পাহাড়-তরাই-ডুর্য়াসে আন্দোলন করা নিয়ে ‘সুর নরম’ করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং তাদের রাজনৈতিক বিরোধী ১১টি সংগঠনের ‘মঞ্চ’। তরাই ও ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া জিটিএ-র নির্বাচন করা যাবে না বলে ইতিমধ্যে হুমকি দিলেও আপাতত আন্দোলনে না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ২৪ মার্চ কলকাতায় বৈঠকে বসছে মোর্চা। ‘মঞ্চ’-এর নেতারাও আপাতত মোর্চার রাজনৈতিক কর্মসূচির বিরোধিতায় বন্ধ ডাকা থেকে বিরত থাকার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন।
দু’পক্ষই সুর নরম করায় সাময়িক ভাবে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বুধবার বলেন, “আশা করি, আগামী দিনেও জনজীবন স্তব্ধ করার রাস্তায় কেউ হাঁটবেন না।”
দার্জিলিং পাহাড়ের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের অনুমান, পাহাড়-ডুয়ার্সে আন্দোলনের ডাকে আগের মতো সাড়া মেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে মোর্চার অন্দরে। একই ভাবে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এ তরাই-ডুয়ার্সের এলাকা অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতায় তরাই-ডুয়ার্সে দু’দিন বন্ধের ‘হুমকি’ দিয়ে জনতার উষ্মার আঁচ পেয়েছে মোর্চা-বিরোধী ‘মঞ্চ’। উপরন্তু, আন্দোলনের নামে জনজীবন স্তব্ধ করার চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকারও। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ‘সুর নরম’ করল যুযুধান দু’পক্ষ।
পাহাড়ে দ্রুত জিটিএ গঠনের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। সে জন্য নির্বাচন বিধি তৈরি করে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ডিজিএইচসি-র তিন মহকুমা দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং জিটিএ নির্বাচনের আওতায় থাকবে। ওই সরকারি সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে তিন দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘ধোঁকা’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে রাজ্যের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে মোর্চা। পক্ষান্তরে ‘মঞ্চ’ও মোর্চার পাল্টা আন্দোলনের হুমকি দেয়। তাতে চা ও পর্যটন শিল্পমহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
বুধবার অবশ্য মোর্চার তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত রাজ্যের ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। আগামী শনিবার কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাহাড়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসবেন গুরুঙ্গরা। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এ দিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সভাপতিকে টেলিফোন করে আগামী ২৪ মার্চ মহাকরণে বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। আমরা ২৩ মার্চ কলকাতায় যাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীকে সভাপতি সব বলবেন।” মোর্চার সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মূলত মনোনীত জিটিএ গঠন নিয়ে আলোচনা করবেন মোর্চা নেতারা। প্রথম সারির কয়েক জন মোর্চা নেতার বৈঠকে থাকার কথা।
পাশাপাশি, বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও সমিতি, কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি (কেপিপি অতুল রায় গোষ্ঠী)-সহ ১১টি সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, ৬ ও ৭ এপ্রিল যে ‘বাংলা বন্ধ’-এর ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা স্থগিত রাখার চিন্তাভাবনা চলছে। অতুল রায় বলেন, “বাংলা বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য নানা মহলের অনুরোধ এসেছে। তা ছাড়া, ৬ এপ্রিল গুড ফ্রাইডে। তাই ২৫ মার্চ নাগরাকাটায় সব সংগঠনের প্রতিনিধিরা বসে বন্ধের দিন চূড়ান্ত করবে।”
সিপিএম অবশ্য দাবি করেছে, মোর্চার আন্দোলনের হুমকি ও তা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দেওয়ার বিষয়টি ‘নাটক’। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, “যা হচ্ছে, তা নাটক বলে মনে হচ্ছে। নাটক করে মনোনীত জিটিএ গঠনের চেষ্টা হচ্ছে। যা পাহাড়ের মানুষ মেনে নেবে না।”
স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি অবশ্য সূত্রে জানানো হয়েছে, মনোনীত নয়, নির্বাচনের মাধ্যমে জিটিএ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ডিজিএইচসি-র এলাকার সঙ্গে শিলিগুড়ি মহকুমার ১৪টি মৌজা সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই সব এলাকায় জিটিএ-র ভোট হবে। ওই নির্বাচন পরিচালনার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিল রাজ্য সরকার। মহাকরণে স্বরাষ্ট্রসচিবের দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য নির্বাচন কমিশন তাতে রাজি হয়নি। এই অবস্থায় সরকারের পাহাড় সংক্রান্ত দফতরের (হিল অ্যাফেয়ার) অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে (পদাধিকার বলে যিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব) জিটিএ-নির্বাচনের সর্বোচ্চ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনা করবেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক।
প্রথম জিটিএ-র নির্বাচন কবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র। তবে বিধি মেনে নির্বাচনের প্রথম ধাপ হিসাবে এলাকা পুনর্গঠন ও ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ এপ্রিলেই শুরু হবে। স্বরাষ্ট্র দফতরের ওই মুখপাত্র জানান, পুরনো ডিজিএইচসি এলাকায় ২২টি মৌজা ছিল। নবগঠিত জিটিএ এলাকায় ওই মৌজাগুলিকে ভেঙে ৪৫টি করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধন হবে। পুনর্গঠনের কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ হলে মে মাসে জিটিএ-র নির্বাচন হতে পারে। |