অগ্রদ্বীপেই জেলার গঙ্গাসাগর
ক্ত গোবিন্দ ঘোষের পারলৌকিক কাজ করেছিলেন শ্রীচৈতন্য নিজেই। গোপীনাথ বেশ ধরে গিয়েছিলেন সেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে। অগ্রদ্বীপে প্রচলিত কাহিনি এটাই। তবে, চৈতন্যদেবকে ঘিরে এমনই নানা কাহিনি গড়ে উঠেছে। ইতিহাসে সেই সব কাহিনির সমর্থন অনেক সময়েই মেলে না। কিন্তু ভক্তেরা বিশ্বাস করেন। কাটোয়া এমনিতেই চৈতন্যজীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদ। প্রায় পাঁচ শতাব্দী পরে সেখানে এখন ফি বছর চৈত্র মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে মেলার চেহারা নিয়েছে ওই অনুষ্ঠান। এক সময় এই মেলা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকে পরিচালিত হত। এখন অবশ্য মেলা পরিচালনা করেন গ্রামের বিশিষ্টজনেদের নিয়ে গঠিত মেলা কমিটি।
গোপীনাথ মেলার ছবিটি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই মেলা এখন অবশ্য তার নিজের পরিচয় তৈরি করে নিয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে বৈষ্ণব শিষ্যেরা এসে আখড়া বাঁধেন মেলার মাঠে। পুণ্যতিথিতে ভাগীরথীতে স্নান করেন লক্ষাধিক মানুষ। বসে বাউল গানের আসর। গঙ্গাসাগর মেলায় সাধক বাউল থেকে আমজনতা আখড়া বেঁধে রাতভর অপেক্ষা করেন ‘পুণ্য মুহূর্তে’ স্নান করার জন্য। এখানেও তেমনটাই হয়। এ ছাড়াও যে কোনও গ্রামীণ মেলার মতোই হরেক জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসা দোকান আর নাগরদোলা। তবে আখড়া-ই কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে গোপীনাথ মেলাকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। স্থানীয়দের কাছে এই মেলা ‘ঘোষ ঠাকুরের মেলা’ বলেও পরিচিত।
রাজ্যের ভাঙন-মানচিত্রে অগ্রদ্বীপ এক সময় পরিচিত নাম ছিল। ভৌগোলিক ভাবে গ্রামটি অবস্থিত ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে। সড়ক পথে যোগাযোগ রয়েছে নদিয়ার কালীগঞ্জ ও নাকাশিপাড়া এলাকার সঙ্গে। ভাঙনের ফলে অগ্রদ্বীপ-বেথুয়াডহরি রাজ্য সড়ক ভাগীরথীর গর্ভে চলে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়ায় বেশ কয়েক বছর গোপীনাথ মেলায় ভিড় বেশ কম হচ্ছিল। এ বছর ওই রাস্তা ফের চলাচলের উপযোগী হয়েছে। মেলায় নেমেছে মানুষের ঢল। পুলিশের হিসেব মতো প্রথম দু’দিনেই প্রায় চার লক্ষ মানুষ মেলায় হাজির হয়েছিলেন।
রবিবার থেকে মেলা শুরু হয়েছে। খাতায় কলমে মেয়াদ তিন দিনের। ৩০ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে মেলা অবশ্য চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। রাজ্যের তো বটেই ভিন রাজ্যের মানুষজন, সাধুর দল হাজির মেলায়। অগ্রদ্বীপ গ্রামের বাসিন্দা তথা, স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুধীর বিশ্বাসের দাবি, “গত দু’বছর মেলায় আসা দর্শনার্থীদের চেয়ে এ বার তো রবিবার রাতেই অনেক বেশি মানুষ এসেছিলেন।”
তিথি নক্ষত্র মেনে মেলা হয়। তাই প্রতি বছরই এই সময় মেলার মধ্যেই চলে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক আবার কোনও কোনও বছর ভোট। এই সব কারণেই মেলাকে ‘সরকারি ভাবে অনুমতি’ দিতে পারে না প্রশাসন। তবে মেলা কমিটির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে কসুর করে না পঞ্চায়েত বা ব্লক প্রশাসন।
নিজস্ব চিত্র।
মেলা শুরুর আগে কাটোয়া ২-এর বিডিও নির্মলকুমার দাসের আহ্বানে অগ্রদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েত, কাটোয়া থানা, নাকাশিপাড়া থানাকে নিয়ে সুষ্ঠু ভাবে মেলা পরিচালনা করার জন্য বৈঠক হয়েছে। কিন্তু মেলা ঘুরে বহু সমস্যা চোখে পড়ল। কয়েক লক্ষ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা বেশ অপ্রতুল। একটাও অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি হয়নি। বাধ্য হয়ে ভাগীরথীর তীরেই প্রাকৃতিক কাজকর্ম সারছেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, “প্রশাসনের এ সব দিকে নজর দেওয়া উচিত।” প্রশাসনিক কর্তাদের অবশ্য দাবি, “ফি বছর ১০০টির উপর অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি হত। কিন্তু কোনও দর্শনার্থীই ব্যবহার করতেন না। এ বছর আর তাই শৌচাগার তৈরি করা হয়নি।” তবে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থায়ী ভাবে বসেছে ৩৭টি নলকূপ।
মেলা ঘুরে গিয়েছেন কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, নাদনঘাটের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন দেবনাথেরা। তাঁদের দু’জনেরই দাবি, “এত মানুষের ভিড় হয় যে মানুষের স্বার্থেই সরকারের উচিত মেলায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করা।” পুরো মেলা জুড়ে চলছে হুকিংয়ের দৌরাত্ম্য। নেই অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা। তার উপরে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার চলছে ভাগীরথীতে। কাটোয়া ২ বিডিও নির্মলকুমার দাসের অবশ্য জবাব, “প্রয়োজন হলে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসবে। এ বছর বেশ কিছু হুকিং খুলে দেওয়া হয়েছে। নৌকা যথেষ্টই আছে।”
আসলে অন্য সকলের মতো প্রশাসনও জানে, যত অসুবিধাই হোক, আর পারাপারের ঝুঁকি থাকুক, মানুষ এই মেলায় আসবেনই। গোপীনাথের মেলা যে বর্ধমানের ‘গঙ্গাসাগর মেলা’!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.