বন্ধ শিথিল করলেও ডুয়ার্সে সভার অনুমতির দাবিতে বিমল গুরুঙ্গের ‘ফতোয়া’ মেনে সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট শুরু করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জনপ্রতিনিধিরা।
বুধবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের উপস্থিতিতে দার্জিলিং হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এলাকার মোর্চা বিধায়ক ত্রিলোক দেওয়ান ও পুর চেয়ারম্যান অমর সিংহরাই যোগ দেননি। ত্রিলোকবাবু বলেছেন, “ডুয়ার্সে আমাদের জনসভার অনুমতি দিতে হবে। যতদিন পর্যন্ত তা দেওয়া হবে না, তত দিন আমরা সরকারি অনুষ্ঠান, কোনও বৈঠকে যোগ দেব না। দলীয় সভাপতি ইতিমধ্যে তা ঘোষণা করে দিয়েছেন।”
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার মোর্চার বয়কট আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও চটজলদি কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছে না। বরং আলোচনার টেবিলে বসে মোর্চা নেতৃত্বকে বুঝিয়ে জটিলতার নিষ্পত্তির উপরেই আপাতত জোর দিয়েছে সরকার। গৌতমবাবু বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, তরাই-ডুয়ার্সের ঘোলাটে পরিস্থিতি ঠিক না-হওয়া পর্যন্ত কোনও পক্ষকে মিটিং-মিছিল করতে দেওয়া হবে না। সকলকেই সংযত থাকতে হবে।” এদিন জলপাইগুড়িতে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “অনির্দিষ্টকালের বন্ধ করে কারও কোনও সুবিধে হয় না। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের সুবিধার জন্য ডুয়ার্স তরাইয়ে অশান্তি ছড়াচ্ছেন। রাজ্য সরকার উন্নয়নের মাধ্যমেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।” |
জয়গাঁর রাঙামাটি বনবাংলোয় প্রশাসনিক বৈঠকে বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চা নেতারা। ছবি: নারায়ণ দে |
এই আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতেই এদিন ডুয়ার্সের ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ লাগোয়া রাঙামাটি চা বাগানের বনবাংলোয় মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ ও কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায়, এসডিপিও বিশ্বচাঁদ ঠাকুর। সেখানে পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিনিধিরা অশান্তির আশঙ্কায় সাময়িক ভাবে গুরুঙ্গকে ডুয়ার্স থেকে পাহাড়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। রাজ্য সরকারের সেই আর্জি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়ে দেন মোর্চা নেতারা। পাশাপাশি, মোর্চার প্রচার সচিব তথা কালিম্পঙের বিধায়ক বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পাহাড়ে গেলে যদি অসুবিধে না-হয়, তা হলে বিমল গুরুঙ্গ ডুয়ার্সে থাকলে সমস্যার কথা উঠছে কেন? তা ছাড়া আমরা তো অশান্তি চাই না। যাই হোক, আমরা শীঘ্রই কেন্দ্রীয় কমিটিতে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ করব।”
বুধবার বামফ্রন্টের বৈঠকে তরাই ও ডুয়ার্সের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ দিনই উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরে বৈঠকে তরাই-ডুয়ার্সের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের মতামত জানান আরএসপির রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী ও মনোজ ভট্টাচার্য। বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বিমানবাবু বলেন, “এতদিন সমস্যা পাহাড়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার তরাই ও ডুয়ার্সেও অশান্তি হচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ১৭ দিনের মধ্যে পাহাড়ের সমস্যা সমাধান করে দিলাম। যদি সমস্যার সমাধানই হয়ে যাবে, তাহলে আবার নতুন করে অশান্তি হচ্ছে কেন?”
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের ত্রিপাক্ষিক চুক্তির বিভিন্ন অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বিমানবাবু বলেন, “এই চুক্তির মধ্যেই স্ববিরোধিতা আছে। আমরা সে কথা আগেই বলেছিলাম। কখনও গোর্খাল্যান্ডের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে, পাহাড়ের নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যেই জিটিএ হবে। আবার কখনও বলা হচ্ছে তরাই ও ডুয়ার্সের কোনও মৌজা জিটিএ-তে যুক্ত হবে কিনা, কমিটি তা দেখবে।” বিমানবাবুর অভিযোগ, “স্ববিরোধিতার কারণেই এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।” তাঁর দাবি, ১৯৮৮ সালে সুবাস ঘিসিং-এর চুক্তির সময়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু অনেক সময় নিয়ে সব দিক খতিয়ে দেখে চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু এ বার তা করা হয়নি।
বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিন বন্ধ শিথিল করার কথা ঘোষণা করায় বুধবার থেকে ডুয়ার্সের মালবাজার, চালসা, নাগরাকাটা সহ সাতটি থানা এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “পরিস্থিতি বিবেচনা করে শুধু বানারহাট ও ওদলাবাড়ি এই দুটি থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রাখা হয়েছে।” মোর্চার যৌথ মঞ্চ বন্ধ প্রত্যাহার করলেও বুধবার অবশ্য দোকান বাজার খোলেননি বানারহাটের ব্যবসায়ীরা। |