|
|
|
|
দু’টি রানওয়েতেই গর্ত, আধঘণ্টা বন্ধ রইল উড়ান |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
প্রধান রানওয়ে দিয়ে বাগডোগরার দিকে উড়ে যাওয়ার সময়ে সেখানে একটি ‘চিড়’ দেখে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এ টি সি)-কে সতর্ক করেছিলেন এক পাইলট। খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে রানওয়েতে পৌঁছে চক্ষু চড়কগাছ অফিসারদের। চিড় নয়, রানওয়ের উত্তর দিকে রীতিমতো একটি গর্ত ‘আবিষ্কার’ করেন তাঁরা। আয়তনে যা পাঁচ ফুট লম্বা, দেড় ফুট চওড়া ও ছয় ইঞ্চি গভীর। ফলে সেখানে কোনও ভাবে বিমান নামলে চরম দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
এর আগেও এ ভাবে প্রথম রানওয়েতে গর্ত দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তখন দ্বিতীয় রানওয়ে ছিল খোলা। এ বার সেখানেও বিপত্তি। সেই রানওয়েতেও গর্ত হওয়ায় আগে থেকেই বন্ধ সেটি। অথচ তখনই কলকাতায় নামতে যাচ্ছিল হায়দরাবাদ থেকে আসা একটি উড়ান। মুখ ঘুরিয়ে ফের উড়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয় বিমানের চালককে। তার পিছনে আরও কয়েকটি বিমান তখন নামার অপেক্ষায়। উপায়ান্তর না পেয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩৫ মিনিটের জন্য দু’টি রানওয়ে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয় কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। আর সে সময়ে অবতরণের অপেক্ষায় শহরের আকাশে চক্কর কাটতে হয় ১২টি বিমানকে। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, তখন কোনও বিমানের যাত্রী আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে বা বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে জরুরি অবতরণের সুযোগও ছিল না।
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, প্রধান রানওয়ে বন্ধ করে দিলে ভরসা থাকে দ্বিতীয় রানওয়ে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানেও প্রায় আট ফুট লম্বা এবং চার ফুট চওড়া গর্ত হয়ে গিয়েছে। সবে শুরু হয়েছে সারাইয়ের কাজ। বাধ্য হয়েই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে এক সঙ্গে বন্ধ রাখতে হল দু’টি রানওয়ে। বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে যা এক বিরলতম ঘটনা। |
|
১২টা ৫ মিনিটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় রানওয়ে। নোটিস জারি করে দুপুর ১২ টা ৪১ মিনিটে বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রধান রানওয়ে-ও। তার পরে ১টা ১৬মিনিট পর্যন্ত কোনও বিমানকে নামতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এই সময়ে ‘বাধ্য হয়েই’ কিছু বিমানকে কলকাতা ছেড়ে উড়ে যাওয়ার অনুমতি দেন কর্তৃপক্ষ। প্রধান রানওয়ের যেখানে গর্ত হয়েছে, তার উল্টো দিকে দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উড়ে যায় বেশ কয়েকটি বিমান।
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সারাই হওয়ার কথা থাকলেও তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে দ্বিতীয় রানওয়েটি আগে চালু করা হয়। ততক্ষণে লুফৎহান্সার একটি উড়ান কলকাতায় না নামতে পেরে চলে গিয়েছে ঢাকায়। দিল্লি থেকে আসা আর একটি বিমান আকাশে চক্কর কাটে প্রায় ৪৫ মিনিট। দ্বিতীয় রানওয়ে সারাইয়ের পরে শুরু হয় প্রধান রানওয়ে সারানোর কাজ। সন্ধ্যা সওয়া ছ’টায় খুলে দেওয়া হয় সেটিও।
কেন এমন হল? বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “বৃষ্টিতে রানওয়ের বিটুমিনের বাঁধন আলগা হয়ে গেলে এ রকম হতে পারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৃষ্টির পরেই বাঁধন আলগা হয়ে গিয়ে থাকবে। বুধবার সকালে কোনও গাড়ি বা বিমানের চাকার তলায় পড়ে চাঙড় উঠে গিয়েছে।”
কিন্তু বিতর্ক দেখা দিয়েছে অন্য কিছু বিষয়েও। অফিসারদের একাংশের মতে, ২০০৫ সালে যে সংস্থাকে দিয়ে প্রধান রানওয়ের উপরের আস্তরণ তৈরি হয়েছিল, সেই সংস্থা তার আগে কখনওই কোনও রানওয়ের কাজ করেনি। সম্প্রতি লখনউ বিমানবন্দরে কিছু কাজ করেছে দিল্লির সেই সংস্থা। ঘুষের অভিযোগে সেই সংস্থা এবং অফিসারদের একাংশের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করেছে সিবিআই। সেই সংস্থাকে দিয়েই কেন রানওয়ের উপরে আস্তরণ দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করাচ্ছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।
আরও অভিযোগ, মঙ্গলবার বৃষ্টি থামার পরে রাতেই দ্বিতীয় রানওয়েটি সারাই করা যেত। তা হলে বুধবার দুপুরে সমস্যায় পড়তে হত না। কিন্তু, তা করা হয়নি। এ ছাড়াও, বুধবার সকাল দশটায় কাজ শুরু করতে গিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। অভিযোগ, সময় মতো কাজ শুরুর অনুমতি দেয়নি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এক সময়ে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, দ্বিতীয় রানওয়ে খোলা রেখেই সারাইয়ের কাজ করা সম্ভব। এই প্রস্তাব শুনে দ্বিতীয় রানওয়ের যেখানে গর্ত হয়েছিল, সেই এলাকার মানচিত্র চেয়ে পাঠান এটিসি অফিসাররা। কিন্তু সময় মতো তা দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। পরে যখন জানানো হয়, রানওয়ে বন্ধ রেখেই কাজ করতে হবে, ততক্ষণে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা বিপি শর্মা এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “কলকাতার মতো ব্যস্ত বিমানবন্দরের রানওয়ের উপরে ৬-৭ বছর অন্তর নতুন করে আস্তরণ লাগাতে হয়। ২০০৫-এ শেষ বার এখানে আস্তরণ দেওয়া হয়েছিল। এই বর্ষার পরেই ফের তা বসানোর কথা ছিল। এই অবস্থায় রানওয়ের অবস্থা একটু খারাপ হওয়ার কথা।” |
|
|
|
|
|