বিধানসভায় মুখ খুললেন সুশান্ত, হইচই তৃণমূলের
ঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়ার পরে প্রথম বিধানসভার ভিতরে মুখ খুললেন প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। আর বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক বৈঠক করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের পাশে বসে।
যিনি দলের অন্দরে সুশান্তবাবুর ‘বিরোধী শিবিরে’রবলেই পরিচিত!
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর থেকে সুশান্তবাবু নিজে এবং সিপিএম যা দাবি করে এসেছে, বুধবার বিধানসভায় দাঁড়িয়েও তা-ই বলেছেন তিনি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করা হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সুশান্তবাবুর কিছু ‘কাজকর্ম’ যথেষ্ট ‘অপছন্দ’ হলেও ওই জেলারই নেতা সূর্যবাবুকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র তত্ত্বে দলীয় সতীর্থের পাশেই দাঁড়াতে হয়েছে। কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের ‘গণ-প্রতিরোধে’র যে লাইন সুশান্তবাবু নিয়েছিলেন, তা আলিমুদ্দিন-অনুমোদিত।
সভার ভিতরে সুশান্তবাবুর বক্তৃতার সময় টানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে তাঁকে বাধা দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়কেরা। কিন্তু সুশান্তবাবু তাঁর জন্য বরাদ্দ ১৫ মিনিটের ভাষণ শেষ করেই নিজের আসনে বসেছেন। পরে সভার বাইরে বলেছেন, “সিআইডি টানা ৩০ ঘণ্টা জেরা করেও আমায় বিধ্বস্ত করতে পারেনি! এখানে অন্য দিকের বিধায়কেরা চিৎকার করে আমার কথা বন্ধ করতে পারবেন না! সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধীদের কথা শুনতে হবে!” উল্লেখযোগ্য, বেনাচাপড়ার কঙ্কাল-কাণ্ড নিয়ে (যা এখন বিচারাধীন) সভার ভিতরে-বাইরে একটি কথাও বলেননি সুশান্তবাবু।
বস্তুত, রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিতর্কে বিরোধী শিবিরের বক্তা তালিকায় সুশান্তবাবুর নাম ‘ভেবেচিন্তেই’ রেখেছিল বামফ্রন্ট। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে এ যাবৎ এক বারও দলের ‘পরামর্শে’ বিশদে মুখ খোলেননি সুশান্তবাবু। বাম নেতৃত্ব জানতেন, বিধানসভায় সুশান্তবাবু বলতে গেলে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে শোরগোল হবে। আর সুশান্তবাবু তার মধ্যেই নিজের বক্তব্য সভার কার্যবিবরণীতে ‘নথিভুক্ত’ করিয়ে রাখবেন। ঘটেছেও তা-ই। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমানের পাশে বিধানসভার প্রথম সারির আসন থেকে সুশান্তবাবু মাইক্রোফোন ‘অন’ করা মাত্র হইচই শুরু করেন তৃণমূল বিধায়কেরা। মন্ত্রীর আসন থেকে প্রথম কটাক্ষ করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ‘মাটির তলায় আর কত কঙ্কাল আছে’ থেকে শুরু করে ‘ক’টা খুন করেছেন’ জাতীয় মন্তব্য উড়ে আসতে থাকে শাসক বেঞ্চ থেকে। প্রেস গ্যালারি থেকে যা শোনা গিয়েছে, তার মধ্যে বেশ কিছু ‘অশালীন’ সম্বোধনও ছিল। গোলমালে সুশান্তবাবুর বক্তব্যের অধিকাংশই স্পষ্ট শোনা যায়নি। পরে সভার বাইরে সূর্যবাবুর পাশে বসে সুশান্তবাবুর মন্তব্য, “এত প্রতিহিংসা হয়েছে, বলতে উঠলে যে বাধা দেওয়া হবে, জানতাম। কিন্তু আমার বলার সময় বেশ কিছু অশ্রাব্য, অশালীন কথাও বলা হয়েছে। বিধানসভার মধ্যেও এত ভয় কীসের?”
সাংবাদিক বৈঠকে সূর্যকান্তর সঙ্গে সুশান্ত। নিজস্ব চিত্র
বর্তমান রাজ্য সরকারের ১০ মাসের জমানাকে এখনই ৩৪ বছরের বাম শাসনের সঙ্গে ‘তুলনা’ করা যায় না, মেনে নিয়েই সুশান্তবাবু জানান, রাজ্যপালের ভাষণে অনুল্লিখিত ‘নেতিবাচক’ দিকগুলি তিনি তুলে ধরতে চান। সরকার পক্ষের বাধার মধ্যেই তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষ চেয়েছেন। তাই আপনারা সরকারে গিয়েছেন। আমরা বিরোধী আসনে। আমরা শুরু থেকে সহযোগিতার কথাই বলেছি।” তৃণমূল বিধায়কদের বাধা জোরালো হচ্ছে দেখে তিনি বলেন, “গলার জোরে আমরা বিশ্বাস করি না! প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য রাজনীতি করবেন না! মিথ্যা মামলা সাজাবেন না!” পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্তবাবুর আরও বক্তব্য, “জঙ্গলমহলে উন্নয়নের প্রথম কথাই হল শান্তি। এত দিন শান্তি ব্যাহত করছিল কিষেণজি’র নেতৃত্বে মাওবাদীরা। তিনি এখনকার মুখ্যমন্ত্রীকে ওই চেয়ারে দেখতে চেয়েছিলেন! তার পরে এই সরকার আসার পরেই নিহত হয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর-পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় একটা কথা এখন খুব চলছে কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলে কিষেণজি!” টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান বাম বিধায়কেরা, চিৎকার করতে থাকেন তৃণমূল বিধায়কেরা।
পরে সুশান্তবাবুকে পাশে নিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেন, “সংসদীয় গণতন্ত্রের ন্যূনতম রীতিনীতি প্রতিদিন লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমাদের বিধায়কদের বক্তব্য অসংসদীয় হলে কার্যবিবরণী থেকে বাদ যাচ্ছে। যেতেই পারে। কিন্তু ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে মন্ত্রী-বিধায়কেরা যা করছেন, আমরা সরকারে থাকার সময় কখনও করিনি। সরকার পক্ষের বিধায়কেরা এ দিন যে সব মন্তব্য করেছেন সুশান্তবাবুর বক্তব্যের সময়, বিচারাধীন বিষয়ে ওই সব কথা বলা যায় নাকি?” সুশান্তবাবুর বক্তব্য, “ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলবেই। কিন্তু যে সরকারের কোনও নীতি নেই, মতাদর্শ নেই, তারা কখনও শেষ কথা বলতে পারে না! শেষ কথা বলবে মানুষই।” মেদিনীপুর জেলা আদালতে চটি নিয়ে যে ব্যক্তি তাঁর উপরে হামলা করেছিলেন, তিনি এক জন ‘সমাজবিরোধী’ বলে অভিযোগ করে সুশান্তবাবু দাবি করেন, পুরো ঘটনাই ‘পরিকল্পিত’।
তিনি যে ভাবে ‘মানুষে’র কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি অত্যন্ত ‘জনপ্রিয়’ নেতা। তা হলে জঙ্গলমহলে এ বার বামেদের আসন কমল কেন? সুশান্তবাবুর জবাব, “রাজ্যে যা ফল হয়েছে, জঙ্গলমহলও তার বাইরে নয়। তা-ও ১৯টার মধ্যে ৯টা আসন আমরা জিতেছি। যে গড়বেতা-কেশপুর নিয়ে এত চক্রান্ত, সেখানে কি সিপিএমকে হারানো গিয়েছে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.