দু’দিকের রাস্তাই সংকীর্ণ। তার মধ্যেই মেদিনীপুরের রবীন্দ্রনগরে মাথা তুলেছে বেসরকারি হাসপাতালটি। পাঁচতলা হাসপাতালে ১০১টি শয্যা। দোতলা-তেতলা ও তার উপরে ওঠার সিঁড়িও সংকীণর্র্। বুধবারের ঘটনার পর এই বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর পরিজনরা। এ জন্য পুর-প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরকে দুষছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, হাসপাতাল কর্তাদের সঙ্গে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ কর্তার ‘বিশেষ সখ্য’র জন্যই পরিকাঠামো ছাড়া এখানে হাসপাতাল গড়ে স্বাস্থ্য-ব্যবসা চালাতে সমস্যা হয়নি। |
অভিযোগ উড়িয়ে বেসরকারি এই হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পীযূষ পালের দাবি, “রোগীদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে আমাদের সব সময় নজর থাকে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোই ছিল।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, এখানে পরিকাঠামোগত ত্রুটি ছিল। কলকাতার আমরি হাসপাতালে ডিসেম্বরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে এখানে যৌথ পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য দফতর ও দমকল। তখন বেসমেন্টে দাহ্যবস্তু মজুত করে রাখার বিষয়টি নজরে আসে। দাহ্যবস্তু সরিয়ে বেসমেন্ট ফাঁকা রাখতে কর্তৃপক্ষকে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ‘নির্দেশ মানা হবে’ বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায় সারেন কর্তৃপক্ষ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “ঘটনা থেকেই স্পষ্ট, বেসমেন্ট থেকে দাহ্যবস্তু সরানো হয়নি।” কিন্তু লিখিত প্রতিশ্রুতি পূরণ হল কি না, স্বাস্থ্য দফতরই বা কেন তা খতিয়ে দেখল না? জবাব দিতে পারেননি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও।
বেসমেন্টে ওষুধের দোকান।
নিজস্ব চিত্র |
এত সংকীণর্র্ রাস্তার মধ্যে ৫-তলা বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলতে পারে না বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল ভকত। তাঁর কথায়, “কী ভাবে এই বাড়ি তৈরি হল সেটাই তো প্রশ্ন!” পুরসভা কিন্তু শ্যামলবাবুদের দলেরই দখলে! পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “অনুমতি নেওয়ার পর কেউ কেউ নক্শা না মেনে বাড়ি তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।” এত দিন কেন দেখা হল না সদুত্তর মেলেনি। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহর এবং শহরলতিতে বহু নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে।
কোনওটা দোতলা, কোনওটা তিনতলা। কিন্তু, তিনতলায় আগুন লাগলে কী ভাবে তা নেভানো হবে, কী ভাবেই বা ‘জতুগৃহে’ আটকে পড়া মানুষকে দ্রুত উদ্ধার করা হবে, তার জবাব নেই দমকলের কাছেও। কারণ, দুই শহরের দমকল কেন্দ্রেই বড় মই নেই! বুধবারের আগুন রবীন্দ্রনগরের বেসরকারি হাসপাতালটির বেসমেন্টেই সীমাবদ্ধ ছিল। তা ছড়ালে যে কী হত, এখন তাই-ই ভাবাচ্ছে দমকল কর্মীদের। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “আমাদের কাছে যে মই রয়েছে তাতে দো-তলা, খুব বেশি হলে তিন-তলা পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব। তার বেশি নয়।”
পরিস্থিতি দেখে মেদিনীপুরের এই হাসপাতাল আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের বক্তব্য, এই অবস্থায় এখানে আর রোগী ভর্তি নেওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে খবর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কী কী বিধি মানতে বলা হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ কী জবাব দিয়েছিলেন, বুধবার দুপুরেই তা জানতে চেয়েছেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। সেই মতো এ দিন বিকেলেই তাঁর কাছে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। |