শেষ হয়েও হল না শেষ! আড়াই দশক পরে আরও এক বার বফর্স কেলেঙ্কারি মাথাচাড়া দিয়ে অস্বস্তিতে ফেলল কংগ্রেসকে। এ বার মুখ খুললেন, সুইডেনের প্রাক্তন পুলিশ প্রধান তথা বফর্স কেলেঙ্কারির মূল তদন্তকারী অফিসার স্টেন লিন্ডস্টমর্র্। একটি ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য, বফর্স সংস্থার থেকে কামান কেনার ক্ষেত্রে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি ঠিকই। কিন্তু এও ঠিক যে, অন্যতম অভিযুক্ত ওত্তাভিও কুত্রোচ্চিকে আড়াল করার প্রয়াসকেও রাজীব বাধা দেননি।
স্বাভাবিক ভাবেই দুর্নীতি প্রশ্নে কংগ্রেসকে আক্রমণের এই সুযোগ আজ হাতছাড়া করতে চায়নি বিজেপি। কুত্রোচ্চির সঙ্গে গাঁধী পরিবারের সম্পর্কের অভিযোগ সুবিদিত। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, “কুত্রোচ্চিকে আড়াল করার জন্য কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রমাণের অভাবের কারণ দেখিয়ে যে সব সিবিআই অফিসার কুত্রোচ্চিকে ক্লিনচিট দিয়েছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত। ইউপিএ জমানায় রহস্যজনক ভাবে কুত্রোচ্চির অ্যাকাউন্টে লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছিল। তা কার নির্দেশে হয়েছিল তা-ও তদন্ত করতে হবে।
বফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে যখনই নাড়াচাড়া হয়, তখন স্বাভাবিক ভাবেই গাঁধী পরিবারের দিকে তর্জনী তোলা বিজেপি-র পক্ষে সহজ হয়ে যায়। তাই নয়া বিতর্ককে কেন্দ্র করে যতটা সম্ভব রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে বিজেপি। এমনকী সংসদে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার সুযোগে তাঁরা বিষয়টি তুলবেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। শুধু বফর্স কাণ্ড নয়, ইতালি থেকে ভিভিআইপি চপার কেনার ব্যাপারে সম্প্রতি ফের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই প্রশ্নেও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে রবিশঙ্কর আজ বলেন, এই ধরনের কেনাবেচায় বারবার ইতালির নাম আসে কেন? বফর্স কাণ্ড নিয়ে স্টেনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নতুন করে তদন্তের দাবি করেন বাম নেতারাও। এ দিকে, সিবিআই আজ জানিয়ে দিয়েছে, বফর্স কেস আর নতুন করে খোলা হবে না।
আবার স্টেনের সাক্ষাৎকারকে অস্ত্র করেই আজ আত্মপক্ষ সমর্থনে সচেষ্ট হন কংগ্রেস তথা সরকারের শীর্ষ নেতারা। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, “প্রাক্তন সুইডিশ পুলিশ কর্তার বক্তব্যেই স্পষ্ট যে রাজীব গাঁধী নিরপরাধ ছিলেন। অথচ বফর্স কাণ্ড নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে। তাঁর পরিবারকে অপদস্থ করা হয়েছে। সুতরাং স্টেনের বক্তব্যের পর এ বার দেশের সামনে তাঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।” কিন্তু কুত্রোচ্চিকে আড়াল করার প্রসঙ্গে যে অভিযোগ তুলেছেন স্টেন, তা নিয়ে কংগ্রেস বা সরকারের কী বক্তব্য? রাজীব প্রশ্নে যে সাক্ষাৎকারকে ঢাল করছিলেন সলমন, এ বার তাকেই নস্যাৎ করে সলমন বলেন, “বফর্স কাণ্ডে আদালত মামলা বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি শেষ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং আচমকা কেউ কোনও মন্তব্য করবেন আর সেজন্য বার বার মামলা শুরু করতে হবে, এর কোনও অর্থ হয় না। বরং সুপ্রিম কোর্ট বফর্স মামলা নিয়ে সর্বশেষ রায়ে কী বলেছিল, বিজেপি তা আর একবার পড়ে দেখুক।” কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ অলভি বলেন, কুত্রোচ্চিকে প্রত্যপর্ণের জন্য ইতালি, মালয়েশিয়া-সহ তিনটি দেশে মামলা করেছিল সিবিআই। কিন্তু কোনও দেশই প্রত্যর্পণ করতে রাজি হয়নি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “কেন্দ্রে ৬ বছর এনডিএ সরকার ছিল। তার আগে বফর্স নিয়ে শোরগোল তোলার মূল হোতা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের সরকার ছিল। কিন্তু তাঁরা কেন কুত্রোচ্চিকে প্রত্যর্পণে সফল হননি?”
|
ভিভিআইপি ব্যক্তিদের পরিবহণে হেলিকপ্টার কেনা নিয়ে আর্থিক অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিল সরকার। ২০১০ সালে ভারতীয় বায়ুসেনা এক ইতালীয় সংস্থার থেকে ১২টি হেলিকপ্টার কেনে। অভিযোগ ইতালীয় সংস্থাটি এর জন্য ৩৫০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যাণ্টনি আজ জানান, এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজেও বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রোমের ভারতীয় দূতাবাসকে এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল বলেও জানান তিনি। ইতালীয় প্রশাসনের তরফেও এ নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। |