মই বেয়ে পাশের ছাদে নামানো হল শিশুদের
চারদিকে কালো ধোঁয়া। শ্বাস নিতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে। পাঁচ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। ছুটে বাইরে যেতে হচ্ছে একটু টাটকা বাতাসের জন্য। এই অবস্থায় কী ভাবে উদ্ধার করা হবে সদ্যোজাতদের? ওদের কেউ তো সবে কাল জন্মেছে, কারও বয়স ৭ অথবা ১০ দিন!
বুধবার সকালে মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে বেসরকারি নার্সিংহোমটিতে আগুন লাগার পরে এই প্রশ্নই বড় হয়ে ওঠে। পুলিশ-দমকলের উদ্ধারকারীরা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না। কারণ সিঁড়ি বেয়ে নামাতে গেলে নিশ্চিত অঘটন ঘটবে। অবশেষে তিনতলার ঘরটিতে খুলে ফেলা হল এসি মেশিন। চৌকো খোপের মতো যে ছোট পরিসর বেরলো, তার গায়ে লাগানো হল মইয়ের একপ্রান্ত। অন্য প্রান্ত পাশের বাড়ির ছাদে। তারপর মই বেয়ে নামিয়ে আনা হল নবজাতকদের। গোটা উদ্ধার পর্বে ঠায় দাঁড়িয়ে সাহায্য করলেন পাশের বাড়ির মালিক বিমলেন্দুবিকাশ সাহা। তিনি নিজেও চিকিৎসক।

এ দিন সকাল থেকেই হাট করে খোলা ছিল বিমলেন্দুবাবুর বাড়ির সদর দরজা। অবাধে যাতায়াত করলেন উদ্ধারকারীরা। দরজা খোলা থাকায় মূল্যবান কিছু যে খোওয়া যেতে পারে, সে দিকে নজরই ছিল না প্রবীণ গৃহকর্তার। তাঁর বক্তব্য, “হঠাৎ আগুন লাগার খবর পেয়েই ছাদে উঠে আসি। কী ভাবে সাহায্য করা যায় ভাবছিলাম। আমার তো বয়স হয়েছে, কী-ই বা করতে পারি। তা-ও ছেলে রবিন ও পরিচিতদের নিয়ে যতটা সম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করেছি।” বিমলেন্দুবাবু নিজে চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে খানিকটা লাভও হল। নিরাপদে নামানোর পরে তিনিই শিশুদের চেক-আপ করে দিলেন।
মেদিনীপুরের সায়নী মহারানার অস্ত্রোপচার করে মেয়ে হয়েছে রবিবার। ৩ দিনের বাচ্চাকে কী ভাবে শ্বাসরোধকারী ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব! কিছুতেই মেয়েকে কাছছাড়া করতে মন চাইছিল না মায়ের। সায়নীর মা মায়া দাসের কথায়, “ভাবতেও অবাক লাগছে, আগুন লেগে গেল, অথচ হাসপাতালের কাউকে দেখতে পেলাম না। পরে পুলিশ এসে বাচ্চাদের ওই ভাবে উদ্ধার করল।” তাঁর ক্ষোভ, “এরা শুধু টাকা দাবি করে। চিকিৎসা পরিষেবা বলে কিচ্ছু নেই। এদের শাস্তি হওয়া উচিত।” বাঁকুড়ার খাতড়া থেকে এসে মুরারিমোহন মাহাতে স্ত্রী সুফালিকে ভর্তি করিয়েছিলেন এই নার্সিংহোমে। ৯ দিন আগে মেয়ে হয়েছে। মুরারিমোহনবাবুর কথায়, ‘‘ভাবুন তো, কত বড় অঘটন থেকে বাঁচলাম। ভাল হবে বলে কত দূর থেকে এসে এখানে স্ত্রীকে ভর্তি করেছিলাম। বিজ্ঞাপনে কত নাম-ডাক। অথচ ভেতরে যে এত খারাপ ব্যবস্থা জানা ছিল না।”
তবে শেষমেশ কচি প্রাণগুলিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারায় সকলেই খুশি। সেই সঙ্গে রোগীর পরিজন থেকে শহরবাসী, সকলের দাবি, এ বার যেন স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতাল, নার্সিংহোমে কড়া নজরদারি চালায়। কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে সব রকম আপদকালীন ব্যবস্থা রাখতে। যাতে প্রাণ বাঁচাতে এসে বা নতুন প্রাণের জন্ম দিতে এসে ভবিষ্যতে কাউকে আর এমন অভিজ্ঞতার শিকার হতে না হয়।

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.