|
|
|
|
ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা শিয়রে, হোটেলে ‘ঠাঁই নাই’ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষার আগে দুর্গাপুরে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে নাকাল হচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা।
আগামী রবিবার দেশ জুড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা (এআইইইই) পরীক্ষা হতে চলেছে। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশনের (সিবিএসএই) নেওয়া এই পরীক্ষার মেধা তালিকার ভিত্তিতে আইআইটি, এনআইটি-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কলেজে বি ই, বি টেক, বি আর্ক এবং বি প্ল্যানিং পড়ার সুযোগ মেলে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্যও সরকারি বা বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির জন্য এই প্রবেশিকা পরীক্ষাকে মান্যতা দেয়।
এ বার রাজ্যে মোট দু’টি শহর, শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। শিলিগুড়িতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হাজার পাঁচেক। কিন্তু দুর্গাপুরে সংখ্যাটা প্রায় ১৯ হাজার। কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ থেকে পরীক্ষার্থীরা যাচ্ছেন সেখানে। সঙ্গে অভিভাবকেরা তো আছেনই। অথচ শহরের হোটেল মিলিয়ে হাজার তিনেকের বেশি ঘর নই। সব হোটেলে ইতিমধ্যেই ‘ঠাঁই নাই’ লেখা নোটিস।
এ বারই ‘অনলাইন’ (ইন্টারনেটের মাধ্যমে) পরীক্ষা চালু হয়েছে। কলকাতা-সহ দেশের মোট ২২টি কেন্দ্রে আগামী ৭ থেকে ২৬ মে-র মধ্যে এ ভাবে পরীক্ষা দেওয়া যাবে। চিরাচরিত উপায়ে কাগজে-কলমে পরীক্ষা (অফলাইন) দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে ৬৫টি কেন্দ্র। দুর্গাপুর ও শিলিগুড়ি তারই অন্যতম। কিন্তু নতুন চালু হওয়ায় বহু পরীক্ষার্থীই অনলাইন ব্যবস্থায় আস্থা রাখতে পারেননি। আর তাতেই গোল বেধেছে। এআইইইই-র দুর্গাপুরের কো-অর্ডিনেটর পাপিয়া মুখোপাধ্যায়ের মতে, অধিকাংশ পরীক্ষার্থী প্রচলিত অফলাইন পরীক্ষা বেছে নেওয়াতেই দক্ষিণবঙ্গের একমাত্র কেন্দ্র দুর্গাপুরে ব্যাপক চাপ পড়ছে। তাঁর কথায়, “গত বছর দুর্গাপুরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৭০০। এ বার তা প্রায় ১৯ হাজার।”
শহরের ২৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছতে হবে পরীক্ষার্থীদের। দূরের পরীক্ষার্থীদের আগের রাতে দুর্গাপুর শহরে এসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। কলকাতা থেকে গিয়ে সময়ে পৌঁছতে হলেও বেরোতে হবে রাত থাকতে। তখন আবার বাস নেই।
কিন্তু আগামী শনি ও রবিবারের জন্য গোটা দুর্গাপুরে কোনও হোটেল, এমনকী ছোট-বড় লজেও ঘর ফাঁকা নেই। অন্তত এক মাস আগে থেকে সব ‘বুকড’। সিটি সেন্টারের একটি হোটেলের কর্ণধার কবি দত্ত বলেন, “অবস্থাটা বুঝছি, কিন্তু আমরা অসহায়।” এই সুযোগে ফাঁকা ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে মোটা টাকা কামিয়েও নিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু তা-ও তো প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়।
এক পরীক্ষার্থীকে নিয়ে শনিবার বিকেলে দুর্গাপুরে পৌঁছনোর কথা যাদবপুরের সুমিত চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু ঘর পাননি। দমদম থেকে ছেলে নিয়ে আসবেন শিবানন্দ দাস। তাঁর কথায়, “আমি স্টেশনে রাত কাটিয়ে দেব। কিন্তু ছেলের জন্য একটা ব্যবস্থা না হলে ও কী পরীক্ষা দেবে!” দিন পনেরো চেষ্টার পরে ছেলে দেবাঙ্কুর ও তার চার সহপাঠীর জন্য একটি বাতানুকূল ঘর জোগাড় করতে পেরে নিজেকে ‘ধন্য’ মনে করছেন মানিকতলার সঞ্চিতা গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতার কোনও কোনও স্কুলের প্রধানও জানিয়েছেন, পরীক্ষায় ‘অবজার্ভার’ করতে চাওয়া হলেও ঘর না পাওয়ায় তাঁরা সেই দায়িত্ব নিতে
পারেননি। বুধবার একটি স্কুলের প্রধান বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়েছি। কিন্তু গিয়ে কোথায় থাকব, জানি না।”
এ দিন বারবার চেষ্টা করেও সিবিএসএই-র কোনও আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষা রানি বলেন, “ওই দিন যথেষ্ট সংখ্যক বাস চালানোর জন্য দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।” রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র আশ্বাস দেন, “২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কলকাতা-দুর্গাপুর রুটে দৈনিক অতিরিক্ত ৫০টি বাস চালানো হবে।” অন্য এলাকার পরীক্ষার্থীরা কী ভাবে যাতায়াত করবেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। |
|
|
|
|
|