তিন বছরে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও মহানন্দা নদীর জল পরিশোধন করে পুরাতন মালদহে সরবরাহ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হয়নি। ফিল্টার বেড থেকে ইনটেক পয়েন্টের কাজও শুরু হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষ আরও এক বছর সময় চাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শহরের বাসিন্দারা। এত টাকা তাহলে কোথায় ব্যয় হল সেই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। পুরাতন মালদহ পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান কংগ্রেসের বিভূতি ঘোষের অভিযোগ, যাঁদের জল প্রকল্পের কাজে নামার মতো অভিজ্ঞতাই নেই সেই সংস্থাকে কাজ দেওয়ার জন্যই পুরাতন মালদহ পুরসভার প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “এর জন্য বতর্মান বাম পুরবোর্ডই দায়ী।” প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর হাতে তুলে দিলে এতদিনে পুরাতন মালদহ পুরসভার বাসিন্দাদের বাড়িতে পরিশোধিত জল পৌঁছে যেত বলেও দাবি করেছেন তিনি। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “পুরসভা ও এমইডি যৌথভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের জল প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করেছে। আসল কাজ না করে কেন পাইপ কেনা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।” পুরাতন মালদহ পুরভার চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ শুকুল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এমইডিকে পুরাতন মালদহের জল প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব দিয়েছিল। অথচ এমইডির মেকানিক্যাল ও ইলেক্টট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনও পরিকাঠামোই ছিল না। সে জন্য পুরাতন মালদহে কাজ থমকে গিয়েছিল। পুর চেয়ারম্যান বলেন, “ইতিমধ্যে ২১-২২ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। বতর্মান পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এমইডিতে মেকানিক্যাল ও ইলেক্টট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করে দ্রুত পুরাতন মালদহের জল প্রকল্পের কাজ শেষ করার অনুরোধ করেছি। আশা করছি এই বছরের মধ্যেই পুরসভার ১৮ টি ওয়ার্ডে পরিশোধিত জল পৌঁছে দিতে পারব।” এমইডির নিবার্হী বাস্তুকার সন্দীপ কুমারের বক্তব্য, প্রকল্পের কাজ কেন দেরি হচ্ছে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। পুরাতন মালদহ পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে জওহরলাল নেহরু জাতীয় আরবান রিনিউয়াল মিশন থেকে পুরাতন মালদহে জল প্রকল্পের জন্য ৩৫ কোটি টাকা অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০৯ সালে শিলান্যাস করেন তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। এক বছরের মধ্যেই জল প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। শিলান্যাসের পর লোলাবাগের কাছে মহানন্দা নদীতে ইনটেক পয়েন্টের কাজ শুরু হয়। পাইপ পোঁতার কাজ শুরু হয়। পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে ৫৫ কিমি পাইপ বসিয়ে জল সরবরাহ করার কথা। চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, ইতিমধ্যে ৪০ কিলোমিটার এলাকায় পাইপ বসানোর কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। সিংহভাগ এলাকায় পাইপ পোঁতার কাজ শেষ হলে হবে কী? কিভাবে কি পাম্প কোথায় লাগাতে হবে, ফিল্টার বেড কোথায় কীভাবে তৈরি করতে হবে, তা ঠিক করা যাদের কাজ সেই মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এমইডিতে নেই। পরিশোধিত জল প্রকল্পের সিভিলের কাজ শেষ হওয়ার পরেও স্রেফ মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের সেট আপ না থাকার জন্য বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ কেনাই হয়নি। যে সব র্যন্ত্র কেনা হয়েছে তা দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকার ফলে নষ্ট হতে বসেছে। |