নিজস্ব সংবাদদাতা • খানাকুল |
এক বছর আগে আশা-কর্মী নিয়োগে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ উঠেছিল খানাকুল-২ ব্লকের অধিকাংশ পঞ্চায়েতে। মাস কয়েক ধরে তদন্তের পরে সেই ‘অনিয়ম’ ধরা পড়েছে জানিয়ে নতুন ভাবে ওই পদগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করার জন্য দিন কয়েক আগে হুগলির জেলাশাসকের কাছে সুপারিশ করেছেন আরামবাগের মহকুমাশাসক (এসডিও) অরিন্দম নিয়োগী। মহকুমাশাসক বলেন, “পূর্ণাঙ্গ তদন্ত-রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন।” জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন বলেন, “জেলা প্রশাসনের তরফেও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে। এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।”
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে এক হাজার জনসংখ্যাপিছু এক জন করে আশা-কর্মী নিয়োগ করা হয়। যাঁদের কাজ, বাড়ি বাড়ি ঘুরে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা প্রচার, রোগীদের হাসপাতালমুখী এবং রোগ ও রোগী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। প্রকল্পটি জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অধীন। নিয়ম মতো মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত যে সব মহিলা পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা ওই পদে যোগ দিতে পারেন। ২০১০ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ খানাকুল-২ ব্লকে ওই পদে ১৬১ জনকে নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকার হয়। ঠিক হয়, মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ৮০ শতাংশের সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের যোগফলের ভিত্তিতে আশা-কর্মীদের তালিকা তৈরি হবে। প্রতিটি পঞ্চায়েতে পৃথক নিয়োগ-কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান, বিডিও-র প্রতিনিধি, বিএমওএইচের প্রতিনিধি এবং উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক কর্মী ছিলেন। প্রধান ছিলেন কমিটির সভাপতি।
সেই ‘প্যানেল’ অনুযায়ী নিয়োগ হলেও এখন কাজ করছেন ১৪৭ জন। বাকিরা নানা কারণে কাজে যোগ দেননি। কিন্তু পঞ্চায়েতের গাফিলতিতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে ওই ‘প্যানেল’ হয়নি বলে গত বছরের গোড়ায় অভিযোগ তোলেন জগৎপুর গ্রামের বাসিন্দা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী তথা স্থানীয় তৃণমূূল নেত্রী ছায়া কোটাল। তিনি মহকুমা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, বেশ কিছু ক্ষেত্রে অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে।
এর পরেই গত ২১ অক্টোবর মহকুমাশাসকের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় তদন্ত। সংশ্লিষ্ট নিয়োগ-কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে শুনানির ব্যবস্থা হয় মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওই নিয়োগে ‘অনিয়ম’ ধরা পড়েছে। যেমন, জগৎপুর পঞ্চায়েতের এক প্রার্থীর পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের নম্বর মিলিয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে। আবার কোনও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এলাকায় যে কর্মীর কাজ করার কথা, তাঁর পরিবর্তে অন্য উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এলাকার কর্মীকে কাজ দেওয়া হয়েছে।
অনিয়মের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানেরা। যেমন, নতিবপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান জাকির হোসেনের দাবি, “আশা-কর্মী নিয়োগে কোনও অনিয়ম হয়নি।” মাড়োখানা পঞ্চায়েতের প্রধান রূপালি মণ্ডল বলেন, “নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কোনও আপত্তি তোলা হয়নি।” একই বক্তব্য, চিংড়া পঞ্চায়েতের প্রধান চম্পা রং, রাজহাটি-১ পঞ্চায়েতের সীতারাম দলুইয়েরও। |