সম্পাদকীয় ১...
তালিকা-ই-দারিদ্র
র্থমন্ত্রীর বাজেট ভাষণে দারিদ্র হ্রাস, সামাজিক ন্যায় এবং উন্নয়নের যে চিন্তা প্রকাশিত, তাহার কেন্দ্রে রহিয়াছে অপচয় নিবারণ করিবার তাগিদ। রাষ্ট্রের সম্পদ সীমিত, তাহা অপাত্রে পৌঁছাইলে দরিদ্রেরও উপকার হয় না, অর্থও নষ্ট হয়। সুতরাং যথাযথ প্রাপক নিশ্চিত করিয়া কেবল তাহার নিকট তাহার প্রাপ্য সহায়তা নিশ্চিত ভাবে পৌঁছাইতে হইবে, এই দৃষ্টিভঙ্গি লইয়া কেন্দ্র কাজ করিতেছে। তাহার জন্য ‘আধার’ প্রকল্পটি বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। অর্থমন্ত্রী জানাইয়াছেন, ইতিমধ্যেই ২০ কোটি মানুষের নাম ‘আধার’ প্রকল্পে নথিভুক্ত হইয়াছে, আগামী এক বৎসরে আরও ৪০ কোটি নাম নথিভুক্তির জন্য তিনি অর্থ বরাদ্দ করিয়াছেন। ইহার ফলে গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প, বার্ধক্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্কলারশিপ প্রভৃতি অনুদান সরাসরি প্রাপকের নিকট পৌঁছাইয়া যাইবে। কম্পিউটার-প্রশাসন বা ‘ই-গভর্নেন্স’ দিয়াও দুর্নীতি এবং অপচয় রোধ করিবার চেষ্টা চলিতেছে। কৃষির ক্ষেত্রে সারে ভর্তুকির টাকা খুচরা ব্যবসায়ীর নিকট, এবং সেখান হইতে চাষির নিকট পৌঁছাইল কি না, মোবাইল ফোন-নির্ভর ব্যবস্থার দ্বারা তাহার নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি হইবে। রান্নার গ্যাস এবং কেরোসিনের ক্ষেত্রেও কী করিয়া সরকারি ভর্তুকি সরাসরি ‘আধার’ কার্ডধারী দরিদ্র পরিবারগুলির নিকট পৌঁছানো যায়, তাহা বুঝিতে নানা পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু হইয়াছে। অতএব আগামী দিনে রাষ্ট্রের সম্পদ প্রকৃত দরিদ্রের নিকট পৌঁছাইবার ব্যবস্থা সুপরিকল্পিত, সহজ এবং সুনিশ্চিত হইবে, এমনই আশা অর্থমন্ত্রী দিয়াছেন।
প্রশাসনিক সংস্কার করিবার প্রচেষ্টা প্রশংসা দাবি করিতে পারে। প্রথমত, প্রশাসনের কাজে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ হইতেছে। খাদ্য, সার, জ্বালানি, সকল বিষয়ে বৈদ্যুতিন তথ্য সংরক্ষণ এবং সম্প্রচার আবশ্যক করিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে তৎপর এবং কার্যকর হইবে। সরকারি দফতর মানেই পুরাতন, ময়লা ফাইলের স্তূপ, এই পরিচিত দৃশ্য ঘুচিবে, একবিংশের উপযুক্ত প্রশাসন পাইবে ভারত। প্রযুক্তির প্রয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক নানা দুর্বলতা কাটাইয়া ওঠা সম্ভব, যাহার ফলে সরকারি পরিষেবা উন্নত হইতে পারে। দ্বিতীয়ত, ইহাতে প্রশাসনে স্বচ্ছতা আসিবে, দুর্নীতি কমিবে। চোর যেমন রাত্রের অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়াই চুরি করিতে অভ্যস্ত, তেমনই সরকারি তথ্যের অস্বচ্ছতা, নিরেট দুর্ভেদ্যতা, বিরলতার সুযোগ লইয়াই রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মচারীরা রাজকোষ শূন্য করিয়া থাকে। কত টাকা কোথায় যাইতেছে, কে কবে তাহা পাইয়াছে, তাহার পরিসংখ্যান সহজলভ্য এবং সর্বত্রলভ্য হইয়া গেলে দুর্নীতির সুযোগ কমিয়া যাইবে, ঝুঁকি বাড়িয়া যাইবে। প্রতিটি প্রকল্পের হিসাব জনসমক্ষে তুলিয়া ধরিবার কাজটি দেরি করিয়া হইলেও শুরু হইয়াছে, ইহা আশ্বস্ত করে।
কিন্তু কে দরিদ্র, সে কী কী পাইল, তাহা নির্দিষ্ট করিবার প্রতিই যদি সরকারের অধিকাংশ মনোযোগ নিবিষ্ট হয়, তাহাতে অন্য প্রকার উদ্বেগ জন্ম লয়। দারিদ্রের যাহা মূল লক্ষণ অপুষ্টি, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য, তাহা এতই ব্যাপক যে ‘গরিব’ বাছিতে গেলে গাঁ উজাড় হইবে। বরং দারিদ্রসীমার তালিকা লইয়া যে রাজনীতি চলিতেছে, তাহা তীব্রতর হইবে, এমন আশঙ্কা যথেষ্ট রহিয়াছে। বহু ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় তালিকা-বহির্ভূত দরিদ্র পরিবারগুলি কিছু কিছু সরকারি সাহায্য পাইয়া থাকে, এখন হইতে সে সুযোগ আর থাকিবে না। প্রশাসনে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার প্রয়োজন, কিন্তু প্রযুক্তি-সর্বস্ব প্রশাসন কাম্য নহে। দারিদ্র কমাইবার কাজটি রাজনীতির, তাহা অর্থনীতি কিংবা প্রযুক্তির বিশেষজ্ঞের নহে। যাহারা ‘আধার’ প্রকল্পে দরিদ্র বলিয়া চিহ্নিত নহে, তাহাদের জীবন উন্নত করিবার কাজটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অর্থের অপচয় কাম্য নহে, কিন্তু মানব সম্পদের অপচয় আরও ভয়ানক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.