নকল পরচায় কৃষি-ঋণ, চক্র সক্রিয়
মির ভুয়ো দলিল দেখিয়ে কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দক্ষিণ দিনাজপুরে সরকারি ঋণ আদায়ের দুষ্টচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সপ্তাহে জেলার কুমারগঞ্জের মোহনায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের কর্তারা এক ব্যক্তির নথিপত্র নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তার দফতরে পাঠান। সহ কৃষি অধিকর্তা নৃপেনবাবুর কাগজপত্র ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতরে পরীক্ষার জন্য পাঠান। দেখা যায়, ওই আবেদনপত্রে উল্লিখিত জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর ঠিক নয়। জমির পরিমাণও ভুয়ো। সন্দেহ বাড়ায় কুমারগঞ্জ এলাকায় কিসান ক্রেডিট কার্ডে ঋণ চেয়ে আবেদন করা ২০০ জনের নথিপত্র পরীক্ষা করতে নামে ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতর। নথি পরীক্ষা করতে গিয়ে নেমে চোখ কপালে ওঠে। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ২০০ জনের মধ্যে ১৮০ জনেরই দাখিল করা জমির পরচা ভুয়ো বলে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণ মিলেছে। ওই ব্লকের প্রায় তিন হাজার চাষি ইতিমধ্যে কিসান ক্রেডিট কার্ডের ঋণের জন্য আবেদন করেছেন। কৃষকের নামে জমির নকল পরচা বানিয়ে ঋণ নেওয়ার জালিয়াতি চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠার অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “গুরুতর ব্যাপার। কৃষি আধিকারিককে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।” ইতিমধ্যে কুমারগঞ্জের কৃষি দফতরের সহ অধিকর্তা পার্থ মুখোপাধ্যায় এলাকার ২৪ জনের বিরুদ্ধে কিসান ক্রেডিট কার্ড পেতে জাল খতিয়ান দাখিলের অভিযোগ জানিয়েছেন জেলা কৃষি দফতরে উপ-অধিকর্তার দফতরে। বালুরঘাটের উপকৃষি অধিকর্তা লক্ষ্মীকান্ত মান্ডি বলেন, “ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের কাছে লিখিত রিপোর্ট পেলে অভিযুক্তদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে।” ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের বালুরঘাটের ম্যানেজার অতুলচন্দ্র ডেকা বলেন, “ব্লক কৃষি দফতর থেকে পাঠানো জেরক্স নথিপত্রের উপরই উপভোক্তাদের কিসান ক্রেডিট কার্ড বিলি করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। মোহনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির জমির খাজনার রসিদ চেয়ে না পাওয়ায় সন্দেহ বাড়ে। ভুয়ো পরচা দেখিয়ে নেওয়া ঋণ পরে উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।” জেলার লিড ব্যাঙ্ক অফিসার তন্ময় দাস মনে করেন, অবিলম্বে প্রশাসনিক স্তরে কড়া পদক্ষেপ করা না-হলে প্রকৃত চাষিরা বঞ্চিত হবেন। ঋণ কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচিও মার খাবে বলে মনে করেন তিনি। সরকারি নির্দেশে চলতি মার্চের মধ্যে এ জেলায় ১ লক্ষ ৬৪ হাজার কৃষককে কিসান ক্রেডিট কার্ডের আওতায় এনে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ দিতে হবে। এতকাল কৃষিঋণের ক্ষেত্রে চাষিরা সরাসরি ব্যাঙ্কে যেতেন। ব্যাঙ্ক তাদের প্রয়োজনীয় কাগজ দেখে সন্তুষ্ট হলে ঋণ মিলত। এবার নিয়ম বদলেছে। চাষিরা সরাসরি ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তার অফিসে গিয়ে জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর, জমির পরিমাণের প্রমাণ, ভোটের পরিচয়পত্র এবং ফটো দিয়ে আবেদন করবেন। সহ কৃষি অধিকর্তা আসল কাগজ দেখে প্রত্যায়িত নকল কপিতে অ্যাটেস্টেট করে সংশিষ্ট ব্যাঙ্কে পাঠাবেন। ব্যাঙ্ক তা দেখে কিসান ক্রেডিট কার্ড করে চাষিকে প্রয়োজন মতো ঋণ দেবেন। কিন্তু ব্লকের সহ কৃষি আধিকারিকের দফতরে জমা পড়া আবেদনপত্র সঠিক ভাবে দেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সুযোগটাই নিচ্ছে দুষ্টচক্র। কুমারগঞ্জের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ মুখোপাধ্যায় জানান, কিসান ক্রেডিট কার্ডের জন্য কৃষককে সমস্ত প্রমাণ-সহ আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্লকের কৃষি সহ অধিকর্তার দফতরে। আধিকারিক আসল কাগজপত্র খতিয়ে দেখে কপি অ্যাটেস্টেট করে ব্যাঙ্কে পাঠাবেন।’ ব্যাঙ্ক সংশ্লিষ্ট চাষিকে কিসান ক্রেডিট কার্ড করে ঋণ অনুমোদন করবেন। এক একর জমির জন্য আমন ধান চাষে আবেদনকারী চাষি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ পাবেন। লঙ্কা চাষে এক একরের জন্য কুড়ি হাজার টাকা, কলা চাষে সমপরিমাণ জমির জন্য বাইশ হাজার টাকা চাষিরা ঋণ পাবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.