|
|
|
|
সিবিআইকে ভর্ৎসনা করল হাইকোর্ট |
বড় তদন্ত তিমিরে, অথচ মামলা ‘সাজিয়ে’ হেনস্থা |
অরুণোদয় ভট্টাচার্য |
পরপর দু’দিন সিবিআইকে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার এক রেলকর্মীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার মামলা সিবিআই-এর ‘সাজানো’ বলে মন্তব্য করে বিচারপতি কানোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া তা খারিজ করে দিয়েছেন। অভিযুক্ত কল্যাণ রায়কে বেকসুর খালাসও করেছে আদালত। নেতাই-কাণ্ডে চার্জশিট পেশ করার সময়ে সিবিআইয়ের ‘ত্রুটি’ নিয়ে হাইকোর্ট ঠিক এক দিন আগেই সরব হয়েছিল। পাশাপাশি, ওই মামলার চার্জ গঠনেও ভ্রান্তি লক্ষ করেছেন বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া। মঙ্গলবার নিম্ন আদালতকে নতুন করে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ দিন যে মামলাটিতে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে, সেটিতে অভিযুক্ত রেলকর্মীর বিরুদ্ধে ১৪ বছর আগে শিয়ালদহ স্টেশনে ১০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ছিল। বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া বলেন, “জনগণের হাজার-হাজার টাকা রোজ নয়ছয় হচ্ছে। তখন ফাঁদ পেতে কাউকে ধরার জন্য সিবিআই-এর তৎপরতা দেখা যায় না। সিবিআই অনেক ক্ষেত্রেই কিচ্ছু করে না। গুরুত্বপূর্ণ তদন্তে তেমন অগ্রগতি দেখাই যায় না। কিন্তু এক জন সাধারণ রেলকর্মীর বিরুদ্ধে ১০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার সাজানো মামলায় ১৪ বছর ধরে তাঁকে অত্যাচার করা হচ্ছে।”
বিচারপতির এই মন্তব্যের কোনও জবাব দিতে পারেনি সিবিআই। অভিযুক্ত রেলকর্মী কল্যাণ রায়কে বেকসুর খালাস দিয়ে বিচারপতি বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে আবেদনকারীকে হেনস্থা করাই সিবিআই-এর উদ্দেশ্য ছিল।”
১৪ বছর আগে কল্যাণবাবু শিয়ালদহ স্টেশনে কমার্শিয়াল সুপারিন্টেনডেন্টের পদে কাজ করতেন। তাঁর আইনজীবী অভ্র
মুখোপাধ্যায় এ দিন দাবি করেন, “রেলের ভিজিল্যান্স অফিসার প্রতি মাসে কল্যাণবাবুর কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দাবি করেছিলেন। কল্যাণবাবু তা দিতে রাজি হননি বলেই তাঁকে ফাঁদে ফেলা হয়।”
অভ্রবাবু বলেন, “১৯৯৮ সালের ১২ নভেম্বর কল্যাণবাবু শিয়ালদহ স্টেশনে ডিউটি করছিলেন। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সিবিআই স্টেশন চত্বর ঘিরে ফেলে। দু’জন অফিসার কল্যাণবাবুর পকেটে হাত ঢুকিয়ে দু’টি ৫০ টাকার নোট বার করে বলে, তিনি ঘুষ নিয়েছেন।” সিবিআই জানায়, জনৈক ছেদিলাল শাহের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ফাঁদ পেতে তারা কল্যাণবাবুকে হাতেনাতে ধরেছে। ওই অভিযোগকারী তাদের জানিয়েছিলেন, কল্যাণবাবু তাঁর কাছ থেকে দু’টি ৫০ টাকার নোট ঘুষ নিয়েছেন।
আলিপুর আদালত কল্যাণবাবুকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল। তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আপিল মামলা করেন। ওই
মামলাতেই হাইকোর্ট এ দিন কল্যাণবাবুকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।
সিবিআই-এর তদন্ত এবং সাক্ষ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, অভিযোগকারী ছেদিলাল আদালতে কল্যাণবাবুকে চিনতে পারেননি। ছেদিলাল বলেছিলেন, তিনি কোনও ঘুষ দেননি এবং কল্যাণবাবুকে কখনও দেখেননি। সিবিআই অবশ্য আরও দু’জন সাক্ষীকে হাজির করে। তাঁরা কল্যাণবাবুর পকেট থেকে টাকা পাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু অভ্রবাবু হাইকোর্টকে বোঝান, ওই একই সাক্ষীরা সিবিআই-এর বিভিন্ন মামলায় আগে সাক্ষী দিয়েছে। বিচারপতি এ দিন বলেন, “ওই সাক্ষীদের বক্তব্যের কোনও মূল্য নেই। ভর সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশন যখন জনারণ্য, তখন সিবিআই এক জনও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হাজির করাতে পারল না কেন?”
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, বড় বড় দুর্নীতির মামলায় সিবিআই-এর সাফল্য নেই। এ রাজ্যে বর্তমানে সিবিআই প্রায় ২০টি মামলার তদন্ত করছে। তার মধ্যে নন্দীগ্রাম, নেতাই-কাণ্ড, রিজওয়ানুরের মৃত্যুর মতো মামলার তদন্তের এখনও নিষ্পত্তি ঘটেনি। |
|
|
|
|
|