টিচার ইনচার্জের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বাঁকুড়ার ইঁদপুর ব্লকের শালডিহা কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক নির্মল মিশ্র। ওই কলেজের ২২ জন শিক্ষক তাঁকে কয়েক দিন ধরে টিচার ইনচার্জ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। শনিবার কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বাঁকুড়ার জেলাশাসকের কাছে নির্মলবাবু তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। কলেজের পরিচালন সমিতির সহসভাপতি তথা মহকুমাশাসক (খাতড়া) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “নিমর্লবাবু পদগত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে শুনেছি। পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ইতিহাসের শিক্ষক নির্মলবাবু ১ জানুয়ারি থেকে ওই কলেজের টিচার ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন। কলেজে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করায় নির্মলবাবু শিক্ষকদের বিষ নজরে পড়েন বলে অভিযোগ। নির্মলবাবুর অভিযোগ, “শুক্রবার কলেজের শিক্ষক শেখ সিরাজউদ্দিনের নেতৃত্বে অন্য শিক্ষকেরা আমাকে অবিলম্বে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। বাধ্য হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।” যদিও তিনি ‘পারিবারিক ও মানসিক চাপে’ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে তাঁর ইস্তফাপত্রে। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আমি আর বিরোধে যেতে চাইছি না। তাই ওঁদের দাবি মতো পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।”
নির্মলবাবুর অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ওই কলেজের শিক্ষকেরা। কলেজের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক শেখ সিরাজউদ্দিন, বাংলার শিক্ষক বিধান মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “কলেজে আমরা সময় মতো আসা-যাওয়া করি। টিচার ইনচার্জ পদে নির্মলবাবু ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ইস্তফা দিতে চাইছেন। আমরা চাপ দিয়ে তাঁকে পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করিনি।” কলেজ টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক মানিকলাল দাসের দাবি, “কলেজের অন্য শিক্ষকদের বদনাম করার জন্যই তিনি উল্টোপাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। তাঁকে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য কেউ চাপ দেয়নি। পুরোটাই মিথ্যা।”
অন্য দিকে, এই বিষয়টিকে নিয়েও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক গোষ্ঠী টিচার ইনচার্জকে সমর্থণ করেছেন। আর এক গোষ্ঠী শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইঁদপুর ব্লক তৃণমূল নেতা স্বপন গোস্বামী বলেন, “কলেজের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কিছু কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় তাঁদের বিষ নজরে পড়েছেন নির্মলবাবু। তাই তাঁরা নির্মলবাবুকে পদ থেকে সরাতে চাইছেন।” দলের অন্য গোষ্ঠী রামদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নির্মলবাবু কলেজের কাজ ঠিক মতো করতে পারছেন না। তাই তাঁর উচিত স্বেচ্ছায় টিচার ইনচার্জ পদ থেকে সরে দাঁড়ানো।” কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য তথা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মোহন কর অবশ্য বলেন, “সরকারি নিয়মে নির্মলবাবু মাত্র দু’মাস আগে টিচার ইনচার্জ পদে নিযুক্ত হন। এখন কলেজের কিছু শিক্ষক তাঁকে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। চাপের মুখে তিনি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |