তিন রাজ্যের বাইরে পা ফেলতে মরিয়া সিপিএম দলের বাইরের আদিবাসী মঞ্চ থেকে নতুন জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইনের বিরোধিতায় নামছে। বিরোধিতা করা হবে খনি ও খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ আইনেরও। আদিবাসীদের সমস্যা নিয়ে সরব হতে সিপিএমের উদ্যোগে আগেই ‘আদিবাসী অধিকার রাষ্ট্রীয় মঞ্চ’ তৈরি হয়েছিল। সেই মঞ্চ থেকেই আজ দিল্লিতে ইউপিএ-সরকারের এই দুই নতুন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন বৃন্দা কারাট, বিমান বসুরা। এ ক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওই সব রাজ্যে স্থানীয় জনজাতির মন জিততে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, বিশেষ করে ত্রিপুরায় আদিবাসী উন্নয়নে বাম-সরকারের ‘সাফল্যের খতিয়ান’ তুলে ধরতে চায়। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এর সুফল মিলবে বলে আশাবাদী সিপিএম।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করেই পশ্চিমবঙ্গে গদি হারিয়েছিল সিপিএম। এখন ফের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে পুনর্বাসনের দাবিতে সরব হচ্ছে দল। রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর অবশ্য দাবি, ক্ষমতা হারালেও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সিপিএমের এখনও যথেষ্ট জনসমর্থন রয়েছে। |
তিনি বলেন, “বিধানসভা ভোটে গোটা রাজ্যে বামেরা ৬১টি আসন পেয়েছে। কিন্তু ১৬টি সংরক্ষিত আসনের অর্ধেকই আমরা জিতেছি।” সম্মেলনে আদিবাসীদের উন্নয়নে বাম-সরকারের ‘সাফল্য’ তুলে ধরে তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে মোট জনসংখ্যার ৬% আদিবাসী। কিন্তু ভূমি সংস্কারের সময় বিলি হওয়া জমির ১৩% পেয়েছিলেন আদিবাসীরা। বিমানবাবু বলেন, “আমরা যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার কিছু কিছু করেছি।” সম্মেলনে ১৩টি রাজ্যের প্রায় হাজার দেড়েক প্রতিনিধি ছিলেন। অধিকাংশই এসেছিলেন হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলি থেকে। যাকে নিজেদের সাফল্য হিসেবেই দেখছেন সিপিএম-নেতৃত্ব। আদিবাসীদের মন জয় করতে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বিমানবাবু বলেন, “আমার নাম বিমান বসুর বদলে বিমান মান্ডি হলে খুব খুশি হতাম।”
সিপিএম নেতৃত্বের মতে, হিন্দি বলয়ে শুধু বাম সমর্থকদের নিয়ে আন্দোলন করা অসম্ভব। প্রকাশের মতে, জাতপাত বা আত্মপরিচয়ের রাজনীতি করা সিপিএমের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু দলিত বা আদিবাসীদের সমস্যা নিয়েও সরব হতে হবে। প্রয়োজনে দলের বাইরে পৃথক মঞ্চ গড়তে হবে। আদিবাসী অধিকার রাষ্ট্রীয় মঞ্চ গড়ে সেটাই শুরু করেছেন বৃন্দা। সেখান থেকেই নয়া জমি অধিগ্রহণ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃন্দা বলেন, “নতুন জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইনে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়াকে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছে। খনি ও খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ আইনে আদিবাসীদের নাম-কা-ওয়াস্তে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।” তাঁর দাবি, “আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় খনিজ সম্পদের উপর তাদের আইনি অধিকার দিতে হবে।” |