নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
স্কুল কর্তৃপক্ষের ‘এক-গুঁয়েমি’র জন্য নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে হয়রানি হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। হয়রানির কথা জানিয়ে শুক্রবার জেলা ভারপ্রাপ্ত স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ওই কিশোরীর পরিবার। সন্তোষবাবু বলেন, “চিঠি হাতে পাইনি। তবে ওই ছাত্রী যাতে ভর্তি হতে পারে তার ব্যবস্থা করব।” প্রধান শিক্ষক অবশ্য একগুঁয়েমির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর থানার বাসুদেবপুরের বাসিন্দা গোপীনাথপুর বিদ্যাপীঠের ছাত্রী নীপা মণ্ডলের মামারবাড়ি লোকপাড়া হাইস্কুল লাগোয়া ঢেকা গ্রামে। পড়াশোনর সুবিধার জন্য গত ২৮ এপ্রিল তার পরিবারের লোকজন লোকপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নীপার মেসোমশাই জয়ন্ত দাসের দাবি, “অভিজিতবাবু ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। সেই মতো পরের দিন গোপীনাথপুর হাইস্কুল থেকে বদলির শংসাপত্র নিয়ে যোগাযোগ করি। কিন্তু উনি জানিয়ে দেন, ভর্তির সময়সীমা অতিক্রম হয়ে গিয়েছে। আর কিছু করার নেই।” এই পরিস্থিতিতে চরম সমস্যায় পড়েছেন নীপা ও তার পরিবার।
এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বাসুদেবপুরের বাড়িতে একাই থাকেন স্বামী বিচ্ছিন্না সুনয়নীদেবী। সামান্য জমি ও স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে মাসিক ৪০০ টাকার বেতনে আয়ার কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান তিনি। সুনয়নীদেবী বলেন, “বাপেরবাড়িতে থেকে মেয়ের পড়াশোনার সুবিধা হবে ভেবে বদলির শংসাপত্র তুলেছিলাম। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সদস্যদের কাছে কান্নাকাটি করেও ভর্তির কোনও সুরাহা হয়নি।” এ দিকে, নীপার কথায়, “মায়ের পড়ানোর সামর্থ নেই। দাদুরবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করলে টিউশন-সহ অন্য সুবিধা মিলত। এর পর হয়তো আর পড়াই হবে না।”
প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দের দাবি, “ওই ছাত্রীর পরিবারকে আমি প্রগতিপত্র নিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম। শংসাপত্র আনতে বলিনি। কিন্তু তাঁরা দেরিতে শংসাপত্র এনেছেন। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ১৫ মার্চ ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে।” যদিও পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রভাকর মণ্ডল অভিযোগ করেন, “ওই ছাত্রীর ভর্তির বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে বলেছিলাম। কিন্তু উনি আইনের দোহাই দিয়ে ভর্তি নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন।”
এ দিকে ওই ছাত্রী ভর্তি হতে না পারায় সরব হয়েছেন রাজ্য শিক্ষক সমিতির জেলা যুগ্ম সম্পাদক অধীরকুমার দাস ও এবিটিএ’র জেলা সম্পাদক সমরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা বলেন, “১৯৮৮ সালে সর্বশেষ সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে বদলি সংক্রান্ত ভর্তির ক্ষেত্রে শংসাপত্র সংগ্রহের এক মাসের মধ্যে এবং শিক্ষাবর্ষ শুরুর সাড়ে চার মাসের মধ্যে ভর্তি নেওয়ায় কোনও সমস্যা নেই। আসলে সাধারণ ভর্তি ও বদলি সংক্রান্ত ভর্তির বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেছেন।”
অন্য দিকে, পর্ষদের জেলা প্রতিনিধি মহম্মদ নুরুজ্জামানের যুক্তি, “ভর্তি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা যাই থাক, শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আইনে প্রতিটি ইচ্ছুক ছেলেমেয়েকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যে কোনও সময়ে ভর্তি নিতে হবে শুধুমাত্র জন্ম শংসাপত্র দেখে। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের নিয়মেও, একই ভাবে নবম ও দশম শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়ার কথা বলা আছে। এ ক্ষেত্রে কেন করা হল না বুঝতে পারছি না।” |