|
|
|
|
প্রণবের আশ্বাসে বড় পতন এড়াল সেনসেক্স |
রেটিং কমার সম্ভাবনায় দোলাচল শেয়ার বাজারে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ভারতের অর্থনীতি নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স-এর বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করার আঁচ এসে লাগল শেয়ার বাজারে। ঢিমেতালে চলা আর্থিক সংস্কার, ক্রমশ কমতে থাকা বৃদ্ধির হার, শিল্পে লগ্নি তলানিতে এসে ঠেকা, সাধারণ ভাবে এই ত্র্যহস্পর্শেই ভবিষ্যতে ভারতের রেটিং কমার আশঙ্কা রয়েছে বলে বুধবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্তর্জাতিক এই মূল্যায়ন সংস্থা। পাশাপাশি, আর এক রেটিং সংস্থা মুডিজ অ্যানালিটিক্স-ও ভারতের অর্থনীতির পিছিয়ে পড়ার জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছে। এই ঘোষণায় হু হু করে পড়তে শুরু করে সেনসেক্স। তবে ‘ত্রাণকর্তা’র ভূমিকায় অবতীর্ণ অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস এবং আতঙ্ক না-ছড়ানোর বার্তা কিছুটা টেনে তোলে সূচককে। ফলে দিনের শেষে বড় পতন এড়িয়ে মুম্বই বাজারের সূচক খুইয়েছে মাত্র ৫৬ পয়েন্ট।
এই মূল্যায়ন সংস্থা ভারতের আর্থিক অবস্থাকে আর স্থিতিশীল বলে মানতে নারাজ। তারা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির হাল সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী বদল করে জানিয়েছে, স্থিতিশীল নয়, বরং নেতিবাচক দিকেই গড়াচ্ছে অর্থনীতি। দু’বছরের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না-হলে ভারতের রেটিং এখনকার ‘বিবিবি+’ থেকে নেমে হতে পারে ‘বিবিবি-’। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেনসেক্সের পারা দ্রুত নামতে থাকে নীচের দিকে। বাজার খোলার পর তা ১৭,২৪৯.৬১ পয়েন্ট ছুঁলেও বেলা ১টা নাগাদই তা ১৮৮ পয়েন্টের মতো পড়ে নেমে যায় ১৭,০১৯.২৪ পয়েন্টে। দিনের শেষে তা বন্ধ হয় ১৭,১৫১.২৯ পয়েন্টে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্টি-ও ৬২ পয়েন্ট পড়ে দাঁড়ায় ৫১৬০.৬৫ পয়েন্টে। পরে অবশ্য বাজার বন্ধের সময়ে তা উঠে যায় ৫২০২ পয়েন্টে।
এ দিন শিল্প ও শেয়ার বাজার মহলে এই আশঙ্কাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত রেটিং কমলে বৈদেশিক বাণিজ্যিক ঋণে সুদ আরও বাড়বে। আরও কমবে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি। তার কারণ একই ভাবে ১১টি ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাকে নিয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছে এস অ্যান্ড পি। যার মধ্যে রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক এবং ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক। এ ছাড়া রয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স কোম্পানি (আইডিএফসি)। তিনটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মূল্যায়নের উপরও নজর রাখতে বলেছে এস অ্যান্ড পি। এগুলি হল: ইনফোসিস, টিসিএস, উইপ্রো।
এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও প্রণববাবুর মন্তব্যে ধীরে ধীরে ক্রেতা ফিরতে থাকে বাজারে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক সংস্কারের প্রতি দায়বদ্ধ। তাই আমি সতর্ক, কিন্তু আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। কারণ, আমি নিশ্চিত, আর্থিক বৃদ্ধি যদিও বা ৭ শতাংশ না-ছাড়ায়, তা ৭ শতাংশের আশেপাশেই থাকবে। রাজকোষ ঘাটতি বাগে আনাও সম্ভব হবে। ফলে তা জাতীয় আয়ের ৫.১ শতাংশের মধ্যেই বেঁধে রাখা যাবে।’’ প্রণববাবু ইঙ্গিত দেন, প্রধানত এই দু’টি কারণেই এস অ্যান্ড পি হুণশিয়ারি দিয়েছে। সময় মতো সতর্ক করাকে তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তবে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স এবং মুডিজ ভারতের রেটিং কমার আশঙ্কা প্রকাশ করায় ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে মনে করছেন শেয়ার বাজার ও ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞরা। ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, “এই অবস্থায় বিদেশিরা আপাতত ভারতে লগ্নি করতে দু’বার ভাববে। তা ছাড়া বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে হলে খরচ বাড়বে ভারতীয় সংস্থাগুলির। কারণ, বিদেশ থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে হলে তাদের এখন বেশি সুদ গুনতে হবে।”
এই পরিস্থিতিতে টাকার দাম কমার সম্ভাবনাও বেড়ে গেল বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। যার ফলে বাড়তে পারে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি। কারণ, টাকার দাম কমলে বাড়বে আমদানির খরচ। এই সব কারণে অন্তত অদূর ভবিষ্যতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ফের সুদ কমানোর হাস্তায় হাঁটার সম্ভাবনা প্রায় মুছে গেল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই। এই আশঙ্কাও এ দিন সূচকের পতনের অন্যতম কারণ। অবশ্য তাঁদের মতে, টাকার জোগান বাড়াতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নগদ জমার অনুপাত কমাতে পারে। বুধবার অবশ্য টাকার দাম বেড়েছে ১৪ পয়সা। দিনের শেষে ১ ডলারের দাম দাড়ায় ৫২.৫৪/৫৫ টাকা।
রেটিং কমানো ঠেকাতে আর্থিক সংস্কারের পথে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্রুত হাঁটা উচিত বলে মনে করছে বিভিন্ন বণিকসভা। অ্যাসোচ্যামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, আর্থিক সংস্কারের ব্যাপারে সরকারের নীতি আরও স্বচ্ছ হওয়া জরুরি। ওই বণিকসভার সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত বলেন, “আর্থিক বৃদ্ধির মুখ ঘোরানোর জন্য তেল, সার এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে ভর্তুকির পরিমাণ কমানো বা বিলোপ করার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া উচিত।” কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে একই ভাবে সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অবস্থার পরিবর্তন কররার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ টানার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও পণ্য-পরিষেবা কর আইন এবং প্রত্যক্ষ কর বিধি দ্রুত চালু করা জরুরি।” |
|
|
|
|
|