ধর্মঘটের দিন অনুপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা। এ বার যাদবপুরের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি) রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানাচ্ছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এই ধরনের গরহাজিরার ক্ষেত্রে বেতন কাটার কোনও সংস্থান নেই। বুধবার ইসি-র বৈঠকে এই বিষয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ধর্মঘটের দিন সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদেরও কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে বলে আগেভাগে নির্দেশ জারি করেছিল রাজ্য সরকার। তার পরে অর্থ দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে ওই দিন ছুটির ‘গ্রহণযোগ্য’ কারণ চিহ্নিত করে দেয়। সেই সব কারণে যাঁরা ছুটি নেবেন না, অথচ ধর্মঘটের দিন গরহাজির থাকবেন, তাঁদের বেতন কেটে নেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য। তার পরেই এই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। সংগঠনগুলির মূল বক্তব্য, স্কুলের ছুটি মঞ্জুর করে পরিচালন সমিতি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি নির্ধারিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্বশাসিত। রাজ্য সরকার তাই ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মীদের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন-বিধির বিষয়টি ছাড়াও খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ধর্মঘটের পরে বলেছিলেন, ধর্মঘটের দিনে কর্মীদের কাজে আসার অধিকার যেমন আছে, তেমনই অনুপস্থিত থাকার অধিকারও আছে। স্পষ্টতই এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সিদ্ধান্তের বিপরীত সুর। এই নিয়ে জল্পনা কম হয়নি। তবে শিক্ষামন্ত্রী নিজের বক্তব্যে অনড় থাকেন। উপরন্তু ব্রাত্যবাবু জানিয়ে দিয়েছিলেন, ধর্মঘটের দিন খুব অল্প শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীই গরহাজির ছিলেন। তাঁদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য ছিল, “আমি গোয়েন্দাগিরি করতে পারব না।” তার পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংগঠন বেতন কাটার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তোলে। তাতে সামিল হয় জুটা-ও। এ বার এক ধাপ এগিয়ে যাদবপুরের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলই সরকারকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, তাদের আইনে বেতন কাটার ব্যবস্থা নেই।
যাদবপুরের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বুধবার বলেন, “বেতন কাটার সংস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-বিধিতে নেই। উচ্চশিক্ষা সচিবকে সেটাই লিখিত ভাবে জানানো হবে।” কাল, শুক্রবারের মধ্যেই এই ব্যাপারে যাদবপুরের ইসি-র চিঠি সচিবের কাছে পাঠানো হবে বলে জানান রেজিস্ট্রার। ভবিষ্যতে ধর্মঘটের দিনে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ছুটির ব্যাপারে কী বন্দোবস্ত নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে নতুন বিধি তৈরি করা হবে বলেও এ দিন ইসি-র বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। |