|
|
|
|
দারিদ্র-বিতর্ক |
তৃণমূলের তোপে অস্বস্তি বাড়ল কংগ্রেসের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
যোজনা কমিশন প্রস্তাবিত দারিদ্রের নয়া সংজ্ঞা নিয়ে দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল হল সংসদ। প্রশ্ন উঠল, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্যের অধিকার নিয়েও। রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক না করেও কেন্দ্র একতরফা দারিদ্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারে কি না, এই প্রশ্ন তুলে বিতর্ক উস্কে দিল শরিক তৃণমূল কংগ্রেসই।
আজ সকাল থেকেই অবিলম্বে দারিদ্রসীমা নিয়ে আলোচনার দাবিতে সংসদ কার্যত অচল করে দেন বিরোধী সাংসদরা। প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই দিনের কাজ এক ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হলে কাজ শুরু হয়। বিরোধীদের পাশাপাশি সমালোচনায় মুখর হয় তৃণমূল কংগ্রেসও। সবার আগে বলতে উঠে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন কারও পক্ষে এ ভাবে দারিদ্রের সীমারেখা তৈরি করা সম্ভব নয়। যোজনা কমিশনের কাছে গোটা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি তোলেন তিনি।
যে ভাবে রাজ্যগুলির মতামত উপেক্ষা করে যোজনা কমিশন নিজে থেকেই মাপকাঠি তৈরি করে ফেলল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কল্যাণ। তৃণমূলের ঘোষিত নীতিই হল, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে রাজ্যের মতামতকে উপেক্ষা করতে পারে না কেন্দ্র। চলতি বাজেট অধিবেশনের ঠিক আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সাংসদদের স্পষ্ট নির্দেশ দেন, রাজ্যের অধিকারের বিষয়টিকে সংসদের উভয় কক্ষে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে। আজ কল্যাণবাবু কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, “দারিদ্রসীমা বা মূল্য সূচক নির্দিষ্ট করার আগে যোজনা কমিশনের উচিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করা।” এ ভাবে শরিক দলের সমালোচনার মুখে পড়ে অস্বস্তিতে পড়ে যায় কংগ্রেস শিবির।
এ দিন বিরোধীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। সমাজবাদী পার্টি প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদব প্রশ্ন তোলেন, পানীয় জল ও বিদ্যুতের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় উপাদানই যেখানে দেশের ৬৫% মানুষের কাছে নেই, সেখানে বাতানুকূল ঘরে বসে দারিদ্র্যের সীমা তৈরি ‘চূড়ান্ত অবাস্তব’। মুলায়ম প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্টেকের অপসারণ দাবি করেন। বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ আবার যোজনা কমিশনের প্রধান হিসাবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন। সংসদে উপস্থিত ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধীর কাছে তাঁর আর্জি, অবিলম্বে এই মাপকাঠি বাতিল হোক।
সোমবারই দেশের অর্থনীতির হাল-হকিকত নিয়ে এক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যোজনা কমিশন। নতুন পরিসংখ্যানে ধরা হয়েছে, শহরাঞ্চলে এক জনের দৈনিক আয় ২৮.৬৫ টাকা হলে, তবেই দারিদ্রসীমার অন্তর্ভুক্ত হবেন তিনি। আর গ্রামের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ২২.৪০ টাকা। এনডিএ-র আহ্বায়ক জেডি (ইউ) প্রধান শরদ যাদবের অভিযোগ, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান দেশের বাস্তব চিত্রই জানেন না। আজকের বাজারে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসার মতো প্রাথমিক চাহিদার সংস্থান এই টাকায় সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জেডি (ইউ) প্রধান। তিনিও মন্টেকের অপসারণের দাবি তোলেন।
কাল বিরোধীদের প্রশ্নের জবাবে মন্টেক দাবি করেছিলেন, এই দারিদ্রসীমা নির্ধারিত হয়েছে মূলত ২০০৯-’১০ সালের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের ক্রেতা সমীক্ষা এবং জাতীয় আয়ের তথ্যের উপর ভিত্তি করে। এ দিন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া দাবি করেন, যে তথ্যের উপর ভিত্তি করেই এই সীমা নির্ধারণ করা হোক না কেন, হিসাবে কারচুপি করা হয়েছে। বর্তমানে ৮%র কাছাকাছি মুদ্রাস্ফীতির বাজারে কোনও মতেই এই টাকায় জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। |
|
|
|
|
|