যে অনুষ্ঠানে তিনি নিজে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তারই আয়োজকদের বিরুদ্ধে শব্দবিধি ভাঙার অভিযোগে পুলিশকে মামলা করার নির্দেশ দিলেন খোদ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘটনাচক্রে সেই আয়োজকেরা তাঁরই দলের সমর্থক বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলার সময়ে মাইক বাজানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের। অভিযোগ, সেই নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রবিবার খিদিরপুরে একটি রক্তদান শিবিরে মাইক বাজান অনুষ্ঠানের আয়োজক, স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকেরা। এলাকার মানুষের আপত্তি তাঁরা শোনেননি বলেও অভিযোগ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুরমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের মাইক বন্ধ করতে বলি। পুলিশকেও একটি মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছি।” তবে, মন্ত্রী এ কথা বললেও রবিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনও মামলা রুজু করেনি পুলিশ। ডিসি (বন্দর) মেহবুব রহমান বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, খিদিরপুরের ভূকৈলাস রোডে স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকেরা শনিবার ও রবিবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন। সেই উপলক্ষেই এলাকা জুড়ে একাধিক মাইক লাগান আয়োজকেরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার মাইক বাজানো না হলেও রবিবার সকাল থেকেই মাইক বাজতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একাধিক বার মাইক বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হলেও তাতে কান দেননি আয়োজকেরা। তবে পুলিশ জানায়, এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ ভাঙা হলেও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনও মামলা দায়ের করেনি। তবে, মন্ত্রী বলা সত্ত্বেও পুলিশ কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।
মাইক বাজানোর কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন অনুষ্ঠানের আয়োজক, বন্দর এলাকার তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ লালা। তিনি বলেন, “রক্তদানের গুরুত্ব এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা ঘোষণার জন্যই এলাকায় মাইক বাজানো হয়েছিল।” পাশাপাশি তাঁর সাফাই, সকালে অল্প কিছুক্ষণের জন্যই মাইক বেজেছিল। পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, মন্ত্রীর নির্দেশ মেলার পরে মাইক বন্ধ করে দেন আয়োজকেরা। মন্ত্রী নিজেও মাইক ছাড়া বক্তৃতা করেন।
পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, পরীক্ষা চলার সময়ে মাইক বাজানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তা পাঠানো হয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তাকে। তবে, এ দিনের ঘটনা নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। এমন অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” পাশাপাশি, খিদিরপুরের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশই ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁর বিশ্বাস। |