|
|
|
|
দীর্ঘসূত্রী ‘ট্র্যাডিশন’ |
সময়সীমা শেষের মুখে, কাজ এগোয়নি প্রকল্পের |
অশোক সেনগুপ্ত |
বাম আমলে বিভিন্ন কাজে যে গয়ংগচ্ছতার অভিযোগ উঠে এসেছে বরাবর, সেই ট্র্যাডিশন থেকে বেরোতে পারল না মমতা বন্দ্যোপাধায়ের ‘পরিবর্তন’-এর সরকারও। তাই যে প্রকল্পের কাজ বাম আমলের শেষ ছ’মাসে এগোয়নি বলে অভিযোগ, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার এগারো মাস পরেও তার কাজ এগোলো ‘যৎসামান্য’ই। অথচ প্রকল্পের সময়সীমা প্রায় শেষের মুখে। কেন্দ্র ইতিমধ্যে মঞ্জুর করেছে ২২ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। এই পরিস্থিতিতে ই এম বাইপাসে ‘বাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (বিআরটিএস)’ প্রকল্পের কাজের গতি দ্রুত করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২২ মাস আগে, ২০১০ সালের ১৬ জুন জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে বিআরটিএস-এর অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ওই বছরেরই ২৭ ডিসেম্বর কাজের বরাত দেওয়া হয়। দেড় বছর মেয়াদের, মোট ২৫২.৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের দেওয়ার কথা ৩৫ শতাংশ করে। কেএমডিএ দিচ্ছে বাকি ৩০ শতাংশ। প্রকল্পের মূল অংশে উল্টোডাঙা থেকে গড়িয়া পর্যন্ত বাইপাসের ১৫.৫ কিলোমিটার অংশে ‘আট লেনের’ রাস্তা হচ্ছে, প্রতি লেনের প্রস্থ সাড়ে সাত মিটার। এ ছাড়া, মানোন্নয়ন হবে বর্তমান বাইপাসের। মূল অংশের কাজ তিন ভাগে বিভক্ত প্রথমত, বর্তমান বাইপাসের দু’পাশের নিচু জমি ভরাট করা। দ্বিতীয়ত, ভরাট করা অংশে রাস্তা তৈরি। তৃতীয়ত, বাইপাসের বিভিন্ন সেতু ও কালভার্ট ‘আট লেনের’ মতো প্রসারিত করা। দু’টি ভাগের কাজ দুই নামী ঠিকাদারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। প্রথম কাজটিই শেষ হয়নি। বাকি কাজ দূরের কথা।
সমস্যাটা কোথায়? প্রকল্প রূপায়ণের মূল দায়িত্ব কেএমডিএ-র হাতে। সংস্থার চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “বাইপাসের দু’পাশের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে ছিল। ওদের আমরা সরাসরি তুলতে পারি না। দখলদার তোলার বিষয়টি সরকারের নীতির প্রশ্ন। মোটামুটি দখলদার তোলা গিয়েছে।” গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে-পরে বেশ কয়েক মাস কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দের গতি মন্থর হয়ে যাওয়াতেও কাজ মার খেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আগামী জুনের মধ্যে বাইপাসের নিচু অংশ ভরাটের কাজ হয়ে যাবে বলেও তিনি দাবি করেন।
এর পরেও থেকে যাচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্ন। প্রকল্প-পরিকল্পনায় (ডিপিআর) চিংড়িহাটা, রুবির মোড় এবং কালিকাপুর এই তিন জায়গায় উড়ালপুল তৈরির কথা ছিল। বাইপাসের পাঁচটি কালভার্ট সম্প্রসারণের কথাও আছে। এর মধ্যে দু’টি কালভার্টের গা-ঘেঁষে বসানো জলের বড় পাইপ সরানোটাও যে জটিল কাজ, তা মেনে নিয়েছেন কেএমডিএ কর্তারা। বাইপাসের দু’পাশে বিদ্যুতের বড় ট্রান্সমিশন টাওয়ার না সরালে প্রকল্পের কাজ মার খাবে। এ নিয়ে কেএমডিএ-র সঙ্গে কয়েক দফা কথা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেড (এসইডিসিএল)-এর কর্তাদের। এই কাজটাও যথেষ্ট জটিল এবং সময়সাপেক্ষ বলে স্বীকার করেছেন কেএমডিএ কর্তারা। এর পাশাপাশি নিউ গড়িয়া থেকে রাজারহাট মেট্রো প্রকল্পের জন্য চিংড়িহাটার উড়ালপুল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কেএমডিএ-র সিইও স্বীকার করেন, বাইপাস চওড়া করার কাজ এক-আধ জায়গায় আটকে যাচ্ছে আইনি জটিলতায়।
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায়ও স্বীকার করেন, এতকাল বিআরটিএস-এর কাজ অতি মন্থর গতিতে হয়েছে। তিনি বলেন, “বাইপাসে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টাও জটিল। বিআরটিএস-এর মেয়াদ আরও দু’বছর বাড়ানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী, উভয়েই উন্নয়নের কাজে এখন বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমি আশাবাদী।” আর নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমরা দ্রুততার সঙ্গে বকেয়া কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি।” |
|
|
|
|
|