|
|
|
|
নালিশ চাপা আছে জঞ্জালেই |
আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ ওয়ার্ড ১৭ ও ১৮।
সুব্রত সীট |
মুখ ঢেকেছে আবর্জনায়।
এ বিষয়ে দুই ওয়ার্ডে ফারাক সামান্যই। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়...।
মজার ব্যাপার, দুর্গাপুর পুরসভার নিকাশি ও কঠিন বর্জ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদের নিজের ওয়ার্ড ১৭ নম্বর। অথচ তাঁর নিজের এলাকাতেই দুই পরিষেবার হাল যা-তা!
দেশবন্ধু নগর, মসজিদ মহল্লা, বাজার, উত্তরপল্লি, সেন্ট্রাল স্টোর বস্তি, অন্নপূর্ণা নগর, নেতাজি মার্কেট, নেতাজি পার্ক, বৈষ্ণবপাড়া ও ধুনুরা ১-এর কিছু অংশ নিয়ে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর তারাশঙ্কর সুকুল মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য, নিকাশি ও কঠিন বর্জ্য)। অথচ মসজিদ মহল্লা ঘুরে দেখা যায়, কিছু অংশে রাস্তা কাঁচা। নর্দমাও তা-ই। আবর্জনা ফেলার জন্য পুরসভার আঁস্তাকুড় আছে। কিন্তু তা সব দিন সাফাই হয় না। আবর্জনা উপচে পড়ে রাস্তায়। কুকুরে-গরুতে টানাটানি করে। বাতাসে নোংরা প্লাস্টিক উড়ে গিয়ে পড়ে আশপাশের বাড়িতে।
তৃণমূল নেতা নিতাই সরকার বলেন, “এই ওয়ার্ডের অনেক নর্দমাই পাকা করা হয়নি। আঁস্তাকুড় নেই পর্যাপ্ত। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদের ওয়ার্ডেই এই পরিস্থিতি।” উত্তরপল্লির ইমতিয়াজ হোসেন আবার অভিযোগ করেন, “রাস্তায় আলো ঠিক মতো জ্বলে না। পানীয় জল সারা দিনে গড়ে আধঘন্টা আসে। তা-ও ধারা সরু।” মসজিদ মহল্লার মহম্মদ আলির অভিযোগ, “অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুল লাগোয়া ক্লাবঘরে অসামাজিক কাজকর্ম চলে। কাউন্সিলরকে বলেও ফল হয়নি।”
তারাশঙ্করবাবুও মেনে নেন, সব নর্দমা পাকা করা যায়নি। নিজেই বলেন, “নেতাজি পার্ক, সেন্ট্রাল স্টোর বস্তিতে নর্দমা কাঁচা। তবে পাইপ দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করে বর্জ্য জল নিকাশির ব্যবস্থা হয়েছে।” একই সঙ্গেই তিনি দাবি করেন, সবোজার এলাকায় ৯০০ মিটার এবং অন্যত্র ১১০০ মিটার কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে। রাস্তায় ৭৫টি আলো লাগানো হয়েছে। সেন্ট্রাল স্টোর বস্তিতে পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে কুয়োর কাজ চলছে। বাকি ওয়ার্ডে জলের সমস্যা তেমন নেই। শেষমেশ প্রত্যয়ী ঘোষণা, “আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল।” |
জমে আবর্জনা |
১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। |
১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। |
|
তাঁরই দলের কাউন্সিলর, ১৮ নম্বরের অরুণ সরকার আবার গোড়ায় পরিষ্কার করে দেন, “এলাকা ছোট হওয়ায় পুরসভার বরাদ্দ কম আসে। তা সত্ত্বেও উন্নয়নমূলক কাজ বহু হয়েছে।” এটা ঠিকই যে বেনাচিতির গুরুদ্বার রোড, বিবেকানন্দ পল্লি, শালবাগান, উত্তর রামকৃষ্ণ পল্লি ও কিষাণ হাট নিয়ে এই ওয়ার্ড তুলনায় ছোট। কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘কাজ’ চোখে পড়ছে না সকলের। বরং এলাকার মানুষের অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ।
গুরুদ্বার রোডে কাউন্সিলরের বাড়ির প্রায় সামনেই জমে জঞ্জালের স্তুপ। নিশানহাটে ফাঁকা জায়গায় ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গা থেকে বর্জ্য এনে জমা করা হয়। কয়েকদিন পর পর পুরসভার গাড়ি তা নিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা কোয়েল মল্লিকের ক্ষোভ, “কুকুর-গরু আবর্জনা ঘেঁটে খাবার বের করে। আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। নোংরা ঢুকে যায় পাশের বাড়িগুলিতেও। মশা, মাছি, পোকার উপদ্রবও বাড়ছে।” তবে অরুণবাবুর সাফাই, “এটা সাময়িক সমস্যা। পুরসভার গাড়ির সংখ্যা কম থাকাতেই নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার হয় না।”
কাউন্সিলর জানান, বিএসইউপি প্রকল্পে ৫০৪টি বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে বস্তিবাসীদের। কিন্তু কিষাণ হাটে বিএসইউপি বাড়ি বিলিতে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের মতে, বাইরের অনেকে বাড়ি পেয়েছেন। স্থানীয়রা বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন। এলাকার বাদল ডোমের খেদ, “আমি বাড়ি পাইনি। অথচ পাড়ার ঝন্টু রুইদাস, তাঁর দুই ছেলে প্রবীর ও অমৃত প্রত্যেকে আলাদা বাড়ি পেয়েছে।”
পুরসভার কাজ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেসও। দলের ওয়ার্ড সভাপতি প্রকাশ কুণ্ডু বলেন, “বিপিএল তালিকায় প্রকৃত দুঃস্থদের অনেকেই ঠাঁই পাননি। বিএসইউপি প্রকল্পে বাড়ি বিলিতে অনিয়ম হয়েছে। শালবাগান-ট্রাঙ্করোড রাস্তা আগে চওড়া ছিল। কিন্তু সংস্কারের নাম করে তা সরু করে দেওয়া হয়েছে। ফলে অসুবিধায় পড়ছেন বাসিন্দারা।” বস্তুত অনেকেরই অভিযোগ, নতুন রাস্তা হয়নি। মেরামতি করা হয়েছে শুধু। শালবাগানের বিদ্যুৎ মণ্ডলেরা সেই দলেই পড়েন।
অরুণবাবু অবশ্য এ হেন সব অভিযোগ আদৌ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “রাস্তার কাজ হয়েছে। লাগানো হয়েছে আলো। পানীয় জলের সমস্যা মিটে গিয়েছে অনেকটাই।”
ওয়ার্ডবাসী যথেষ্ট খুশি কি? এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? |
নজরে নগর |
ওয়ার্ড ১৭ |
ওয়ার্ড ১৮ |
• বহু নর্দমা এখনও কাঁচা
• কিছু রাস্তা পাকা হয়নি
• রাস্তায় আলোর
সংখ্যা অপর্যাপ্ত |
• জঞ্জাল সাফাই নিয়মিত হয় না
• বস্তিবাসীদের অনেকেই বিএসইউপি
প্রকল্পের বাড়ি পাননি
• পর্যাপ্ত পানীয় জল মেলে না |
কাজের কোনও শেষ নেই।
কাজেই অভিযোগ থাকবেই।
তারাশঙ্কর সুকুল, সিপিএম কাউন্সিলর |
যেমন সুযোগ আছে,
তেমন কাজ করেছি।
অরুণ সরকার, সিপিএম কাউন্সিলর |
মেয়র পারিষদের এলাকার
রাস্তাতেই জমে জঞ্জাল।
নিতাই সরকার, তৃণমূল নেতা |
বাড়ি বিলি থেকে বিপিএল
তালিকা, সবেতেই অনিয়ম।
বিদ্যুৎ মণ্ডল, ব্লক তৃণমূল নেতা |
|
ছবি: বিকাশ মশান। |
|
|
|
|
|