বফর্সে জড়িত ছিলেন না অমিতাভ, স্বীকারমূল তদন্তকারীর
ফেলে আসা ক্ষতির হিসেব আর মেলাবেন না বচ্চন
পঁচিশ বছর ধরে বদনামের ভাগী হয়েছেন তিনি। এখন অভিযোগকারী, তদন্তকারীদের মুখ থেকেই শুনছেন, তিনি নির্দোষ! বফর্স কেলেঙ্কারিতে আদৌ জড়িত ছিলেন না। তিনি, অমিতাভ হরিবংশরাই বচ্চন।
কিন্তু ২৫ বছরে কি ক্ষতি কম হল? কখনও পূরণ হবে সেটা? বুধবার সকাল থেকেই তাঁর ব্লগে লেখা ছিল প্রশ্নটা। সন্ধ্যায় সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে নিজেই দিয়ে দিলেন উত্তরটা।
“যো জীবন বিত গয়ে উসকা ক্যায়া কম্পেনসেশন!”
স্টেন লিন্ডস্টর্ম।
মঙ্গলবারই একটি সাক্ষাৎকারে সুইডেনের প্রাক্তন পুলিশ প্রধান তথা বফর্স কেলেঙ্কারির মূল তদন্তকারী অফিসার স্টেন লিন্ডস্টর্ম জানান, ওই বিতর্কিত অস্ত্রচুক্তির সঙ্গে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন বা তাঁর পরিবার জড়িত ছিলেন না। কিছু ভারতীয় তদন্তকারী অফিসার সুইডেন গিয়ে ‘ইচ্ছাকৃত’ বফর্স কেলেঙ্কারির সঙ্গে বচ্চন পরিবারের যোগসূত্র তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। এমনকী, ওই ভারতীয় অফিসারেরাই একটি সুইডিশ দৈনিকে বফর্স-কাণ্ড নিয়ে বচ্চন পরিবারের বিরুদ্ধে খবর ছাপান।
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই বলে দাবি করেন লিন্ডস্টর্ম। তবে সব জেনেশুনেও ইতালীয় ব্যবসায়ী ওত্তাভিও কুত্রোচ্চিকে ‘বাঁচিয়েছিলেন’ রাজীব, এমনই অভিযোগ প্রাক্তন সুইডিশ পুলিশকর্তার। প্রসঙ্গত, লিন্ডস্টর্ম স্বীকার করে নিয়েছেন যে তিনিই ২৫ বছর আগের সেই ব্যক্তি, যিনি বফর্স কামান চুক্তি সংক্রান্ত ৩৫০টি নথি তুলে দেন এক ভারতীয় সাংবাদিকের হাতে।
লিন্ডস্টর্মের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার প্রকাশের পরেই ব্লগে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিলেন ৬৯ বছরের অমিতাভ। বফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে যখন দেশ জুড়ে রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে, সেই ১৯৮৭ সালে অমিতাভ ছিলেন ইলাহাবাদের কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বফর্স-কাণ্ডে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠার কিছু দিন পরে শুধু সাংসদ পদ নয়, রাজনীতিই ছেড়ে দিয়েছিলেন অমিতাভ। তবে এ দিন ‘দুর্বিষহ’ ২৫ বছরের স্মৃতিচারণায় বসে রাজনীতি ছাড়ার জন্য বফর্সকে দায়ী করেননি তিনি। জানিয়েছেন, রাজনীতি বুঝতেন না বলে ছেড়ে দিয়েছেন। ওই ঘটনার জন্যেই গাঁধী পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে এমন দাবিও মানতে চাননি।
সাংবাদিকদের সামনে অমিতাভ।
কিন্তু বার বার লিখেছেন, কতটা যন্ত্রণা আর অপমান সহ্য করে ২৫টা বছরের প্রতিটা ঘণ্টা, প্রতিটা দিন, প্রতিটা মাস কাটিয়েছে বচ্চন পরিবার।
অমিতাভ ব্লগে লিখেছেন, “কেউ বুঝবেন না, ধারণাও করতে পারবেন না। এরকম একটা জঘন্য অভিযোগ কী করে আমি বয়ে বেড়িয়েছি, সেটা হয়তো আমিই জানি। জীবনের প্রচুর খ্যাতি, সম্মানের পরেও একটা কালো দাগ সঙ্গে লেগে ছিল। হয়তো সেটা কোনও দিনও মুছে যাবে না। তবু আজ ভাল লাগছে। যারা মিথ্যা প্রচার করেছিল, তাদের জয়টা সাময়িক ছিল। মিথ্যে বলেছে, যতদূর পেরেছে ষড়যন্ত্র করেছে। শেষ অবধি জিততে পারল না। ক্ষমতা, জায়গা হারাল। সব থেকে বড় কথা, নৈতিক হার হল।” জয়া বচ্চনও জানান, সত্যিটা সবার সামনে আসায় তাঁরা খুশি। তবে তাঁর আক্ষেপ, “ওঁর বিরুদ্ধে এত দিন যা যা লেখা হয়েছে সেটা তো আর ফেরানো যাবে না। সেই সবের কী হবে?”
মুম্বইয়ে সাংবাদিকদের সামনেও বারবার বেরিয়ে এসেছে বফর্স-ক্ষতের চিহ্নই। অমিতাভ বলেন, “ওই সময়টা কঠিন ছিল। রোজ সাংবাদিকরা বফর্স নিয়ে নানা প্রশ্ন করতেন, অনেক কিছু লিখতেন। আমি কিছু বলতাম না। এক দিন বাবা ডেকে জানতে চাইলেন, ‘তুমি কোনও অন্যায় করোনি তো?’ বুঝলাম, বাবার মনেও চার দিকের এত চিৎকার প্রভাব ফেলছে। তার পরেই সিদ্ধান্ত নিই, এ বার মুখ খুলতে হবে। বিদেশে গিয়ে আমরা একটি সুইডিশ সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে মিথ্যে খবর ছাপানোর মামলা করি। সেই মামলা জিতেও যাই। আর আজ তো মামলার মূল তদন্তকারীই বলছেন, অভিযুক্তের তালিকায় আমার নাম ছিল না। পরে জোর করে নাম ঢোকানো হয়েছে। তবে এ কথা তিনি ২৫ বছর আগেই জানাতে পারতেন।”
ক্ষতির কথা বললেন। ক্ষতিপূরণ চান না? প্রশ্ন তুললেন সাংবাদিক। অমিতাভ একটু অন্যমনস্ক। ফ্ল্যাশের ঝলকানি থেকে কিছু ক্ষণ মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন। উত্তরটা জানাই ছিল। যে জীবনটা চলেই গেল তার আর ক্ষতিপূরণ!

ছবি: পিটিআই


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.