রাজ্যসভা ভোটে তাদের প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে জেতাতে বামফ্রন্টের সাহায্য চাইবে না কংগ্রেস। সোমবার মান্নানের মনোনয়ন পেশের পরে এ কথা জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। তবে দিল্লিতে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার পর বাম নেতারাই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, দল নিজে থেকে বামেদের সমর্থন চাইছে না। তবে এটা রাজ্যসভা ভোট। এখানে যে কোনও প্রার্থীকে যে কোনও দলের বিধায়ক ভোট দিতে পারেন। এই নেতারা বলছেন, সংসদে যদি তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোকপাল বিলে সংশোধনী আনতে পারে, তা হলে আব্দুল মান্নান অন্য দলের বিধায়কদের সমর্থন নিতে পারবেন না কেন? ঘটনা হল, রাজ্যসভা ভোটে অন্যান্য রাজ্যে প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হলেও আব্দুল মান্নানের নাম বলা হয়নি। তিনি যাতে সব শিবিরের ভোট পেতে পারেন, সে জন্য সুচিন্তিত ভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অনেকের মত। যদিও ভোট হলে তাঁরা নিজের জোরেই জিতবেন বলে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি। |
মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন আব্দুল মান্নান। সোমবার। ছবি: রাজীব বসু। |
সোমবার দুপুরে বিধানসভার সচিব যাদবলাল চক্রবর্তীর দফতরে মান্নান তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর রাজ্যসভা ভোটের পর্যবেক্ষক তথা এআইসিসি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রামচন্দ্র কুন্তিয়া বলেন, “ভোট জেতার জন্য ঘোড়া কেনাবেচা (হর্স-ট্রেডিং) করি না আমরা। মান্নান জিতবেন, এই বিশ্বাসেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ওঁকে প্রার্থী করেছেন। বামফ্রন্টের সঙ্গে কোনও রকম বোঝাপড়া হয়নি।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেন, “বামফ্রন্টের অতিরিক্ত ভোট আমরা চাইছি না। কংগ্রেসকে সমর্থন করার জন্য বামফ্রন্টের কাছে আমরা কোনও প্রস্তাবও দিইনি। দেবও না।” প্রসঙ্গত, কংগ্রেস রাজ্যসভায় প্রার্থী দিলে জেতার জন্য বামেদের অতিরিক্ত ভোট চাইলে ফ্রন্টে বিষয়টি আলোচনা করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু।
কংগ্রেসের কি প্রার্থী প্রত্যাহারের সম্ভাবনা রয়েছে? জবাবে প্রদীপবাবু বলেন, “রাজ্যসভায় প্রার্থী দেওয়ার জন্য হাইকম্যান্ডকে অনেক বোঝানো হয়েছিল। শেষে তারা প্রার্থী দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। প্রার্থী প্রত্যাহার করার কোনও সম্ভাবনা নেই।” যদিও দলের একাংশের মত, দিল্লি সফররত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রার্থী প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন। তবে রাজ্য কংগ্রেসের পক্ষে আশার কথা, সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ আজ ঘরোয়া আলোচনায় দলীয় নেতাদের বলেছেন, রাজ্যসভার পঞ্চম আসনের জন্য তৃণমূলের থেকে কংগ্রেসের ভোট বেশি রয়েছে। তা হলে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে না কেন? বরং তৃণমূলের উচিত কংগ্রেসকে সমর্থন জানানো। উল্লেখ্য, রাজ্যসভা ভোটে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী বৃহস্পতিবার।
এই অবস্থায় এ দিন পঞ্চম আসনটি নিয়ে তৃণমূলের চিন্তা সামান্য হলেও বেড়েছে। মান্নান মনোনয়ন পেশের কয়েক ঘণ্টা আগেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন দাসপুরের তৃণমূল বিধায়ক অজিত ভুঁইয়া। তাঁর মরদেহ এ দিন বিধানসভা ভবনেও নিয়ে আসা হয়। তাতে পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ অন্যরা মালা দেন। যাবতীয় কর্মসূচি বাতিল করে ১১টাতেই সারা দিনের মতো মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন।
অজিতবাবুর মৃত্যুতে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা এক জন কমে হল ১৮৪। রবিবারই রাজ্যসভা ভোট বয়কট ঘোষণা করেছে বিমল গুরুঙ্গের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বিজেপি সাংসদ হলেও মোর্চার সমর্থনে জেতা যশোবন্ত সিংহ লোকসভায় কার্যত তাদেরই প্রতিনিধি। এ অবস্থায় তৃণমূল যশোবন্তকে অনুরোধ করেছে গুরুঙ্গকে বোঝানোর জন্য, যাতে তাদের বয়কটের সুযোগে কংগ্রেস সুবিধা পেয়ে না যায়। পাশাপাশি, এসইউসি-র একমাত্র বিধায়ক তরুণ নস্কর এবং নির্দল বিধায়ক হামিদুল রহমানের ভোট কারা পাবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, তাদের চতুর্থ প্রার্থী (অঙ্কের হিসেবে তিনটি আসনে তৃণমূলের ও একটি আসনে বামফ্রন্টের জয় নিশ্চিত) যদি কোনও কারণে হেরে যান, তা হলে রাজ্যসভার পরের নির্বাচনে তাঁকে জিতিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। |