরে অটোয় পর্ণশ্রী চলে যাব। তখনকার মতো ৬০ টাকা বেশি দিতে রাজি হয়েই চড়ে বসলাম ট্যাক্সিতে। ভয়ও করছিল, আর কোনও ট্যাক্সিচালক যদি আদৌ যেতে না চান। তবে ট্যাক্সিতে চড়ার আগে গাড়ির নম্বরটা আমি লিখে রেখেছিলাম। ডব্লিউবি০৪সি ৬২৬২।
পৌনে দশটা নাগাদ তারাতলার কাছে পৌঁছতে দেখি, মিটারে উঠেছে ৫২ টাকা। তার মানে আমাকে ১০৬ টাকা দিতে হবে। আমি চালককে বলি, দাদা, বিশ্বাস করুন আমার কাছে বেশি টাকা নেই। আপনাকে ১২০ টাকা দিচ্ছি। নিয়ে নিন। আমার কথা শেষ হতে না হতেই অশ্রাব্য গালিগালাজ শুরু করলেন ওই চালক। কেন আমি কথা দিয়েও ৬০ টাকা বেশি দিচ্ছি না, তার জবাব দিতে বললেন উনি।
অপমানে আমার তখন চোখ থেকে জল বেরিয়ে এসেছে। অত রাতে কী করব, কার কাছে সাহায্য চাইব, বুঝতে পারছিলাম না। বেশি টাকা দিচ্ছি না দেখে চালক বললেন, ‘‘মেরে মুখ ভেঙে দেব।’’ আমি নিরুপায়। আমার কাছে অত টাকাই নেই। বাধ্য হয়ে ১২০ টাকা চালকের হতে গুঁজে দিয়ে দরজা খুলে নেমে পড়লাম। আর তখনই শুনতে পেলাম চালকের হুমকি, ‘‘মুখটা মনে রাখলাম। পরে দেখে নেব।’’ ভয়ে আমার তখন হাত-পা কাঁপছে।
ওই অবস্থায় ট্যাক্সি থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে গেলাম অজন্তা সিনেমার বাসস্টপে। সেখান থেকে অটো ধরে পৌঁছলাম বাড়িতে। রাতেই বাবাকে বিস্তারিত জানালাম। বাবার পরামর্শ মতো শুক্রবার সকালে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে ঘটনাটা জানাই। ট্যাক্সির নম্বরও জানাই।
কিন্তু আমার বাবা পরিবহণমন্ত্রীর পরিচিত হওয়ায় আমি না হয় মন্ত্রীকে বলার সুযোগ পেলাম। সকলের ক্ষেত্রে তো সেই সুবিধা নেই। তাদের সঙ্গে কী এই ধরনের দুর্ব্যবহার করেই যাবেন এক শ্রেণির ট্যাক্সিচালক! এর কী কোনও প্রতিকার নেই? |