সম্পাদকীয় ২...
কোঁচার পত্তন
ন্ডন ও কলকাতায় পার্থক্য কী? লন্ডন-সহ ব্রিটেনের শহরগুলিতে খরচ কমাইবার জন্য রাস্তার বাতিদানগুলির প্রায় ১০ শতাংশের আলো গভীর রাত্রে নিভাইয়া রাখা হইতেছে। আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করিয়া যাহাতে বিদ্যুৎ খরচ কমানো যায়, তাহার প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হইতেছে। আর কলকাতায় সম্পূর্ণ অনাবশ্যক বাতিস্তম্ভ বসাইয়া বিদ্যুতের জন্য মাসে বাড়তি ছয় কোটি টাকা খরচ করিতেছে, অচিরেই সেই খরচ বাড়িয়া দাঁড়াইবে ১০ কোটি টাকা। কলকাতাকে লন্ডনে পরিণত করিবার স্বপ্ন সফল করিবার এই কি পথ? এমন ‘উলটা বুঝলি রাম’ নীতি দেখিয়া রাজ্যবাসী হাসিবে না কাঁদিবে? সৌন্দর্যায়ন দোষের নহে, শহরকে কেহ সুন্দর করিয়া সাজাইতে চাহিলে তাহার অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য। কিন্তু কিছু কথা ভুলিলে চলিবে না।
প্রথমত, সৌন্দর্যই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নহে। যেখানে রাজকোষ প্রায় শূন্য, উন্নয়নের প্রকল্পগুলির বরাদ্দে টান পড়িতেছে, সেখানে সৌন্দর্য প্রকল্পের জন্য মাসে ১০ কোটি টাকা খরচ কেবল অপচয় নহে, অপরাধ। দ্বিতীয়ত, সৌন্দর্যায়ন করিবার অর্থ সুন্দর বা মহার্ঘ বস্তু যোগ করা নহে। যাহা নিত্য ব্যবহার্য, তাহাতে নান্দনিকতার স্পর্শ যোগ সৌন্দর্যায়নের মূল কথা। লন্ডনের বেশ কিছু বাতিস্তম্ভ শিল্পের নিদর্শন, বৈদ্যুতিন আলো হইলেও তাহারা প্রাচীন গ্যাসের বাতির স্মরণ করাইয়া দেয়। শহরের ঐতিহ্যের স্মারক হিসাবে, এবং শিল্পসম্মত হইবার কারণে, তাহারা আকর্ষণীয়। কিন্তু কলিকাতার রাজপথে যে ২০ হাজার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বসিয়াছে, তাহার প্রায় সবগুলাই হ্যালোজেনের বাতিস্তম্ভের নীচে। যেখানে বাড়তি স্তম্ভের প্রয়োজন নাই সেখানে বেহিসাবি বাতিস্তম্ভ লাগাইয়া, এবং যেখানে একটি বাতি দিলেই চলিত সেখানে তিনটি বাতি দিয়া, সৌন্দর্যের সহিত সুবুদ্ধির সংঘাত তৈরি হইয়াছে। ওই বাড়তি আলো রাজ্যের অর্থসংকট এবং বিদ্যুৎসংকটের অশনিসংকেত হইয়া দাঁড়িয়াছে। যাহা মঙ্গলজনক নহে, তাহা সুন্দরও নহে। তাই ওই ত্রিফলা বাতিস্তম্ভগুলি সুদৃশ্য হইলেও, শহর সাজাইবার এই প্রকল্পকে ‘সৌন্দর্যায়ন’ বলিয়া ধরা চলে না। শহরকে আলোকিত করিবার ব্যবস্থা নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের একটি মূল বিষয়। কলকাতায় সেই স্বাচ্ছন্দ্যের নানাবিধ অভাব পরিলক্ষিত হইতেছে। প্রথমত, রাজপথগুলি আলোকিত হইলেও, পূর্ব কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতার অনেকগুলি অংশে এখনও আলোর ব্যবস্থা অতি সামান্য। পুরাতন টিউব লাইটে ছায়াচ্ছন্ন রাস্তাগুলি অপরাধীদেরও স্বর্গরাজ্য হইয়া উঠিয়াছে। অপর একটি সমস্যা, দিনের বেলাতেও রাস্তার বাতিগুলি জ্বলিতে থাকে। যে রাজ্যে বিদ্যুতের ঘাটতি গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থালিকে প্রায় পঙ্গু করিয়া রাখিয়াছে, কৃষিতে বড় ব্যাঘাত সৃষ্টি হইয়াছে, সেই রাজ্যের রাজধানীতে প্রখর রৌদ্রে রাস্তার বাতি জ্বলিবে, ইহা নীতিগত ভাবে মানিয়া লওয়া যায় না। এখন যে টাকা অনাবশ্যক বাতি লাগাইতে এবং তাহার বিল মেটাইতে খরচ হইতেছে, তাহার একটি অংশ খরচ করিলেই রাস্তার বাতিগুলিকে ‘স্বনিয়ন্ত্রিত’ করিবার প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যাইতে পারিত। রাজ্য সরকার যদি বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করিয়া নীতি নির্ণয় করিতেন, তাহা হইলে হয়তো সাশ্রয় এবং সৌন্দর্যায়নের মেলবন্ধন ঘটিতে পারিত। এখন সাপের ছুঁচো গিলিবার দশা ওই সকল বাতিস্তম্ভ উপড়াইয়া ফেলিলেও অপচয়ের অভিযোগ উঠিবে, রাখিয়া দিলে বৎসরে ১২০ কোটি টাকা গুনাগার দিতে হইবে। ভ্রান্ত নীতি কত ক্ষতি করিতে পারে, ওই ত্রিফলা বাতিগুলি তাহারই সাক্ষী হইয়া দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। এই অভিজ্ঞতা হইতে শিক্ষণীয় একটিই সীমিত অর্থের সদ্ব্যবহারের জন্য সব দিক ভাবিয়া অগ্রসর হওয়া উচিত, তাহা না হইলে বাহিরে কোঁচার পত্তনই সার হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.