আমরি হাসপাতালের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ায় বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পেল কৃষ্ণনগরের জেলা সদর হাসপাতাল। সেই সঙ্গে রক্ষা পেল অসুস্থ নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র।
মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের দোতলায় অসুস্থ শিশুদের জন্য ওই বিশেষ বিভাগটিতে একটি ওয়ার্মার যন্ত্রে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন ধরে যায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই কর্তব্যরত চিকিৎসক সঞ্জীব কর্মকার এসে দ্রুত চিকিৎসাধীন শিশুদের ওয়ার্ডের বাইরে বের করে দেন। তারপর অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার ব্যবহার করে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রসূতীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চলে আসেন কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি। পুরো বিভাগটি ঘুরে দেখেন তিনি। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “একটি ওয়ার্মারে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তবে বড়সড় অগ্নিকাণ্ড ঘটার আগেই দ্রুততার সঙ্গে আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়েছিলাম। এখানে আগে তেমন অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা ছিল না। দু’একটি সিলিন্ডার থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। ছিলেন না প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীও। আমরি কাণ্ডের পরে আমরা এই হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা উন্নত করেছি। কর্মীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই কারণেই এত দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে।” |
এখান থেকেই বেরোচ্ছিল ধোঁয়া। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য |
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের নীচের তলায় ভর্তি ছিলেন ৫০ জন প্রসূতী ও ৩০ জন সদ্যোজাত। দোতলায় ছিলেন ১৪১ জন প্রসূতী ও সমসংখ্যক নবজাতক। এদের মধ্যে ১০ জন অসুস্থ শিশু বিশেষ বিভাগে ভর্তি ছিলেন। ঘটনার সময় ওই ওয়ার্ডে শিশুদের পাশে ছিলেন ভালুকার বাসিন্দা মানু বিবি। তিনি বলেন, “আচমকা ৪ নম্বর বেডের পাশের যন্ত্রটা থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই যন্ত্রে আগুন জ্বলে ওঠে। সময় নষ্ট না করে নার্সকে জানাই। এর পরেই অসুস্থ শিশুদের দ্রুত বাইরে বের করে দেওয়া হয়। অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার ব্যবহার করে আগুনও নেভানো হয়।” ওই ওয়ার্ডের পাশেই ছিল অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থ শিশুদের ঘর। সামনে বারান্দার মেঝেতে সার দিয়ে শুয়ে মা ও নবজাতকেরা। তার পাশের হলঘরেও মা ও শিশু ভর্তি। ছোটাছুটি শুরু না করলেও হাসপাতাল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল তখন।
হাসপাতালের কর্মীরা মনে করছেন বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে নজরে না এল বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। তাঁদের অভিযোগ, অসুস্থ নবজাতকদের ওই ওয়ার্ড এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সহজে বাতাস বেরোতে বা ঢুকতে না পারে। ফলে আর কিছুক্ষণ আগুন জ্বললে ধোঁয়ায় আরও অসুস্থ হয়ে পড়ত বাচ্চারা। একবার আগুন ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হত। কারণ ওই বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রের সামনে বারান্দায় লাগানো আছে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার। এ ছাড়াও হাসপাতালে ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তাও একটি। ফলে এতজন শিশু ও মাকে বের করা কঠিন হয়ে পড়ত।
কৃষ্ণনগর শহর দমকলের ওসি হরলাল সরকার বলেন, “হাসপাতালে আগুন নেভানোর মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আগেও ছিল না, এখনও নেই। এটাই দুশ্চিন্তার বিষয়।” স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “আগুন লাগার কারণ এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। যাতে ভবিষ্যতে আর এমন না ঘটে, তাই আমরা আগুন লাগার আসল কারণ তদন্ত করে খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি। যাতে আমরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিতে পারি।” তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে একটি ওয়ার্মারে সমস্যা হওয়ায় আগুন লাগে। তবে প্রত্যেকটি শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরানো সম্ভব হয়েছে।” চিকিৎসকদের তৎপরতায় রক্ষা পেল জেলা সদর হাসপাতাল। তবে হাসপাতাল যে এখনও নিরাপদ নয় মঙ্গলবারের ঘটনা আবারও তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। |