পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রেলে ফের জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের ছায়া।
রাজ্যে আর কয়েক মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। ঠিক তার আগে মাওবাদীরা পশ্চিমবঙ্গে রেলের উপর বড় সড় হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রেল মন্ত্রক। রেল বোর্ডের কর্তাদের বক্তব্য, গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে রেলের উপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে মাওবাদীরা। ঠিক যেমনটি ঘটেছিল ২০১০ সালের মে মাসে। সে সময়ে রাজ্যের ৮১টি পুরসভা নির্বাচনের আগে নাশকতার শিকার হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। মারা যান প্রায় দেড়শোর উপরে যাত্রী।
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী বছরের গোড়ার দিকে। যদিও তৃণমূলের একাংশের পরিকল্পনা রয়েছে, চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুর মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন সেরে ফেলতে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ওই নির্বাচনের সময়ে মাওবাদী অধ্যুষিত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় রেলের সম্পত্তিতে হামলা চালাতে চাইছে মাওবাদীরা। এই তথ্য সামনে আসার পরেই গত ২০ এপ্রিল রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিবেক মিত্তল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহকে চিঠি দিয়ে গোটা বিষয়টি জানান। তাতে বলা হয়েছে, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে যে ভাবে হামলা চালানো হয়েছিল ঠিক সেই ধাঁচেই রাজ্যের তিন জেলায় হামলা চালানোর ছক কষছে মাওবাদীরা। ওই এলাকাগুলিতে ট্রেন ও রেললাইনে নজরদারি বাড়াতে অবিলম্বে রাজ্যের ওই তিন জেলাতে জন্য প্রায় আটশো জন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হোক।
মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে জঙ্গলমহল তথা রাজ্যে মাওবাদী হামলার ঘটনা কমলেও তারা যে তলেতলে নিজেদের সংগঠিত করে বড় হামলার পরিকল্পনা করছে এমনটাই আশঙ্কা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। গত সপ্তাহে দিল্লিতে মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন স্কুল, হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, মোবাইল টাওয়ার বা রেলযার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, সেগুলির উপর হামলার পরিকল্পনা করেছে মাওবাদীরা। ফলে রেল মন্ত্রকের শীর্ষ পর্যায় থেকে ওই চিঠি পাওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ওই অতিরিক্ত বাহিনী কী ভাবে রাজ্যকে দেওয়া সম্ভব হয় তাই এখন খতিয়ে দেখছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
জ্ঞানেশ্বরী হামলার পর থেকে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে রাতে পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছিল রেল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় মাস কয়েক আগে ফের ওই এলাকা দিয়ে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নতুন করে হামলার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনে ওই লাইনে ট্রেন চালানো হবে কি না তা নিয়ে ফের নতুন করে ভাবছে রেল মন্ত্রক। তবে মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “এখন যে ভাবে ট্রেন চলছে তা চলবে। কোনও নির্দিষ্ট হামলার বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য সামনে এলে তবেই রাতে ট্রেন বন্ধ করা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।” |