আমরি-কাণ্ড থেকে বিন্দুমাত্র শিক্ষা নেয়নি শহরের কোনও সরকারি হাসপাতাল। এখনও যে ন্যূনতম নজরদারি বা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই, বুধবার এসএসকেএমের অগ্নিকাণ্ড ফের তা সামনে আনল।
অগ্নিবিধি মেনে চলা তো দূর অস্ৎ, নিয়মিত বৈদ্যুতিক লাইন পরীক্ষারও বন্দোবস্ত নেই। চার দিকে বিদ্যুতের খোলা তার, বেসমেন্টে দাহ্য পদার্থ, কাজ শেষ হওয়ার পরেও বন্ধ হয় না এসি মেশিন। আর তার জেরেই বিপন্ন হয় রোগীদের নিরাপত্তা।
আমরির ঘটনার পরে হঠাৎ তৎপর হয়ে ওঠা স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ জারি করেছিল, সরকারি হাসপাতালগুলিতে নিয়মিত ‘ফায়ার ড্রিল’ করে অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে চিকিৎসক থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সকলকেই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ বা আর জি করের মতো কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে এক বার সেই ড্রিল হয়েওছিল। কিন্তু সেই প্রথম, সেই শেষ। রাজ্যের কোনও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কস্মিনকালেও দমকলের থেকে ছাড়পত্র নেয়নি।
আমরির ঘটনার পরেও সরকারি হাসপাতালগুলিতে অগ্নি-নির্বাপণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দমকলের ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র উদ্যোগী হননি স্বাস্থ্যকর্তারা। এমনকী, সরকারি হাসপাতালে ছোটখাটো আগুন লাগার ঘটনা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, বিশেষত উইন্ডো এসি মেশিন থেকে হওয়া সত্ত্বেও সেগুলি বদলে স্প্লিট মেশিন বসানোর ব্যাপারেও তাঁরা এত দিন গা করেননি। বুধবারও সেই উইন্ডো এসি থেকেই ফের আগুন লাগল এসএসকেএমে।
হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের আউটডোরে পাঁচটি এসি মেশিন ছিল। তার মধ্যে একটি যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সেটি সারানোর কাজ চলেছে। বিকেল পৌনে চারটে পর্যন্ত চিকিৎসকেরা আউটডোরে ছিলেন। তখনও এসি মেশিনে গ্যাস ভরা হচ্ছিল। হাসপাতাল কর্তাদের একাংশের মতে, যন্ত্রটি চালুর পরে আর বন্ধ করা হয়নি। তা থেকেই এ দিন সকালে আগুন লাগে ওই আউটডোরে।
এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, তাঁরা চলে যাওয়ার পরে পূর্ত দফতরের বৈদ্যুতিক বিভাগের কিছু কর্মী, ওয়ার্ড-মাস্টার এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা আউটডোরে ছিলেন। যন্ত্রটি বন্ধ করার দায়িত্ব ছিল চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের উপরেই। যদিও এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্রের দাবি, রক্ষণাবেক্ষণের তরফে কোনও ত্রুটি ছিল না। তবু পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, নিউ ক্যাজুয়ালটি ব্লকের নীচে মেডিক্যাল বর্জ্য জমা করে রাখা হয়েছিল কেন, সেই খোঁজও চলছে। আজ, বৃহস্পতিবার পূর্ত দফতরের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ তাদের রিপোর্ট জমা দেবে।
ইমার্জেন্সি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “হাসপাতালে উইন্ডো এসি রাখলে রক্ষণাবেক্ষণে অনেক বেশি নজর দিতে হয়। সরকারি হাসপাতাল সেই পুরনো দিনেই পড়ে রয়েছে। যে কোনও সময়ে বিপদ ঘটতে পারে।” কেন সরকারি হাসপাতালে পুরনো উইন্ডো এসি বদলানো হচ্ছে না?
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “রাতারাতি তো সব স্প্লিট এসি বসানো যায় না। ধীরে ধীরে হবে। আর এসি যন্ত্রে কখনও শর্ট শার্কিট হবে না, এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।” কিন্তু দমকলের ছাড়পত্র নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি কেন? সুশান্তবাবুর উত্তর, “সব হবে।” সরকারি হাসপাতালে ফায়ার ড্রিল কয়েক দিন হয়ে বন্ধ কেন, তারও সদুত্তর দিতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্তারা। |