সম্পাদক সমীপেষু...
‘দেবী’ ও ‘দাসী’
গত ২৬/২ তারিখের সম্পাদকীয় (‘সম্বোধনের দায়’) প্রতিবেদনে যে ভাবে বাঙালি মেয়েদের সম্বোধন-রীতির অন্তর্নিহিত রাজনীতি প্রসঙ্গে ‘দেবী’ এবং ‘দাসী’ শব্দ দু’টির আপাত বৈপরীত্য তথা মূলগত সাযুজ্যের একটি ছবি আঁকার চেষ্টা হয়েছে, তাতে মানবীবিদ্যাচর্চার হয়তো খানিকটা সুবিধে হবে, কিন্তু সামাজিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিক ভাবে আমি সম্পাদকীয় প্রতিবেদনটির সঙ্গে ভিন্নমত নই। সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ চাইবেন যে, মহিলাদের কুমারীত্ব নিয়ে পুরুষশাসিত সমাজের মাথাব্যথা বন্ধ হোক। কিন্তু দেবী এবং দাসী এই দু’টি শব্দের সাংস্কৃতিক ব্যঞ্জনা কেবলমাত্র এদের সাহিত্যিক ব্যঞ্জনা দিয়ে ব্যাখ্যা করলে চলবে না। শব্দ তথা ধারণার সাংস্কৃতিক ব্যঞ্জনা যে কেবল সাহিত্য থেকেই আসতে পারে, এ ধারণার সীমাবদ্ধতা সর্বজনবিদিত।
এটুকু মানতে অসুবিধে এই যে, বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্ধৃত লেখাগুলিতে দেবী এবং দাসী অভিধা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষশাসিত সমাজের সীমাবদ্ধ চিন্তাধারার প্রতিফলনই রয়ে গিয়েছে। সমস্যা হল, দেবী আর দাসী শব্দ দু’টির একটি সামাজিক ব্যঞ্জনাও রয়েছে এবং এই প্রসঙ্গে জাতিভেদপ্রথার সাংস্কৃতিক ইতিহাসটা এসেই যায়। বিয়ে এবং অন্যান্য সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে, যেখানে পুরোহিত মন্ত্রতন্ত্র পড়েন, কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়েদেরই দেবী সম্বোধনের ওপর একচ্ছত্র অধিকার। শূদ্রের মেয়েমাত্রই দাসী, ব্রাহ্মণের দাসী, স্বামীর তো বটেই। ব্রাহ্মণ পুরুষদের পুরোহিত সম্বোধন করেন দেবশর্মা বলে। অর্থাৎ এঁরা হলেন মর্তের দেবতা। পক্ষান্তরে শূদ্র পুরুষরা পুরুষানুক্রমে দাস, ব্রাহ্মণের দাস।
বিংশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় বেশ কয়েকটি জাতি-আন্দোলন হয়েছিল। তার একটি প্রধান দাবি ছিল যে, তথাকথিত শূদ্র জাতির মহিলাদেরও দেবী সম্বোধনের প্রতি সমান অধিকার দেওয়া হোক। এটা কিন্তু কোনও বিপ্লবী দাবি নয়, দাসী থেকে দেবীতে উন্নীত হয়ে তথাকথিত শূদ্র মহিলাদের পুরুষশাসিত সমাজের হাত থেকে মুক্তি মিলত না! এই পর্যায়ে সম্পাদকীয়টিতে যে ভাবে শব্দ দু’টির গভীরতর পুরুষতান্ত্রিক সাযুজ্যের দিকে নির্দেশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমি একমত। তবে এখানেও দুটো কথা বাকি থেকে যায়। প্রথমত, অবিবাহিত মেয়েদের নামের আগে বাংলার গ্রামেগঞ্জে আজও কুমারী বলতে শেখানো হয়। কলকাতা থেকে পনেরো-কুড়ি কিলোমিটার গেলেই তার বিস্তর উদাহরণ। দ্বিতীয়ত, বিবাহ ইত্যাদি আচার-অনুষ্ঠানে আজও ব্রাহ্মণ মেয়েদের দেবী এবং শূদ্রের মেয়েদের দাসী বলে সম্বোধন করা হয়। কয়েকটি বিয়েবাড়িতে মন্ত্রোচ্চারণের সময় তা শোনা যাবে।
অর্থাৎ, দেবী ও দাসী শব্দ দু’টির দ্যোতনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কথা বলতে গেলে কেবল মানবীবিদ্যাচর্চার সাদামাটা দৃষ্টিভঙ্গি ও তৎসঞ্জাত রাজনীতি যথেষ্ট নয়। জাতিভেদ ও পুরুষতন্ত্রের পারস্পরিক নির্ভরতা তথা পরিপূরকতার আলোচনা না করলে সমস্যাটির জটিলতা অধরা থেকে যাবে। পুরুষতন্ত্র, জাতিভেদ, শ্রেণিবিভাগ এই সমস্ত বিশ্লেষণী কাঠামোগুলিকে সরলীকরণের স্বার্থে আলাদা রেখে দিলে কেবলমাত্র সাদা-কালো ছবিই আমাদের চোখে পড়বে। তাই, দেবী এবং দাসী শব্দ দু’টির সাযুজ্য এবং বিরোধ দুই-ই সমান ভাবে আলোচ্য। একটি ‘আপাত’, আর অন্যটি ‘আভ্যন্তরীণ’ নয়। এদের ‘আপাত-ত্ব’ কিংবা ‘আভ্যন্তরীণতা’ ভীষণ ভাবে প্রেক্ষিতসাপেক্ষ। প্রেক্ষিত, তা ঐতিহাসিক হতে পারে, রাজনৈতিক হতে পারে, আবার সামাজিক, ঔপচারিক, অর্থনৈতিক ও এদের বহুবিধ সমাহারও হতে পারে। ফরাসিরা তাদের মেয়েদের কুমারীত্ব বিষয়ে আর ততটা উদ্বিগ্ন নয় জেনে ভাল লাগল। কিন্তু একুশ শতকের বাঙালি ছেলেমেয়েও বিয়ের সময় মন্ত্রে জাতিভেদ নিয়ে মাথা ঘামায় না, এটা বোধহয় জানানো দরকার।
বাড়ি ফাটছে, কেউ দেখার নেই
প্রাণ ওষ্ঠাগত (১৩-২) শীর্ষক চিঠিতে লেখক যে অভিযোগ করেছেন, তারই আর এক নিদর্শন আমাদের দক্ষিণ কলকাতার কসবা ৬৭ নং ওয়ার্ড-এর অন্তর্গত বেদিয়াডাঙা সেকেন্ড লেন অধুনা নিউ বালিগঞ্জ রোড। আমরা যখন এখানে বাড়ি করেছিলাম তখনও ইস্টার্ন বাইপাস-কসবা কানেক্টর তৈরি হয়নি। বেদিয়াডাঙা সেকেন্ড লেনও কাঁচা খাল-বিলে ভরা ছিল। তার পর কসবা-রাসবিহারী কানেক্টর হল। বেদিয়াডাঙা সেকেন্ড লেনও পাকা হল। পাকা মানে খোয়া ছড়িয়ে তার উপর পিচ-মাখানো স্টোন চিপস ছড়িয়ে রোলার চালিয়ে পাকা রূপ দেওয়া হল। জলের পাইপ লাইনও তৈরি হল।
ব্যস, এই নবকলেবরে বেদিয়াডাঙা যুক্ত হল কসবা-রাসবিহারী কানেক্টরের সঙ্গে। সঙ্গে সঙ্গে এই রাস্তাটাই হল কসবা রেলওয়ে সাইডিং এবং কসবা রাসবিহারী কানেক্টরে পৌঁছে যাওয়ার একমাত্র যোগসূত্র এবং শর্ট কাট। রাস্তাটা উপরে পাকা রং হলেও ভিতরটা ফোঁপরা। এতে বড়জোর সাধারণ গাড়িঘোড়া, মোটরগাড়ি চলতে পারে। কিন্তু ভারী বা খুব ভারী যানবাহন চলাচল করার মতো ক্ষমতা এর নেই। তা সত্ত্বেও এই দুর্বল, ভঙ্গুর রাস্তাটার উপর দিয়ে কতিপয় স্টোন চিপস সরবরাহকারী ব্যবসায়ী তাঁদের প্রয়োজনের তাগিদে কসবা সাইডিং থেকে স্টোন চিপস বোঝাই ট্রাক লোড করে দিনরাত চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেনযেগুলির ওজন ১০, ১২, ১৪ টন এমনকী ফুল পঞ্জাব ১৬ টন পর্যন্ত ট্রাকও দিনরাত চলছে। কোনও প্রতিকার নেই। ফলে রাস্তা ফাটছে, নীচে জলের পাইপ লাইনেও ফাটল ধরছে। রাস্তার দু’ধারের বাড়িগুলো কাঁপছে। ফাটল ধরছে। এমন কোনও বাড়ি নেই যাতে ফাটল ধরছে না বা ধরেনি। দিনরাতের কোনও ফারাক নেই। এদের ভীষণ গর্জনে শব্দদূষণ ও পরিবেশদূষণ ঘটছে। এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পথ চলাও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
এলাকার নাগরিকরা বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় থানার আধিকারিকদের সঙ্গে বা লরি মালিকদের সঙ্গে মিটিং করেছি, অঞ্চলের এম এল এ এবং পুরপ্রধানের কাছে দরখাস্ত দিয়েছি। কোনও ফল হচ্ছে না। কিছুই কি করা যায় না, যাতে বাড়িগুলো বাঁচে। রাস্তা ফাটলে পুরসংস্থা তালি দিয়ে মেরামত করে দিচ্ছে। বাড়ির ফাটল কে মেরামত করবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.