|
|
|
|
তিন দিন পরে ধৃত স্বামী |
অভিযোগ না নিয়ে নিগৃহীতাকেই কুমন্তব্য পুলিশের |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
‘কাহানি’র সঙ্গে মিলল না বাস্তব।
হারিয়ে যাওয়া স্বামীর খোঁজে কলকাতায় ছুটে আসা বিদ্যা বালানের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন কালীঘাট থানার অফিসারেরা। কিন্তু সেটা রুপোলি পর্দাতেই।
বাস্তবে শ্বশুরবাড়ির লোক জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ জানাতে ছুটে যাওয়া এক মহিলার এফআইআর নিতেই রাজি হল না কালীঘাট থানা। উল্টে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে এবং থানারই এক অফিসার তাঁর প্রতি কুমন্তব্য করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা।
সংবাদমাধ্যম মারফত খবরটি অবশেষে পৌঁছেছে লালবাজারে। তখন নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পরে লিখিত অভিযোগ নিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই মহিলার স্বামী বাদল দাসকে (যে ক্ষেত্রবিশেষে মনোজিৎ রায় নামেও পরিচিত)। মহিলার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় অভিযুক্ত অতিরিক্ত ওসি এবং এক সাব-ইনস্পেক্টরের ভূমিকারও তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
ঘটনাটি কী? কালীঘাট থানা এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলার কথায়, দীর্ঘ দিন ধরেই স্বামী বাদল দাসের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক অশান্তি চলছিল। সেই জন্য তিনি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে কাছেই বাপের বাড়িতে থাকতেন। ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সোমবার সন্ধ্যায় ভাসুর মেঘনাথ দাস তাঁকে ফোন করে শ্বশুরবাড়িতে ডাকেন বলে ওই মহিলার দাবি। তিনি অভিযোগ করেছেন, ওই দিন শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পরেই ভাসুর আচমকা তাঁকে মারতে শুরু করে। সঙ্গে যোগ দেয় স্বামী বাদল, জা মিঠু, ভাসুরঝি মিতালি এবং শাশুড়ি অনুভাদেবী। এক সময় তাঁর মাথায় লাঠি দিয়েও আঘাত করে মেঘনাথ। ওই সময়ই শাশুড়ি-জা-জা’য়ের মেয়ে ওই মহিলার হার, দুল টেনে ছিনিয়ে নেয়। তাঁর মোবাইল আর ব্যাগও কেড়ে নেওয়া হয়।
অভিযোগকারিণীর বক্তব্য, বেশ কিছুক্ষণ এলোপাথাড়ি মারধরের পরে মেঘনাথ একটি বালিশ দিয়ে তাঁর মুখ চেপে ধরে। সেই সময় তাঁর স্বামী ও অন্যরা তাঁর হাত-পা চেপে ধরে রাখে। মহিলা বলেন, “প্রায় আধ ঘণ্টা এমন চলার পরে আমি নিস্তেজ হয়ে পড়ার ভান করি। মরে গিয়েছি ভেবে ওরা তখন ছেড়ে দেয়। সেই সুযোগে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি।”
মারধরের ফলে মহিলার নাক-মুখ ফেটে রক্ত ঝরছিল। গোপনাঙ্গ থেকেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। শাড়ি ছিঁড়ে গিয়েছিল। রাত ১১টার সময় তিনি ওই অবস্থাতেই কালীঘাট থানায় পৌঁছন। মহিলার অভিযোগ, ডিউটি অফিসারের কাছে পুরো বিষয়টি জানিয়ে সাহায্য চেয়ে তিনি কাকুতিমিনতি করতে থাকেন। কিন্তু পুলিশকর্মীরা তাঁর অভিযোগ না শুনে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। থানার বাইরে রাত ২টো পর্যন্ত তাঁকে বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ। মহিলা বলেন, “আমার রক্তাক্ত চেহারা দেখেও ওঁরা কিছুই পাত্তা দিচ্ছিলেন না। আমি ওঁদের বারবার বলছিলাম, ‘আর পারছি না। দয়া করে অভিযোগটা নিন। ওরা আমার মোবাইলটাও নিয়ে নিয়েছে। আমার বাপের বাড়িতে একটা খবর দিন।”
এর আগে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডেও অভিযোগ উঠেছিল, থানায় কর্তব্যরত দুই সাব-ইনস্পেক্টর অভিযোগকারিণীর প্রতি কটূক্তি করেছিলেন। পরে সেই দুই পুলিশ-কর্মীকে সাসপেন্ড করে পুলিশ। কালীঘাট থানাতেও ফের একই ঘটনা ঘটল বলে অভিযোগ। মহিলার কথায়, পুলিশ তাঁর অভিযোগ তো নেয়ইনি। এমনকী তাঁর বাড়িতেও কোনও খবর পাঠায়নি। রাত ২টো নাগাদ তাঁর মা কোনও ভাবে বিষয়টি জানতে পেরে কালীঘাট থানায় আসেন। তাঁকে নিয়ে বাড়িতে চলে যান। এর পরে সেই দিনই ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁরা ফের থানায় আসেন অভিযোগ করতে। কিন্তু তখনও পুলিশ-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার চালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকালে পিজি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান ওই মহিলা। তাঁর দাবি, ওই দিন দুপুরে ফের থানায় গিয়ে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে জানানোর কথা বলার পরে থানা জেনারেল ডায়েরি নেয়।
ওই মহিলার দাবি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাবাকে নিয়ে তিনি আবার থানায় গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, অতিরিক্ত ওসি কল্যাণ দত্তের সঙ্গে তাঁর স্বামী বাদল বসে কথা বলছেন। মহিলার অভিযোগ, “বাবাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে আমার সঙ্গে আলাদা কথা বলার জন্য আমাকে নিজের ঘরে ডাকেন অতিরিক্ত ওসি। এর পরে তিনি ‘তোমার তো এখন এক জন বয়ফ্রেন্ড দরকার’-জাতীয় কুমন্তব্য করতে থাকেন। ওঁর কথা শুনে আমি বাক্রুদ্ধ হয়ে যাই।” মহিলার দাবি, অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে বাবাকে ডাকার কথা বলতেই, ওই অফিসার তাঁকে ‘মা’ সম্বোধন করে বাবাকে ভিতরে ডাকতে বলেন। এর পরে তাঁরা থানা থেকে চলে আসেন।
বুধবার বিকেলে সংবাদমাধ্যম মারফত গোটা ঘটনাটা লালবাজারের পদস্থ কর্তাদের কানে পৌঁছয়। নিজে কালীঘাট থানায় ছুটে যান ডিসি (সাউথ) দেবেন্দ্র প্রকাশ সিংহ। এর পরে ওই মহিলার বয়ান অনুযায়ী ৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। গ্রেফতার করা হয় মহিলার স্বামীকে। বাকিদের খোঁজ এখনও মেলেনি। |
|
|
|
|
|