|
|
|
|
‘বিভীষণ’ বলে মানসকে আক্রমণ দলেরই সমরের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নাম না-করে বিধানসভার অধিবেশনে দলীয় সতীর্থ তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে ঘরশত্রু ‘বিভীষণ’ বলে আক্রমণ করলেন কংগ্রেসের বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়।
মালদহের রতুয়ার বিধায়ক সমরবাবু বুধবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের বক্তৃতা নিয়ে আলোচনার সময় বলেন, “বিভীষণ আমাদের মধ্যেও আছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর মানসপুত্র আর গৌতম দেবের চোখের মণিরাও এই জোট সরকারে রয়েছে। কোনও বিভীষণ যাতে এই জোট সরকারকে নষ্ট করতে না পারে, তাই সাধু সাবধান।”
প্রসঙ্গত, বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবার মানসবাবুকেই ‘বুদ্ধবাবুর মানসপুত্র’ বলে কটাক্ষ করতেন। সমরবাবু আক্রমণের লক্ষ্য যে মানসবাবুই, নাম না- বলেও প্রকারান্তরে সেচ দফতরের উল্লেখ করে তিনি নিজেই তাঁর বক্তব্যে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সেচ দফতরের কথা জানিয়ে সমরবাবু বলেন, “জমি অধিগ্রহণ ছাড়া আপনার দফতর কী করে টেন্ডার ডাকে? মা-মাটি মানুষের সরকারকে হেয় করতেই জমি অধিগ্রহণ না করেই টেন্ডার ডাকা হয়েছে!” মানসবাবুই রাজ্যের সেচমন্ত্রী। দলীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলেরই বিধায়কের এমন আক্রমণে উত্তেজিত কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশ দ্রুত কক্ষত্যাগ করে চলে যান পরিষদীয় দলের ঘরে। পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের কাছে সমরবাবুর বক্তব্য নিয়ে অভিযোগ জানান তাঁরা। তবে বিধানসভা কক্ষে তাঁর বক্তব্য পেশের পরে সমরবাবুর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি কংগ্রেসি বিধায়করা। তাঁরা জানতে চান, দলীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তা দলের মধ্যে না-বলে কেন বিধানসভা কক্ষে বললেন সমরবাবু। বিধায়কদের দাবি মেনে আগামী শুক্রবার পরিষদীয় দলের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন সোহরাব। সেখানে এসে সমরবাবুকে তাঁর বক্তব্য জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। বৈঠকে মানসবাবুরও থাকার কথা। এখন দেখার, সমরবাবু সে দিন বৈঠকে আসেন কি না এবং এলেও কী বলেন।
সমরবাবুর ভাষণের সময় সভায় ছিলেন না মানসবাবু। পরে সতীর্থদের মুখে ঘটনা শুনে সমরবাবুর বক্তব্য সংক্রান্ত বিধানসভার নথি চেয়ে পাঠান। তারপর স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সমরবাবুর বক্তব্য নিয়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেন। সমরবাবুর বক্তব্যের ‘জবাব’ দিতে চেয়ে স্পিকারের কাছে আর্জিও জানান। পরে মানসবাবু বলেন, “স্পিকারের অনুমতি পেয়েছি। বৃহস্পতিবার প্রশ্নোত্তর পর্বে সমরবাবুর বক্তব্যের জবাব বিশ্লেষণ করে
জানাব।” দলনেতা সোহরাবের কাছেও ‘সুবিচার’ চেয়েছেন মানসবাবু। চিঠি দিয়ে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও। কারণ, সমরবাবু দলে ‘প্রণব-ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত।
সেচ দফতরের যে টেন্ডার ডাকা নিয়ে সমরবাবুর ‘ক্ষোভ’, তা কার্যত নস্যাৎ করে পরে মানসবাবু পাল্টা দাবি করেন, “এই ধরনের কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় তদন্ত হবে।” তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পরে এই প্রথম সেচ দফতরের জেলাভিত্তিক এগ্জিকিউটিভ কমিটি গড়া হয়েছে। জেলার সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য, জেলাশাসককে নিয়ে গঠিত কমিটিকে সেচ বিষয়ক যাবতীয় অভিযোগ ও ত্রুটি ধরার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মালদহে এই কমিটির পাঁচটি বৈঠকে ছিলাম।” মানসবাবু থাকলেও ওই বৈঠকগুলির একটিতেও সমরবাবু ছিলেন না বলে জানিয়েছেন ওই জেলারই কংগ্রেস বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। সমরবাবুর আরও অভিযোগ, প্রাক্তন এক সেচমন্ত্রীর ‘পদাঙ্ক’ অনুসরণ করে বর্তমান সেচমন্ত্রীও বাঁধ তৈরির জন্য বরাদ্দ টাকা খরচ করছেন না। তাঁর বক্তব্য, “যে টাকা সেচ দফতরে বরাদ্দ হয়, সেই টাকার খুচরো পয়সা ফেললেও বাঁধ তৈরি হয়। অথচ এই সরকারের সেচ দফতর পূর্বসুরির মতোই পশ্চিমবাংলাকে ডোবানোর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।” যার জবাবে পরে মানসবাবু বলেন, “মালদহের বিভিন্ন নদীর ভাঙন ঠেকাতে করণীয় নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে বারবার বৈঠক করেছি। এ ব্যাপারে কোনও এলাকার সমস্যা থাকলে তা জানানোর জন্য আলাদা ওয়েবসাইটও রয়েছে।”
ঘনিষ্ঠ মহলে সমরবাবু সেচ দফতরের মালদহ ডিভিশনের এক ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তা মানসবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’। সমরবাবুর বক্তব্য, রতুয়ায় দেবীপুর ও কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। এর জন্য জমি অধিগ্রহণেরও নামগন্ধ নেই। অথচ, এর মধ্যেই ৭ কোটি টাকার প্রকল্পে দরপত্র চাওয়া হয়ে গিয়েছে। বাঁধ তৈরি না-হলে স্থানীয় বিধায়ককেই এলাকায় তোপের মুখে পড়তে হবে বলে দাবি করে সমরবাবু এ বিষয়ে বিধানসভায় তাঁর সরব হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, বন্যায় রতুয়ার ওই অংশ বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
|
|
|
|
|