ইতিউতি ছড়িয়ে আবর্জনা। চিকিৎসার বর্জ্য। রোগীদের শৌচাগারগুলি সাফাই হয় না দীর্ঘদিন। সেখান থেকে ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাকে রুমাল চেপে দাঁড়িয়ে থাকা দায় এমনই পরিস্থিতি। অথচ ওই পুঁতিগন্ধময় পরিবেশে চিকিৎসাধীন রোগীরা শুয়ে আছেন। উত্তর দিনাজপুর জেলার চাকুলিয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছবি।
দু’মাস আগে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্য ৪ শয্যার ‘সিক বেবি’ ওয়ার্ডের উদ্বোধন হলেও পরিকাঠামোর অভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রতিদিন অসুস্থ শিশুদের ইসলামপুর ও বিহারের কিশানগঞ্জ হাসপাতালে রেফার করতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা। ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল পরিস্থিতির কথা অস্বীকার করেননি উত্তর দিনাজপুরের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রতাপচন্দ্র বাগ। তিনি বলেন, “চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী ও যন্ত্রপাতির অভাবের জন্য ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঠিক মতো পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। পরিস্থিতির কথা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। নিয়মিত সাফাই এবং পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকুলিয়া ব্লকের প্রায় ৩ লক্ষাধিক বাসিন্দা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। সেখানে চিকিৎসক আছেন ৫ জন। নার্স, স্বাস্থ্য ও সাফাই কর্মী মিলিয়ে রয়েছেন ১১ জন। পুরুষ ওয়ার্ড ১০ শয্যার। রয়েছে ১১ শয্যার মহিলা ওয়ার্ড। এছাড়াও অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা আছে। যদিও রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ব্যবস্থা থেকেও লাভ হচ্ছে না। ওয়ার্ডগুলি নিয়মিত সাফাই হয় না। দুর্গন্ধে ভরা পরিবেশে রোগীদের দিন কাটছে। ওয়ার্ডের শৌচাগারগুলি দীর্ঘদিন সাফাই না হওয়ায় রোগীরা ব্যবহার করতে পারছে না। পানীয় জল সরবরাহের জন্য পুরুষ ওয়ার্ডের বাইরে একটি ট্যাপকল লাগানো হলেও মাঝেমধ্যে বিকল থাকে। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা। নলকূপের জলে ভরে থাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর। চার দিন থেকে বুকে ব্যথা নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন চাকুলিয়া ব্লকের ইশাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আমজাদ আলি। তিনি বলেন, “দুর্গন্ধে টিকতে পারছি না। বাইরে থেকে জল কিনে আনতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখান থেকে অন্য কোনও রোগ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হবে।” একই অভিযোগ অন্য রোগীদের। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই দশা দেখে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতির জেরে চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। মার্চ মাসের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক না হলে আন্দোলন শুরু হবে।” জেলা বামফ্রন্টের সচিব অপূর্ব পাল বলেন, “রাজ্য সরকার পাল্টাতে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। আমরা জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের জানিয়েছি দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে আন্দোলনে নামব।” তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ বলেন, “দলের তরফে সম্প্রতি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়ন করে সিক বেবি ওয়ার্ড চালু করার জন্য রাজ্য বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।” |