|
|
|
|
কাঠগড়ায় রাজনীতি |
মার্কিন মূল্যায়নেও অর্থনীতি বেহাল দিল্লির |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ভারতের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল্লিতে কাঁপুনি ধরিয়ে দিল দু’টি মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থা। স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এসঅ্যান্ডপি) সংস্থাটি ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ‘স্থিতিশীল’ থেকে এক ধাক্কায় নামিয়ে আনল ‘নেতিবাচক’-এ! আর ‘মুডিজ অ্যানালিটিকস’ নামে আর একটি সংস্থা ভারতের অর্থনীতির ‘দুরবস্থা’র জন্য মনমোহন সিংহ, সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাল।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু আন্তর্জাতিক মঞ্চে কবুল করেন, জোট রাজনীতির জটে থমকে রয়েছে আর্থিক সংস্কার। সেই বিতর্ক ধামাচাপা দিতে সরকার সক্রিয় হলেও ক’দিনের মধ্যে এসঅ্যান্ডপি ও মুডিজের রিপোর্ট ফের বড় ধাক্কা দিল।
দু’টি আন্তর্জাতিক সংস্থার এই মূল্যায়ন নিয়ে কংগ্রেস কোনও মন্তব্য না করলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য মুখ অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ, এ বারের অভিযোগের মাত্রা যথেষ্টই গুরুতর। শুধু পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, মনমোহন সিংহের ‘প্রশাসনিক অক্ষমতা’ এবং ‘সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা’র জন্য সরাসরি গাঁধী পরিবারের ব্যর্থতাকে বিঁধেছে। আর স্বাভাবিক ভাবেই একে হাতিয়ার করে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি। এবং তারা মাঠে নামিয়েছে সংস্কারপন্থী মুখ অরুণ জেটলিকে।
কিন্তু ভারত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি কেন বদলাল এসঅ্যান্ডপি? তাদের যুক্তি, ভারতে বিনিয়োগের গতি শ্লথ হয়েছে। কমেছে আর্থিক বৃদ্ধির হারও। মূলত বিশ্ব বাজারে চড়া তেলের দাম এবং ডলারের সাপেক্ষে পড়তে থাকা টাকার দামের কারণে গত আট বছরের সর্বোচ্চ অঙ্কে পৌঁছেছে লেনদেন খাতে ঘাটতি। ঘাড়ে চেপে থাকা বিপুল ভর্তুকির কারণে রাজকোষ ঘাটতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের স্রোত বাড়লে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অনেকটাই সহজ হত। কিন্তু সেখানেও বাধা হচ্ছে থমকে যাওয়া আর্থিক সংস্কার। ফলে, সব মিলিয়ে আগামী দিনে দেশের অর্থনীতির হাল আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা। তাই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলের এই সিদ্ধান্ত। ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’-এ নামিয়ে এনেছে তারা। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, দ্রুত সংশোধনী ব্যবস্থা না-নিলে ভারতের ক্রেডিট রেটিং কমাবে তারা।
রাজনৈতিক বাধাই যে ভারতের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে মুডিজ অ্যানালিটিকসের বয়ানও। তাদের মতে, বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও ভারতীয় অর্থনীতি অনেক কম হারে বৃদ্ধির পথে হাঁটছে। ‘নিষ্ফলা রাজনীতি আর সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ততা’ই যে এর মূল কারণ। সংস্থার দাবি, মনমোহন সিংহ এখন স্পষ্টতই রাজনীতির চাপে ‘ক্লান্ত’। পরিস্থিতি শোধরানোর সুযোগ রাহুল ও সনিয়া গাঁধী ‘নষ্ট’ করেছেন বলে সংস্থার অর্থনীতিবিদ গ্লেন লেভাইনের মত। শেষে রেটিং সত্যিই কমলে, প্রশ্ন উঠবে ভারতে লগ্নির পরিবেশ নিয়ে। বিদেশ থেকে কককককণ নিয়ে তহবিল সংগ্রহেরও খরচ বাড়বে ভারতীয় সংস্থাগুলির। কারণ, রেটিং কমায় বেশি সুদ দিতে হতে পারে তাদের।
পরিস্থিতি সামলাতে আজ সকালেই দু’দফায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি উদ্বিগ্ন, কিন্তু ভয় পাচ্ছি না। আমার বিশ্বাস, আর্থিক বিকাশের হার ৭ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে। আর্থিক ঘাটতিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”
ক্রেডিট রেটিং |
কোনও দেশ বা সংস্থাকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, ক্রেডিট রেটিং তারই মূল্যায়ন। যার রেটিং যত ভাল, তাকে ঋণ দিলে তা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রেটিং কমলে সাধারণত বেশি সুদ গুনতে হয়। এ বার ভারতের রেটিং স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করে দেওয়া হল। |
|
|
|
|
|
|