কোচবিহারের খাগড়াবাড়ির তৃণমূল নেতা শরৎচন্দ্র রায়ের (৫৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে খুনের ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও অভিযুক্তরা কেউই ধরা পড়েনি। এমনকী খুনের ঘটনায় কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে ওই খুন তা নিয়েও রহস্যের জট খোলেনি। শনিবার রাতে কোতোয়ালি থানার খাগরাবাড়ির তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শরৎবাবু একা বাড়ি ফেরার সময় দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন। খাগরাবাড়ির দলীয় অফিস থেকে বালাপাড়া এলাকায় বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। বাড়ির কাছেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। গুলির শব্দ পেয়ে বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে রক্তাক্ত শরৎবাবুকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
খুনের প্রতিবাদে রবিবার সকাল ৬ টা থেকে খাগরাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের ডাকে বারো ঘন্টার বনধ পালিত হয়। শরৎবাবুর পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই অভিযোগে নির্দিষ্ট করে কারও নাম উল্লেখ নেই। তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২ রাউন্ড খালি কার্তুজ উদ্ধার করেছে। মোটর সাইকেল নিয়ে এসে ২-৩ জনের দুষ্কৃতীরা শরৎবাবুর ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “মৃতের পরিবারের তরফে দেওয়া অভিযোগে সুনির্দিষ্ট করে কারও নাম নেই। সমস্ত সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তদন্ত হচ্ছে।” |
মৃতের ছেলে জয়ন্তবাবু এদিন বলেন, “বাবার কোনও শত্রু ছিল না। বাড়ির কাছে তাঁকে গুলি করে খুন করা হবে ভাবতে পারছি না। আমরা তদন্ত চাই।” সেই সঙ্গে তাঁর সন্দেহ, অঞ্চল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে কিছুদিন আগে এলাকায় উত্তেজনা হয়েছিল। তার জেরেও খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ওই সন্দেহের কথা পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে কেন উল্লেখ করা হয়নি তা নিয়ে বাড়ির কেউ মুখ খুলতে চাননি। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি খাগরাবাড়ি অঞ্চল সভাপতি নির্বাচনে ১৯ টি ভোট পেয়ে জয়ী হন শরৎবাবু। ওই দিন সম্মেলন কক্ষে ব্যাপক গোলমাল হয়। শরৎবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী মণীন্দ্রনাথ সরকার পান ১৮ টি ভোট। এদিন মণীন্দ্রনাথবাবু দাবি করেন, “আমাদের মধ্যে বিরোধের ব্যাপারই ছিল না। বনধের বিরোধিতায় দুজনে একসঙ্গে মিছিলও করেছিলাম। তবে সভাপতি নির্বাচনের দিন ভোট নিয়ে অভিযোগ ওঠায় প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়ার কথা বলেন ব্লক সভাপতি। সেই
|
শরৎচন্দ্র রায়। |
নিরিখে আমিই দলের অঞ্চল সভাপতি।” খুনের ঘটনার পিছনে বামপন্থীদের চক্রান্ত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে এই ব্যাপারে তিনিও এখনও পুলিশকে কিছু জানাননি। মণীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এটা আমার সন্দেহ। নিশ্চিত হয়েই পুলিশকে জানাব।” প্রদেশ তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল আহমেদ অবশ্য সাফ বলেন, “এক ভোটে জিতে শরতবাবুই অঞ্চল সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে ওই খুনের ঘটনা ঘটেনি। যাঁরাই ওই খুনের ঘটনায় জড়িত হোক না কেন, পার পাবে না।” বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনও বলেন, “কর্মকর্তা নির্বাচনে ভোটাভুটি হতে পারে। প্রাথমিক ভাবে পরিবারের লোকজনদের কিছু মনে হতেই পারে। তবে গোষ্ঠী কোন্দলের ব্যাপার এটি নয়। পুরো ঘটনা নিয়ে আমরাও দলীয় ভাবেও তদন্ত করব।” খাগরাবাড়ির বালাপাড়ার বাসিন্দা শরৎবাবু গোপালপুর এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে ছোট জয়ন্ত রায় বিএসএফের জওয়ান। তিনি কাশ্মীরে কর্মরত। একমাসের ছুটি নিয়ে সম্প্রতি বাড়িতে আসেন। ঘটনার খবর পেয়ে তার দাদা বিএসএফ জওয়ান অচিন্ত্যবাবু বেঙ্গালুরু থেকে রওনা হয়েছেন। রাতে খুনের ঘটনার পর থেকে ঘন ঘন মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মৃতের স্ত্রী প্রমীলা দেবী। শোকের আবহ গোটা গ্রামে। বনধেও সুনসান ছিল এলাকা। এদিন ময়না তদন্তের পরে শরৎবাবুর দেহ কোচবিহারে দলের দফতরে আনা হয়।
|