নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
আরামবাগ মহকুমার অবৈধ করাতকলগুলি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহকুমায় তিনশোরও বেশি অবৈধ করাতকল রয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২৫টি অবৈধ করাতকল ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলির বিরুদ্ধেও শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন দফতরের আরামবাগ ডিভিশনের রেঞ্জ অফিসার চন্দ্রশেখর মাহাতো বলেন, “৩৫টি করাতকলকে আপাতত বন্ধ রাখার নোটিস পাঠানো হয়েছে। ওই সব করাতকল লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তবে, যে সব করাতকল কোনও আবেদনই করেনি বা আবেদন করেও যোগাযোগ রাখেনি, সেগুলিকেই ‘সিল’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বন দফতরের এই সিদ্ধান্তে বহু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়লেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বন্ধ হয়ে যাওয়া করাতকলগুলির মালিকেরা।
গোঘাটের একটি বন্ধ করাতকলের মালিক মোহন নন্দী বলেন, “বছর দশেক আগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলাম। এখনও পাইনি। কলে চোরাই কাঠ আনা হলে বন দফতর দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। কিন্তু এ ভাবে ব্যবসা বন্ধ করবে কেন?” আরামবাগের কালীপুরের একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া করাতকলের মালিক নির্মলচন্দ্র কোলে বলেন, “বন দফতরের এই সিদ্ধান্তে আমার কলের প্রায় ১২ জন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।”
মহকুমা জুড়ে অবৈধ ভাবে গাছ কাটা এবং অবৈধ ভাবে করাতকল চালানো নিয়ে পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ ব্যাপারে তাঁরা আন্দোলনেও নেমেছেন। অবশেষে দেরিতে হলেও প্রশাসন যে এই অনিয়ম রুখতে উদ্যোগী হয়েছে, তাতে খুশি পরিবেশপ্রেমীরা। একই সঙ্গে তাঁদের আশঙ্কা, গাছ কাটা বন্ধ না হলে অবৈধ ভাবে করাতকলের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না।
গাছ কাটা যে চলছে তা মেনে নিয়েছেন বনকর্তারা। চন্দ্রশেখরবাবু এ জন্য পরিকাঠামোর অভাবকেই দাী করেছেন। তিনি বলেন, “মানুষ এখনও সে ভাবে সচেতন হননি। আমাদের দফতর থেকে সচেতনতার জন্য অরণ্য সপ্তাহ পালন করা হয় ঠিকই, কিন্তু লাগাতার প্রচার করার মতো পরিকাঠামো নেই। পঞ্চায়েতগুলি এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিলে অবৈধ করাতকল এবং গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সম্ভব হবে।”
বিভিন্ন পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রচার চালানো হলেও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। যেমন, আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের প্রধান সান্ত্বনা বাগ এবং পুড়শুড়ার কেলেপাড়া পঞ্চায়েতের অনুপ মান্না বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে, নিজের বাগানের গাছ কাটলেও বন দফতরের অনুমতি নিতে হবে। শুকনো গাছ ছাড়া কাটা যাবে না। কিন্তু মানুষ শুনছেন কই? সে ভাবে অভিযোগও আসছে না আমাদের কাছে।”
একই বক্তব্য জানিয়েছেন খানাকুল-১ ব্লকের ঘোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান শুকদেব জানা বা গোঘাট-২ ব্লকের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামাপদ মুদিরও। |