কাঠগড়ায় তৃণমূল
পাঁচ লাখ তোলা না দেওয়ায় বাড়ির মুখে ক্লাবঘর
সুদীর্ঘ ৪০ বছর মামলা লড়ার পর জবরদখল উচ্ছেদ করে জমি হাতে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেই জমিতে বাড়ি করেও থাকতে পারলেন না বিধবা এক বৃ্দ্ধা।
উত্তর কলকাতার সৎচাষি লেনের কবিতা চট্টোপাধ্যায় নামের ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করতেই স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যরা পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। ওই টাকা না দেওয়ায় তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ওই ক্লাবের সদস্যরা তাঁর বাড়ির সামনের কুড়ি ফুট চওড়া রাস্তার প্রায় পুরোটা দখল করে ক্লাব ঘর এবং মার্বেল পাথরের মন্দির তৈরি করে।
বাড়িতে ঢোকার জন্য রাস্তার মাত্র আড়াই ফুট ছেড়ে রাখা হয়েছে। কবিতাদেবীর অভিযোগ, ওই ক্লাবটি তৃণমূল সমর্থকদের। তাঁর বাড়িতে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে যে ক্লাব ঘরটি বানানো হয়েছে, তাতেও ঝোলানো হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের হোর্ডিং।
উত্তর কলকাতার সৎচাষি লেনে বাড়ির মুখ ঢেকে তৈরি হয়েছে ক্লাব ও মন্দির। নিজস্ব চিত্র
এই ‘জুলুম’-এর কথা জানিয়ে কবিতাদেবী অভিযোগ দায়ের করেছিলেন পুলিশ ও পুরসভায়। কোনও ফল না পেয়ে তিনি বিষয়টি জানান খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালকে। কবিতাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় ও রাজ্যপালের দফতর ওই জবরদখল হটিয়ে দেওয়ার জন্য পুরসভা ও পুলিশকে সুপারিশ পাঠিয়েছিল। সে সুপারিশও কানে তোলেনি পুরসভা-পুলিশ। কবিতাদেবী বলেন, “উল্টে আমাকেই শাসানি দিয়ে চলেছে ওই ক্লাবের সদস্যরা।” মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের কাছে চলে গিয়েছেন তিনি।
কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ২১, সৎচাষি লেনের ৫ কাঠা জমির অংশীদার কবিতাদেবী। তিনি জানান, ওই জমি স্থানীয় একটি ক্লাব ও আরও কয়েক জন মিলে দখল করে নিয়েছিল। ১৯৭২ সালে ওই জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে উচ্ছেদের মামলা করা হয়। আদালতের নির্দেশে ২০১১ সালে উচ্ছেদকারীদের হটিয়ে ওই জমির দখল পান কবিতাদেবীরা। তার পর তাঁরা ওই জমিতে নিজেরাই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন।
কবিতাদেবীর অভিযোগ, বাড়ি তৈরির সময়ে উচ্ছেদ হওয়া ক্লাবের কয়েক জন তাঁদের কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না পেয়ে বাড়ির সামনের রাস্তা দখল করে ক্লাব ঘর ও মন্দির তৈরি করে ফেলে ক্লাবের ছেলেরা। কবিতাদেবীর অভিযোগ, রাস্তা দখল করে ক্লাব ও মন্দির তৈরির সময় কাশীপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। কবিতাদেবী বলেন, “থানা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যানকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু কোথাও গিয়েই সুবিচার পাইনি।”
মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের অগস্ট মাসে কবিতাদেবীর চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী ১ সেপ্টেম্বর মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।
কিন্তু এর পরেও কাজ হয়নি। উল্টে তাঁকেই খুনের হুমকি দেওয়া হতে থাকে বলে কবিতাদেবীর অভিযোগ। এর পরে তিনি গোটা বিষয় জানিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দেন। রাজ্যপালের দফতর থেকে ২৯ অগস্ট স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত সচিবকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তার পরও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।
এ ব্যাপারে কী বলছেন পুলিশ ও পুরসভার কর্তারা?
কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) বিশাল গর্গ বলেন, “ওই সুপারিশের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রায় একই সুরে ১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, “ওই এলাকায় একটা সমস্যা রয়েছে। পুরসভা বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উচ্ছেদ অবশ্যই করা হবে।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সম্প্রতি ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারা গিয়েছেন। সেই কারণে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয়। বিষয়টি দেখছি।”
এই প্রসঙ্গে কী বলছেন ওই ক্লাবের সদস্যরা?
ক্লাবের এক সদস্য বলেন, “আমাদের জায়গা দেবে বলে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এখন কোথায় যাব! তাই ফুটপাথেই ক্লাব ঘর তৈরি করেছি।” টাকা চাওয়া ও খুনের হুমকির বিষয়টি অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন ওই সদস্য।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.