জোটে ওঠাপড়া
সব আসনে প্রার্থী দিল তৃণমূল, জোট-প্রশ্ন নলহাটিতে
ড়াইটা শুরু হয়েছিল বছর তিনেক আগে। মাঝে বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বামফ্রন্টকে হারাতে পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল।
কিন্তু সেই ‘পাশে দাঁড়ানো’ যে ক্ষনস্থায়ী, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলল শুক্রবার। যখন নলহাটি পুরসভার ১৫টি আসনের জন্যই মনোনয়নপত্র জমা দিলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। তৃণমূল সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়ায় পুরভোটে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১১ মে হওয়ায় জোট হচ্ছে না এ কথা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়।
দেওয়ালেও বিভাজন! এটাই নিত্যদিনের ছবি। নলহাটি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড।
মুখে অবশ্য দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কটাক্ষ, “কাদের সঙ্গে জোট করব? কংগ্রেসের বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় যদি আমাদের দলের পুরপ্রধান, সাংসদ, মন্ত্রী, চেয়ারম্যানকে যদি জোটের কথা বলতেন, তা হলে দু’তিনটে আসন ছেড়ে দিতাম। তাও প্রণববাবুর ছেলে বলেই ওই আসনগুলো ছাড়তাম।” তাঁর দাবি, “কংগ্রেসের আছেটা কী? আমরা যদি নলহাটিতে প্রার্থী দিতাম, তা হলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় কি নলহাটিতে জিততে পারতেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল হারতে জানে না। পুরভোটে আমরা সব আসনেই জিতব।”
অন্য দিকে, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “সম্মানজনক ও ন্যূনতম ভোটের সৌজন্য বোধ নিয়ে কোনও দিন আলোচনা না করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি এক মাস ধরে কংগ্রেসকে দু’তিনটি আসন দেওয়ার কথা বলে আসছেন।” এর পরেই তাঁর ঘোষণা, “কংগ্রেস ভিক্ষার দান নিয়ে পুরসভায় লড়াই করবে না। ১৫টি আসনেই আগামী সোমবার কংগ্রেস প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।”
এ দিকে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে এ দিন সকাল থেকে রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবনের সামনে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে চরম উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। সেই উৎসাহ আরও বাড়ে প্রশাসনিক ভবনে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের উপস্থিতিতে।
জোটে ওঠাপড়া
৩ বছর আগে বর্তমান পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা-সহ ৮ কংগ্রেস কাউন্সিলরের তৃণমূলে যোগ।
নলহাটির পুরবোর্ড তৃণমূলের দখলে এল।
কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্ন ফেরত দেওয়ার দাবিতে বিপ্লবাবুর বিরুদ্ধে পুরভবনের সামনে মঞ্চ বেঁধে ৭ দিনের ধর্না কংগ্রেসের।
বিধানসভা ভোটের আগে নলহাটির প্রার্থী হিসাবে বিপ্লববাবুর নাম ঘোষণা জেলা তৃণমূল সভাপতির। পরে অবশ্য জোট প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ান অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
ভোটের পরেই কংগ্রেস পরিচালিত বানিওড় পঞ্চায়েতে ভাঙন। কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যদের তৃণমূলে যোগ। নেতৃত্বে বর্তমান পুরপ্রধান।
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্প্রতি পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে আন্দোলন কংগ্রেসের।
অনুব্রতবাবু আসার পরে নলহাটির প্রাক্তন পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা সাংবাদিকদের প্রার্থী তালিকা পড়ে শোনান। তার আগে অবশ্য সমস্ত প্রার্থীদের একত্রিত করে বিপ্লববাবু ও তাঁর অনুগামীরা প্রশাসনিক ভবনের মূল প্রবেশদ্বারে ফটো সেশন সেরে ফেলেন।
প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরে দেখা যায়, ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টি ওয়ার্ডে নতুন মুখ এনেছে তৃণমূল। বাকি ওয়ার্ডের মধ্যে দু’টিতে প্রার্থী হয়েছেন বিপ্লব ওঝা। দু’টি ওয়ার্ডে নিজেকে দাঁড় করানোর প্রসঙ্গে বিপ্লববাবু বলেন, “৮ নম্বর ওয়ার্ডে দু’টি নির্বাচনে নির্দলপ্রার্থী বিজয়ী হলেও ওয়ার্ডবাসীর দাবি মতো ওখানে তেমন উন্নয়ন হয়নি। সেই জন্য দলের নির্দেশে এখানে প্রার্থী হয়েছি। আর বাসিন্দাদের চাহিদা অনুযায়ী এবং দলের নির্দেশেই ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও আমি দাঁড়িয়েছি।”
এ দিকে বিধানসভা নির্বাচনে জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের হয়ে বিপ্লববাবু প্রচার করলেও যুযুধান দুই দলের মধ্যে লড়াই চলছিল। তবে তিক্ততার সূত্রপাত তিন বছর আগে ১৬ আসনের এই পুরসভায় ১১ জন কংগ্রেস কাউন্সিলরের মধ্যে বিপ্লববাবু নিজে এবং আরও সাত জন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন।
ওয়ার্ড প্রার্থীর নাম
১) ইমাম হোসেন (নতুন) ২) অমরচন্দ্র দাস (নতুন)
৩) রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ ৪) রবীন্দ্রনাথ শর্মা (নতুন)
৫) মধু ভকত (নতুন) ৬) সরস্বতী দাস (নতুন)
৭) নির্মল মণ্ডল ৮) বিপ্লবকুমার ওঝা
৯) জুলি ফুলমালি (নতুন) ১০) জয়ন্ত দত্ত (নতুন)
১১) একরামুল হক ১২) আলেয়া বিবি (নতুন)
১৩) বিপ্লবকুমার ওঝা ১৪) অশোককুমার ঘোষ
১৫) আমিনা বিবি (নতুন)
এ বার তৃণমূলের নতুন মুখ ৯ জন।
তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধির পরে নলহাটি গার্লস হাইস্কুলে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে দুই দল আলাদা ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তৃণমূল প্রার্থীরা ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতে জয়ী হন এবং কংগ্রেস পরিচালিত পরিচালন সমিতির দখল নেয় তৃণমূল। বস্তুত বিপ্লব ওঝা কংগ্রেসে চলে যাওয়া ঘিরে ৭ দিনের ধর্না মঞ্চে বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে কংগ্রেস কর্মীরা দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। শুধু তাই নয়, দলীয় প্রতীর ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। পরবর্তীকালে বিধানসভা নির্বাচনের পরে নলহাটি এলাকায় বেশির ভাগ স্কুলে পরিচালন সমিতির ভোটে দুই দল আলাদা ভাবে লড়াই করেছে।
যদিও এ সব প্রসঙ্গে ও জোট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিপ্লববাবু। তিনি শুধু বলেন, “আমি সব সময় জোট চেয়ে এসেছি। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জোট নিয়ে কোনও আলোচনার প্রস্তাব করা হয়নি।”
জোট হবে কি হবে না, তা জোর দিয়ে বলা না গেলেও আসন্য পুরভোটকে ঘিরে নলহাটিতে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছে।
ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.