ছত্তীসগঢ়ের সুকমার জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের অপহরণের পর কেটে গিয়েছে ১০০ ঘণ্টারও বেশি সময়। বুধবার বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়ে গিয়েছে মাওবাদীদের দেওয়া সময়সীমাও। তার পরেও জেলাশাসকের মুক্তি নিয়ে রাত পর্যন্ত অনিশ্চয়তা কাটেনি। অসমর্থিত সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যায় সুকমার গোমুন্ডার কাছে নাগারনে মাওবাদীরা ‘জন-আদালত’ বসিয়েছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে সেখানে মেননও আছেন। যদিও প্রশাসন বা মাওবাদীদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে কিছু জানা যায়নি। পাশাপাশি, মেননকে ওষুধ এবং পোশাক দিয়ে আদিবাসী মহাসভার সভাপতি তথা সিপিআই নেতা মণীশ কুঞ্জম রাত পর্যন্ত সুকমায় পৌঁছননি। ফলে, মেননের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও কোনও খবর পাওয়া যায়নি। মেননের খবর নিয়ে প্রথমেই কুঞ্জমের ফেরার কথা তাঁর স্ত্রী আশার কাছে।
টেলিফোনে আশা মেনন আনন্দবাজারকে বলেন, “আমি ভাল খবরের আশায় আছি।”
পাশাপাশি রায়পুরে চলছে মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ে তৎপরতা। ইতিমধ্যেই সেখানে এসে পৌঁছেছেন সরকারের তরফে দুই মধ্যস্থতাকারী নির্মলা বুচ এবং সুযোগ্য মিশ্র। নির্মলা বুচ বলেন, “অন্যদের সাহায্য নিয়ে মেননের মুক্তি নিশ্চিত করতে পারব বলে আমি আশাবাদী।” এ দিন রাতেই মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ-সহ এই ব্যাপারে গঠিত মন্ত্রিসভার সাব-কমিটি এবং প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। গভীর রাতে শেষ হওয়া এই বৈঠকে মাওবাদীদের কাছে সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানানো হবে বলে ঠিক হয়েছে।
আজ, বৃহস্পতিবার, রায়পুরে এসে পৌঁছচ্ছেন মাওবাদীদের প্রস্তাব করা দুই মধ্যস্থতাকারী বি ডি শর্মা এবং অধ্যাপক জি হরগোপাল। হরগোপালের নাম মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রস্তাব করেছিলেন মাওবাদী নেতৃত্ব।
অধ্যাপক হরগোপাল মাওবাদীদের হাতে ওড়িশার মালকানগিরির জেলাশাসক অপহরণ-কাণ্ডেও অন্যতম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিলেন।
বুধবার বি ডি শর্মা নয়াদিল্লিতে এই ব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠকও করেন। তবে সেখানে তিনি এই অপহরণ-কাণ্ডের কোনও নিন্দা বা বিরোধিতা করেননি। কেন? এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আনন্দবাজারকে ফোনে তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। আগে ওখানে যাই, দু’পক্ষের বক্তব্য শুনি, তার পরে এ বিষয়ে যা বলার বলব।” বস্তারের প্রাক্তন জেলাশাসক বি ডি শর্মার কথায়, “বস্তারের সঙ্গে আমার ৪০-৪৫ বছরের সম্পর্ক। এই বিষয়টি দ্রুত শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হলে আমি খুশি হব।” জি হরগোপালও জানিয়েছেন, দু’পক্ষের বক্তব্য সামনে রেখে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ বলেছেন, “আমাদের আশা জেলাশাসক তাড়াতাড়ি ফিরুন। এই ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীরা আলাপ-আলোচনা করবেন। ওঁরা (মাওবাদীরা) মধ্যস্থতাকারীদের নাম প্রস্তাব করেছেন, এটা ভাল।” মাওবাদীদের দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা পার হয়ে গেলে কী হবে? মাওবাদী দমন অভিযানের ভারপ্রাপ্ত ছত্তীসগঢ় রাজ্য পুলিশের এডিজি রাম নিবাস বুধবার বলেন, “কাজ না হলে চূড়ান্ত সমসসীমা বাড়া উচিত।” এর আগেও যত বার বিভিন্ন জায়গায় মাওবাদীদের হাতে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তত বারই দেখা গিয়েছে সরকার এবং মাওবাদীদু’পক্ষই ‘সময় কেনার’ কৌশল নিয়েছে। বুধবার দিনভর রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন শীর্ষ কর্তার মন্তব্যে এই ব্যাপারেও ‘সময় কেনার’ ইঙ্গিত মিলেছে। |