রাতে নয়, সন্ধ্যার ট্যাক্সিতেই ‘জুলুমের’ শিকার ছাত্রী
নৈশ-ভাড়া বেঁধে দিলেও যে শহরের ট্যাক্সির ‘জুলুম’ ঠেকানো যাবে না, সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।
একটু বেশি রাতে ট্যাক্সিতে উঠলে এখন রাতের বাড়তি ভাড়াটুকুর উপরেও মর্জিমাফিক ‘একস্ট্রা’র দর হাঁকছেন ট্যাক্সিচালক। কিংবা দিনের যে কোনও সময়েই সওয়ারিকে ট্যাক্সিতে তোলার সময়ে চালক মাঝেমধ্যেই বাড়তি ভাড়ার ‘ফতোয়া’ ঘোষণা করে দিচ্ছেন। যাত্রীকে হতভম্ব করে মিটারও বাড়ছে আপন খেয়ালে। অথচ, এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে সইতে হচ্ছে ট্যাক্সিচালকের ‘দুর্ব্যবহার’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রী স্নেহা দত্তের অভিযোগ এ বার শহরের নিত্যযাত্রীদের ট্যাক্সি-সফরের এই অভিজ্ঞতার দিকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
স্নেহার দাবি, তিনি পৌনে ন’টা নাগাদ পর্ণশ্রীতে যাবেন বলে ল্যান্সডাউন থেকে ট্যাক্সিতে ওঠেন। ট্যাক্সিচালক বলেন, তিনি বড়জোর তারাতলা অবধি যেতে পারেন। তাতেও বাড়তি ৬০ টাকা দিতে হবে। স্নেহার অভিযোগ, মিটার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল। তারাতলায় ভাড়া দাঁড়ায় ১০৬ টাকা। বাড়তি ৬০ টাকা না-থাকায় স্নেহা ১২০ টাকা দেন। এতে ট্যাক্সিচালক তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় অপমান করেন বলে অভিযোগ। অথচ, ট্যাক্সিচালকদের দাবি মেনে মুম্বই-দিল্লির মতো কলকাতাতেও সম্প্রতি ট্যাক্সির বর্ধিত নৈশ-ভাড়া চালু করেছে পরিবহণ দফতর। রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে ওই ভাড়া চালু হওয়ার কথা।
বস্তুত, মহাকরণে বসে পরিবহণমন্ত্রী নৈশ-ভাড়ার তালিকা ঠিক করলেও ট্যাক্সিমালিক বা চালকদের বেশির ভাগ ইউনিয়নই প্রকাশ্যে জানিয়েছে, বাড়তি ভাড়ার হার মানতে তারা নারাজ। ফলে, রাজপথে ট্যাক্সিচালকের তোপের মুখে পড়ে হয়রান নিত্যযাত্রীরা। ল্যান্সডাউন থেকে তারাতলায় যেতে বাড়তি ভাড়া চেয়ে ট্যাক্সিচালকের ‘অভব্যতা’য় পরিবহণমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন স্নেহা। কিন্তু তাঁর পক্ষে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও শহরের বেশির ভাগ নাগরিকের পক্ষেই তো তা সম্ভব হয় না! ফলে প্রশ্ন উঠছে, অন্য কোনও ট্যাক্সি-আরোহীর ক্ষেত্রে এমন ঘটলে প্রশাসন কী করবে?
শহরের ট্রাফিক-কর্তাদের মতে, ট্যাক্সি-প্রত্যাখান বা ভাড়া নিয়ে বচসায় চালকের দুর্ব্যবহার রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোলে (২২১৪-৩৬৪৪) ফোন করলেই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন তাঁরা। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র স্নেহার অভিযোগটি খুবই ‘গুরুত্ব’ দিয়ে দেখছেন। তিনি বলেন, “যোগমায়া দেবী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর অভিযোগ গুরুতর বলে মনে হচ্ছে। ডিসি (ট্রাফিক)-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।” ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “ওই ট্যাক্সির (ডব্লিউবি০৪সি৬২৬২) মালিককে চিহ্নিত করা গিয়েছে। চালকের সঙ্গেও কথা বলা হবে।”
স্নেহার ঘটনার প্রেক্ষিতে ট্যাক্সিচালক বা মালিকদের সংগঠনগুলি কিন্তু উল্টে সরকারের সামগ্রিক ভাবে ট্যাক্সি ভাড়া না-বাড়ানোর নীতিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। ট্যাক্সি-মালিকদের সংগঠন ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর কর্তা বিমল গুহ বলেন, “সরকার বিষয়টাকে আরও জটিল করে তুলেছে। রাতে কিছু বাড়তি টাকার জন্যই ট্যাক্সিচালকেরা ডিউটি করেন। আগে এমনিতেই রাতে ১৫-২০ টাকা বাড়তি মিলত। এখন ১৫ শতাংশ ভাড়া বাড়লেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আগেই বেশি টাকা হাতে আসত।” স্নেহারও অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর কাছে বাড়তি ৬০ টাকা চান ট্যাক্সিচালক।
অধুনা রাজ্যের বিরোধী শিবির সিটুর অনুগামী ট্যাক্সিমেনস ওয়ার্কাস ইউনিয়নের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট প্রমোদ ঝা অবশ্য কয়েক জনের ‘দুর্ব্যবহারে’ ট্যাক্সিচালকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন। কিন্তু তিনিও বলছেন, “অনেক বছর ভাড়া বাড়ছে না বলেই এমন ঘটছে।” বিমলবাবুরও বক্তব্য, “বাম বা তৃণমূল সরকার কেউই ট্যাক্সিমালিক বা চালকদের সমস্যাটা দেখছেন না। আড়াই বছর আগে দু’টাকা হারে শেষ বার ভাড়া বেড়েছিল। তার পরে ডিজেল-পেট্রোলের দাম বাড়লেও ভাড়া বাড়েনি।” তাঁর মতে, নৈশ-ভাড়া চালু হওয়াটাও স্রেফ ‘লোকদেখানো’। প্রমোদবাবুর বক্তব্য, “নৈশ ভাড়া চালুর সময়ে সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত না-নিলে পারত। ট্যাক্সিচালকদের ব্যবহার সংযত রাখা অবশ্যই উচিত। কিন্তু বাড়তি ভাড়া চাওয়ার পিছনে যুক্তি রয়েছে।”
মিটারে কারচুপি ঠেকাতে সম্প্রতি সব ট্যাক্সিতে ডিজিটাল মিটার ও প্রিন্টার বসাতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশও এখনও পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেনি প্রশাসন। আপাতত স্নেহার অভিযোগে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিলেও পরিবহণমন্ত্রী এখনও সমস্যা সমাধানের কোনও স্থায়ী সূত্র পাননি। তিনি বলেন, “চালকেরা ইদানীং বড় বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। উত্তেজনা ঠান্ডা করতে শীঘ্রই ডিপোয় ডিপোয় ধ্যানে বসানোর শিবির হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.