বিতর্ক উস্কে দিলেন ব্রাত্য
ধর্মঘটে কাজে না আসার অধিকার আছে
র্মঘটের দিনে কর্মস্থলে সরকারি কর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার বামেদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের দিনে কাজে উপস্থিতি ‘আবশ্যিক’ করে তাঁর প্রশাসন নির্দেশিকাও জারি করেছিল। অথচ তাঁরই শিক্ষামন্ত্রী রবিবার জানিয়ে দিলেন, ধর্মঘটের দিনে কর্মীদের কাজে আসার অধিকার যেমন রয়েছে, তেমন না-আসারও অধিকার আছে! যে মন্তব্যকে ধর্মঘট মোকাবিলার প্রশ্নে রাজ্য সরকারের অন্দরের ‘ভিন্ন সুর’ হিসেবে দেখছে প্রশাসন ও রাজনীতিকমহলের একাংশ।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ডাকা ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটে রাজ্য সরকারি কর্মীরা যাতে যথারীতি কাজে আসেন, সে জন্য রীতিমতো নির্দেশিকা জারি করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ধর্মঘটের দিন কাজে না-এলে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে চাকরিতে ছেদও পড়তে পারে। বস্তুত মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন ‘কড়া অবস্থানের’ সুবাদেই সে দিন মহাকরণে কর্মী-হাজিরা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, সাম্প্রতিক কালের মধ্যে যাকে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে ধরা যায়।
পাশাপাশি যাঁরা সে দিন কাজে আসেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। ধর্মঘটের দিনে অনুপস্থিত থাকা কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে পরের দিন, অর্থাৎ বুধবারই (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন দফতরের প্রধানদের উদ্দেশে নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। বিভিন্ন দফতর অনুপস্থিত কর্মীদের তালিকা বানিয়েও ফেলেছে। ধর্মঘটের দিনে যে সব শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী কাজে আসেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে শিক্ষা দফতর কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, এ দিন মৌলানা আজাদ কলেজের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এবং তার উত্তর দিতে গিয়ে ব্রাত্যবাবু যা বলেছেন, তাতে ‘বিতর্কে’র যথেষ্ট ইন্ধন রয়েছে বলে শাসক শিবিরেরই একাংশ মনে করছে। কী বলেছেন মন্ত্রী?
তালিকা আমি এখনও তৈরি করিনি।
আমি গোয়েন্দাগিরি করতে পারব না।
ব্রাত্য বসু
উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, ধর্মঘটের দিনে স্কুল-কলেজে গরহাজির থাকা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর তালিকা তৈরির কাজ শুরুই হয়নি। এ দিন ‘অল স্টেট গভর্নমেন্ট কলেজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভায় উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, “ওই দিন বেশির ভাগ স্কুলেই প্রায় ৯৯% শিক্ষক এসেছেন। হয়তো মাত্র ১% আসেননি। এঁদের তালিকা আমি এখনও তৈরি করিনি। আমি গোয়েন্দাগিরি করতে পারব না।” শুধু তা-ই নয়, ধর্মঘটে যোগ দেওয়া বা না-দেওয়ার অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে ব্রাত্যবাবু মন্তব্য করেন, “ধর্মঘটের দিন কর্মীরা আসতে পারেন। না-ও আসতে পারেন। ধর্মঘটের দিনে আসার এবং না-আসার অধিকার রয়েছে কর্মীদের।”
ধর্মঘট নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব যেখানে ‘অত্যন্ত কড়া’, সেখানে তাঁরই সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর মুখে এ হেন মন্তব্য শুনে আশেপাশে উপস্থিত কলেজ-শিক্ষকেরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করে দেন। পরিস্থিতি বুঝে মন্ত্রী তাঁদের উদ্দেশে বলেন, “এ সব ব্যাপার এখানে বলার কথা নয়। আমার দফতরে আসুন, কথা হবে।” প্রসঙ্গত, ধর্মঘটে যোগ দেওয়া বা না-দেওয়ার ‘অধিকার’ সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন যা বলেছেন, সেটাই আগে বলেছিলেন বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র।
শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের সম্ভাব্য একটা ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে। কী সেটা? শিক্ষা-প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি: ধর্মঘটের দিনে কাজে আসার ক্ষেত্রে অন্য সরকারি কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষকদের, বিশেষত স্কুল-শিক্ষকদের একটা তফাত রয়েছে। অন্যান্য সরকারি অফিসে মঙ্গলবারটা ছিল আর পাঁচটা দিনের মতো। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলে এখন মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। ধর্মঘটের দিন, অর্থাৎ, ২৮ তারিখে কোনও পরীক্ষা ছিল না। শুধু সরকারি নির্দেশ মান্য করতেই দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষকদের স্কুলে এসে সই করে আবার ফিরে যেতে হয়েছে। কারণ, অধিকাংশ জায়গায় পড়ানোর জন্য পড়ুয়া ছিল না। এই ঘটনায় শিক্ষক সমাজের একাংশে ‘বিরূপ’ প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি হয়েছে, যার আঁচ শিক্ষামন্ত্রী পেয়ে থাকতে পারেন বলে সূত্রের ইঙ্গিত। প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, ওই প্রতিক্রিয়াকে কিছুটা প্রশমিত করার লক্ষ্যেই মন্ত্রীর এই মন্তব্য।
কিন্তু ধর্মঘটের দিন কাজে আসা বা না-আসার অধিকার সম্পর্কে ব্রাত্যবাবুর এই মন্তব্য কি রাজ্য সরকারের মনোভাবের ‘পরিপন্থী’ নয়? ধর্মঘটের দিনে উপস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কর্মীদের উদ্দেশে প্রথম হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। পূর্ণেন্দুবাবু এ দিন বলেন, “আমি ওঁর (শিক্ষামন্ত্রী) বক্তব্য শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে দফতরে আলোচনা করবেন বলেও উনি জানিয়েছেন। উনি আলোচনা করতে চাইলে আমরা শুনব।” তবে শ্রমমন্ত্রীর দাবি, “সরকার বা প্রশাসনের নীতি-বিরোধী কিছু ওঁর (শিক্ষামন্ত্রীর) এ দিনের কথায় ছিল না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.