রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় • মানিকগঞ্জ |
গরু কেনার কাগজপত্র পরীক্ষার সময়ে একজন চাষিকে বেধড়ক মারধর করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের এক অফিসার ও জওয়ানের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়ি সদরের কোতোয়ালি থানায় তা নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ জানায়, অভিযোগকারীর নাম মহম্মদ সাত্তার প্রধান। তিনি বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ বেরুবাড়ির গর্তেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় কৃষিজীবী। বর্তমানে সাত্তার জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিএসএফের তরফে অবশ্য অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে বুধবার দাবি করা হয়েছে। ওই অভিযোগের আড়ালে চক্রান্ত রয়েছে বলেএ বিএসএফের সন্দেহ। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। যা নিয়ে হইচই তা অবশ্য ঘটেছে শনিবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ ফাঁড়ি এলাকায়। সাত্তারের ভাই ভাই সহিদুল প্রধান বলেন, “শনিবার মানিকগঞ্জ বাজারের কাছে দাদাকে রাস্তায় পনে থাকতে দেখে বাসিন্দারা খবর দেন। আমি গিয়ে দাদাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করাই। রবিবার পর্যন্ত দাদা কথা বলতে পারেনি। সোমবার সব জানার পরে থানায় গিয়ে দাদার হয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়।” |
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে সাত্তার প্রধান। নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ জানায়, অভিযোগে লেখা হয়েছে শনিবার বিকেলে সাত্তার দুটি হালের গরু কিনে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। বেলা ৪টে নাগাদ মানিকগঞ্জ বাজারে বিএসএফের ক্যাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে তিনি গরু দুটি কেনার কাগজপত্র দেখাতে যান। বিএসএফের মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের এক অফিসার ও জওয়ান তাঁকে জোর করে ধরে ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। সেখানেই তাঁকে পিছমোড়া করে বেঁধে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। হাসপাতালে শুয়ে সাত্তার অভিযোগ করেন, “আমাকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারা হয়। লাথি মারা হয়। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ আমাকে রাস্তার ওপর ছুড়ে ফেলে দেয়। গরু দুটিকে ছেড়ে দেয়। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।” জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল সুত্রে জানা যায় যে সাত্তারের বুকে পেটে এবং পিঠে আঘাত লেগেছে। বিএসএফ সূত্রের খবর, সীমান্ত এলাকায় কেউ গরু কিনলে রুটিনমাফিক তার কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়। কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাত্তারের ক্ষেত্রেও এ রকম ঘটনাই ঘটেছিল বলে বিএসএফের দাবি। বিএসএফের ৯৫ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের সহকারি কমান্ডান্ট আর সিং বলেন, “বিএসএফের পক্ষ থেকে কেউ ওই ব্যক্তিকে মারধর করেনি। রাস্তায় সে শারীরিক কারণে পড়ে গিয়েছিল। তার জন্যে বিএসএফের কেউ দায়ী হতে পারে না। অভিযোগ ভিত্তিহীন কারণ, বিকেল বেলা মানিকগঞ্জ বাজারে ভিড়ের মধ্যে একজনকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হল অথচ কেউ দেখতে পেল না, এটা হতে পারে না। গোটা ঘটনাটি চক্রান্ত।” সাত্তারের মা দ্বীপজান বেওয়া ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, “এক বছর হল ছেলের বিয়ে দিয়েছি। বউ-এর কানের দুল এবং হাতের চুড়ি বিক্রি করে হালের দুটি গরু কিনতে গিয়েছিল ছেলেটা। ওকে বিনা কারণে যা অত্যাচার করেছে তা দেখলে শিউরে উঠতে হয়। আমরা সুবিচার চাই।” |