মঙ্গলবার বিকেল। লালগড়ের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, ‘খড়্গপুরে ট্রমা সেন্টারের কাজ হবে।’ অথচ, বছর তিনেক আগেই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে ট্রমা সেন্টারের নতুন ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অর্থে হয়েছে ওই কাজ। কিন্তু প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি না আসায় এখনও ট্রমা সেন্টার চালু হয়নি। সেই ভবনে শিশু ওয়ার্ড স্থানান্তরিত হয়েছে।
প্রায় শেষ একটি প্রকল্পের কাজ ফের নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করায় রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধীদের অভিযোগ, নতুন কোনও প্রকল্প হচ্ছে না। পুরনো প্রকল্পকেই ফের নতুন করে ঘোষণা করা হচ্ছে! ট্রমা সেন্টার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে মেদিনীপুরের সিপিআই সাংসদ প্রবোধ পান্ডার কটাক্ষ, “আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না! কবে হয়তো উনি বলবেন, এ বার আমরা খড়্গপুর স্টেশনের শিলান্যাস করলাম!”
এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না শাসক তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাইতি বলেন, “বাম-আমলে কাজ কিছু হয়নি। শুধু পরিকল্পনা হয়েছে। রাজ্য সরকার এখন সেই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছে।”
২০০৯ সালের ২৭ মে রাতে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার পর খড়্গপুর হাসপাতালে এই ট্রমা সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা তীব্র ভাবে অনুভূত হয়েছিল। তা ছাড়া, খড়্গপুর শহরের দু’দিক দিয়ে গিয়েছে দু’টি জাতীয় সড়ক, ৬ ও ৬০ নম্বর। শহরের পাশে রয়েছে ট্রেন লাইন। এক দিকে হাওড়া, অন্য দিকে টাটা। আর এক দিকে ভুবনেশ্বর ও অন্য দিকে আদ্রা। ফলে, রেলশহর ও তার আশপাশে মাঝেমধ্যেই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। |
আহতদের দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দিতেই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার চালুর সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করে। ২০০৯ সালে নতুন ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়। ট্রমা সেন্টারে আইসিইউ, সিটি স্ক্যান, ইসিজি, উন্নত এক্সরে মেশিন থাকার কথা। ৩ জন সাধারণ সার্জেন, ৩ জন অর্থোপেডিক সার্জেন ৩ জন অ্যানাসথেটিস্ট, সাধারণ মেডিক্যাল অফিসার ৪ জন, ২৫ জন স্টাফ নার্স, ১৩ জন জিডিএ, ৪ জন টেকনিশিয়ান, ২ জন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ও ১৩ জন সুইপারও থাকার কথা। এখন পর্যন্ত ১ জন সার্জেন ও ১ জন অ্যানাসথেটিস্ট নিয়োগ হয়েছে। এঁরা আপাতত খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে কর্মরত।
কিছু যন্ত্রাপাতিও কেনা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের টেবিল, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, আলমারি, শয্যা প্রভৃতি। ভবন নির্মাণ ও সরঞ্জাম কেনার পর বরাদ্দ দেড় কোটি টাকার মধ্যে আরও ২৪ লক্ষ টাকা রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। যা দিয়ে একটি ৫০০ এমএম একটি এক্সরে মেশিন ও অর্থোপেডিক বিভাগের সি-আর্ম যন্ত্র কেনার কথা। ওই পরিমাণ অর্থ খরচ করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন না থাকায় তা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে কিনতে বলা হয়েছে। অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের গড়িমসির জন্যই এই সেন্টার চালু হচ্ছে না। জানা গিয়েছে, নতুন এই সেন্টারের জন্য একটি ১২৫ কেভি জেনারেটর দরকার। এ জন্য কত টাকা লাগবে, জেনারেটর চালাতে বছর কত খরচ হবে, সেই সংক্রান্ত পরিকল্পনা রিপোর্ট একাধিকবার স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একটি পরিকল্পনা- রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে জমা দেওয়ার পরও তা হারিয়ে গিয়েছিল!
ফলে ট্রমা সেন্টারের জন্য তৈরি ভবন দীর্ঘদিন ধরে পড়েই ছিল। এখন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে সদ্যোজাত শিশুদের জন্য একটি ‘সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজেশন’ ইউনিট (এসএনএসইউ) তৈরির কাজ চলছে। পরিস্থিতি দেখে এই ট্রমা সেন্টারের জন্য তৈরি ভবনেই শিশু ওয়ার্ড স্থানান্তরিত করা হয়েছে। খড়্গপুর হাসপাতালের সুপার দেবাশিস পাল বলেন, “ওই ভবনটি ফাঁকা ছিল। তাই ওখানে শিশু ওয়ার্ড স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিই। এসএনএসইউ তৈরি হয়ে গেলেই শিশু ওয়ার্ডটি আগের জায়গায় সরানো হবে।”
ট্রমা সেন্টার চালু হচ্ছে না কেন? হাসপাতাল সুপার বলেন, “ এ ক্ষেত্রে আমাদের তরফ থেকে সব রকম চেষ্টাই করা হচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে খড়্গপুরের মতো এলাকায় যে ট্রমা সেন্টার চালু করা জরুরি, তা মানছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। খড়্গপুরের বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহন পাল বলেন,“ দ্রুত কাজ শেষ করা জরুরি। বিষয়টি নিয়ে ফের রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।” |