দু’পায়ে ছেলের তেমন সাড় নেই। তাই কখনও কোলে, কখনও সাইকেল, রিকশায় ছেলেকে চাপিয়ে মা স্কুলে নিয়ে গিয়েছেন। ডান হাতের বুড়ো আঙুল নেই। তাতেও দমানো যায়নি সেই ছেলেকে। তর্জনী ও মধ্যমার মধ্যে সে পেন ধরেছে।
স্রেফ মনের জোরে এ ভাবেই বছরের পর বছর স্কুলের পরীক্ষায় পাশ করে সোনামুখীর চুয়ামসিনার রাজেশ সাহা এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। সোমবার সোনামুখীর বিধানচন্দ্র হাইস্কুলের পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে এক মুখ হাসি নিয়ে রাজেশ বলল, “বাংলা, ইংরেজি পরীক্ষা ভালই হয়েছে। এ দিন শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। ভাল হয়েছে।” মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৭৯ শতাংশ। তাই এ বারও সে আশায় বুক বেঁধে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। বিধানচন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার গরাই বলেন, “রাজেশ ‘রাইটার’ নেয়নি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ তাই রাজেশকে আধ ঘণ্টা বাড়তি সময় দিয়েছে।” |
রাজেশের বাবা লক্ষ্মীনারায়ণ সাহা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেন, “রাজেশ আমাদের একমাত্র সন্তান। ছোট থেকেই ও সেরিব্রাল পালসি’র রোগী। হাঁটা চলা করতে পারে না। কথা জড়িয়ে যায়। কিন্তু পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা। আমার স্ত্রী অন্নপূর্ণার চেষ্টা আর নিজের ইচ্ছা শক্তির জন্যই রাজেশ এত দূর পড়াশোনা করতে পারছে।” তিনি জানান, চুয়ামসিনার স্কুলে রাজেশ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তারপরে সোনামুখীর বি জে হাইস্কুলে সে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য ভর্তি হয়। বাড়ি থেকে দূর হওয়ায় সোনামুখী শহরের মনোহরতলায় লক্ষ্মীনারায়ণবাবু বাড়ি ভাড়া নেন। গ্রামের স্কুলের মতোই এখানেও অন্নপূর্ণাদেবী ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। পথটা সাইকেল বা রিকশায় গেলেও স্কুলের গেট থেকে ক্লাসঘর পর্যন্ত ছেলেকে তিনি জাপটে ধরে পৌঁছে দিতেন। বছর খানেক আগে তিনি কোলেও তুলে নিয়ে গিয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন, “শুধু পড়াশোনাই নয়, আমার ছেলে ভাল গানও গায়। ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন রয়েছে।” রাজেশও তাই বলে, “ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করতে চাই।” |