পুলিশ অকর্মণ্য, এজলাসে দাঁড়িয়ে শুনলেন পচনন্দা
লকাতা পুলিশের অকর্মণ্যতার জন্য প্রতিদিন আদালতে সরকারি আইনজীবীরা কী ভাবে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছেন, কী ভাবে মামলা বিলম্বিত হচ্ছে, মানুষ বিচার না-পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন, বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে শুনতে হল পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে।
বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ শুধু কলকাতা পুলিশের কাজকর্মের সমালোচনা নয়, পুলিশ কমিশনার আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নিজেকে আদালতের ঊর্ধ্বে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন বলেও মন্তব্য করল। ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশনার নিজে তদন্ত না-করে ডিসি নর্থকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছেন। আদালত যদি মনে করত তদন্তের ভার ডিসি-কে দেওয়া যায়, তা হলে তারা সেটাই করত। ডিসি-র যে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা নেই, তা পুলিশ কমিশনারের তা জানা ছিল না বলেও মন্তব্য করেছেন বিচারপতিরা। পুলিশ কমিশনারকে এ দিন আদালতে দাঁড়িয়ে এক ঘণ্টা ধরে বিচারপতিদের ভর্ৎসনা শুনতে হয়।
আমহার্স্ট স্ট্রিটে একটি বাস দুর্ঘটনার মামলায় এ দিন পুলিশ কমিশনারকে তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সরকারি আইনজীবী সুকন্যা ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, দুর্ঘটনার পরে ওই বাসের চালক গাড়ি গ্যারাজে জমা দিয়ে বাড়ি চলে যান। পরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান। আগাম জামিনের শুনানির দিন দেখা যায়, পুলিশ আদালতে কেস ডায়েরি পাঠায়নি। কেস ডায়েরি না-থাকায় ৫ মার্চ মামলা শুনতে চায়নি হাইকোর্ট। তারা পর দিন কেস ডায়েরি হাজির করার নির্দেশ দেয়। পরের দিনও কেস ডায়েরি আসেনি। কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি থানা থেকে কেস ডায়েরি কেন আসছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। সরকারি আইনজীবী জানান, তিনি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানাকে বারবার কেস ডায়েরি পাঠাতে বললেও কোনও লাভ হয়নি।
ক্ষুব্ধ আদালত ৭ মার্চ আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসি-কে কেস ডায়েরি নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। পরের দিন দেখা যায় ওসি আসেননি, এসেছেন ওসি ফেটাল। বারবার কেস ডায়েরি না-পাঠানো এবং নিজে হাজির না-হওয়ায় পুলিশ কমিশনারকে ওই ওসি-র বিরুদ্ধে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সোমবার পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট আদালতে পৌঁছনোর পর দেখা যায় তদন্ত করেছেন ডিসি নর্থ। পুলিশ কমিশনারই তাঁকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেন। কেন পুলিশ কমিশনার নির্দেশ অমান্য করলেন, তা জানতে চেয়ে এ দিন পুলিশ কমিশনারকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ।
এ দিন পুলিশ কমিশনারের পক্ষে সওয়াল করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র। তিনি বলেন, ডিসি নর্থের পাঠানো রিপোর্টে পুলিশ কমিশনারের সই রয়েছে। বিচারপতি সেনগুপ্ত এ সময়ে অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে জানতে চান, তিনি পুলিশ কমিশনারের এই কাজের যৌক্তিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন কিনা। বিচারপতি বাগচি বলেন, কেন পুলিশ কমিশনার আদালতের নির্দেশ পালন করলেন না, তা জানাতে হবে। তাঁর কাজকে সমর্থন করার অবকাশ নেই। অনিন্দ্যবাবু বলেন, এটা ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা। ডিভিশন বেঞ্চ তখন বলে, কোনও ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। এটা জানা থাকার কথা যে, ডিসি-র ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা নেই। সেটা একমাত্র পুলিশ কমিশনারের রয়েছে। পুলিশ কমিশনার এমন ব্যক্তিকে তদন্ত করতে দিলেন, যাঁর এই তদন্ত করার এক্তিয়ারই নেই।
হাইকোর্টের শক্তিশেল
• কলকাতা পুলিশের এমন ঔদ্ধত্য আগে দেখা যায়নি
• সিপিকে তদন্ত করতে বলা হয়, তিনি তা করেননি
• কেন তাঁকেই তদন্ত করতে বলা হয়েছিল, সিপি বোঝেননি
• ডিসি ওই কাজ করতে পারলে সিপিকে দেওয়া হত না
• ডিসি-র যে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা নেই, সিপি তা জানেন না
• নন্দীগ্রামের কেস ডায়েরি আসে ১ দিনে, বেহালা, আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে ৭ দিনে
• পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর পরিচয় প্রকাশ করে দিচ্ছে
• থানায় জবানবন্দি নেওয়ার সময় ভিডিও রেকর্ড হচ্ছে না
অ্যাডভোকেট জেনারেল রাজ্যে বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট তৈরির প্রসঙ্গ এনে বলেন, পুলিশের পরিকাঠামো আরও উন্নত করার চেষ্টা হচ্ছে। তার ফলে কোথাও কোথাও কিছু ত্রুটি হচ্ছে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি তাঁকে জানিয়ে দেন, পুলিশের কাজের পদ্ধতি বা সমস্যা নিয়ে আদালত ভাবিত নয়। আদালত চায় ফল। মানুষ সুবিচার পাচ্ছেন কিনা, সেটাই বড় কথা।
বিচারপতি সেনগুপ্ত বলেন, নন্দীগ্রাম থেকে ২৪ ঘণ্টায় কেস ডায়েরি চলে আসছে। অথচ আমহার্স্ট স্ট্রিট বা বেহালা থেকে কেস ডায়েরি আাসতে এক সপ্তাহ পার হয়ে যাচ্ছে। মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যে আইনজীবীরা সরকার পক্ষের হয়ে দাঁড়ান, তাঁরা আদালতের কাছে অপমানিত হচ্ছেন। কলকাতা পুলিশের অকর্মণ্যতার ফল ভোগ করতে হচ্ছে অসংখ্য আবেদনকারীকে। কেস ডায়েরি সময় মতো না-আসার মতো অন্যায় যে হাইকোর্ট বরদাস্ত করবে না, তা-ও এ দিন কড়া ভাষায় পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
এখানেই থেমে না-থেকে থানায় জবানবন্দি নেওয়ার সময়ে কেন তার ভিডিও রেকর্ডিং করা হচ্ছে না, সেই প্রসঙ্গও তোলেন বিচারপতিরা। ডিভিশন বেঞ্চ বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশকে প্রতি থানায় ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দি অভিযুক্তেরা আদালতে অস্বীকার করেন, মামলা দীর্ঘায়িত হয়। তাই জবানবন্দি ভিডিও রেকর্ড করে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়ার পরেও কলকাতার অধিকাংশ থানাতেই এই ব্যবস্থা করা হয়নি।
অভিযোগকারী কিংবা অভিযোগকারিণীর নাম সংবাদমাধ্যমে কেন প্রকাশ করে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট। অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ইদানীং সংবাদমাধ্যমের ক্ষিদে বেড়েছে বলে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ডিভিশন বেঞ্চ সেই যুক্তি মানতে চায়নি। তারা বলে, সংবাদমাধ্যম তার কাজ করছে। কত বেশি সংবাদ ও তথ্য সংগ্রহ করা যায়, এটাই সাংবাদিকদের কাজ। তাঁদের কাজ তাঁরা ঠিকই করছেন। কিন্তু পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করছে না। পুলিশ অভিযোগকারীর নাম জানাতে পারে না।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.