|
|
|
|
|
বড় লগ্নি বাজেটের পরে করাই ভাল অমিতাভ গুহ সরকার |
|
বাজারের অবস্থা অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনীতির মতো। বুল এবং বেয়ার উভয়েই শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত। ফলে বাজার দিশাহীন।
অনেকটা ওঠার পর খানিকটা পড়েছে সেনসেক্স ও নিফ্টি। নিম্নমুখী আর্থিক বৃদ্ধির হারের তথ্যে বাজার কিছুটা শঙ্কিত। কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচনের বুথ ফেরত সমীক্ষা আদৌ স্বস্তি জোগায়নি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস জোট সরকারকে। এতেও অস্বস্তি আছে বাজারের। ফলাফল প্রকাশের উত্তেজনা মিলিয়ে যেতে না যেতেই শুরু হয়ে যাবে সংসদের বাজেট অধিবেশন। বাজার এই সব নিয়ে যখন উত্তাল থাকবে, তখনই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি পর্যালোচনা করার কথা। ১৪ তারিখ রেল বাজেট, ১৫ তারিখ ঋণনীতি এবং ১৬ মার্চ কেন্দ্রীয় বাজেট। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, এই ৩ দিন উত্তেজনা কোথায় পৌঁছবে। ভাল-মন্দ দুইয়েরই সম্ভাবনা আছে। এই কারণে এখনই বড় ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাইছেন না অনেকে। বিদেশি লগ্নিকারীরা এই পরিস্থিতিতে কী করেন, তা-ই এখন দেখার। গ্রিসের অবস্থা এখন অনেকটা ভাল। বাজারের পক্ষে এটা শুভ। সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী কয়েক দিন বাজার কেমন ব্যবহার করবে, তা এখনই জোরের সঙ্গে বলা যাচ্ছে না। অর্থাৎ বড় লগ্নির সিদ্ধান্ত ১৬ তারিখ পর্যন্ত দেখে নিয়ে করাই ভাল। ৬ থেকে ১৬ চোখকান খোলা এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখা খুব প্রয়োজন।
আসা যাক করের কথায়। সংসদের আর্থিক বিষয়ক স্থায়ী কমিটি করহীন ন্যূনতম আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টাকা করা এবং কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২.৫ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। চলতি সপ্তাহেই এই প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করা হতে পারে। এই প্রস্তাবের কতটা সরকার গ্রহণ করে তা জানার জন্য বাজেটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আয়কর রিটার্ন দাখিল করার ব্যাপারেও কিছু ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (সি বি ডি টি)। পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০১১-’১২ সালে যাঁদের আয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, তাঁদের ২০১২-১৩ হিসাব-বর্ষের জন্য কোনও রিটার্ন দেওয়ার প্রয়োজন নেই, যদি তাঁরা কিছু শর্ত পূরণ করে থাকেন। শর্তগুলি হল:
(১) মোট আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি হবে না।
(২) আয়ের উৎস শুধু মাত্র বেতন এবং সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত সুদ ছাড়া আর কিছু হবে না।
(৩) প্যান নম্বর নিয়োগকর্তাকে জানাতে হবে
(৪) সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের অঙ্ক নিয়োগকর্তাকে জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা তা থেকে উৎসমূলে কর (টি ডি এস) কেটে নেবে
(৫) নিয়োগকর্তা সংশ্লিষ্ট কর্মীকে সব তথ্য সংবলিত ফর্ম-১৬ প্রদান করবে
(৬) ওই কর্মীর আর কোনও কর দেয় থাকবে না
(৭) ওই বছরের জন্য কোনও কর ফেরতের প্রশ্ন থাকবে না
(৮) একটি মাত্র সংস্থা থেকে বেতন পেয়ে থাকা চাই।
এই শর্তগুলি মানলে অনেকেই হয়তো রিটার্ন দাখিল করা থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন। কিন্তু সমস্যা হল, অনেক ব্যাঙ্কই সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ প্রদান করে (দ্বিতীয় অর্ধের জন্য) ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসে। বেশ কিছু সংস্থা কর্মীদের করের হিসাব এর আগেই করে ফেলে। এই সব ক্ষেত্রে শর্ত মানা শক্ত হতে পারে। অন্য দিকে রিটার্ন না ফাইল করারও সমস্যা আছে। বিদেশে যাওয়ার জন্য ভিসা এবং ব্যাঙ্কে কোনও ঋণের জন্য আবেদন করলে সাধারণত আবেদনকারীর আয়কর রিটার্নের প্রতিলিপি চাওয়া হয়। রিটার্ন ফাইল করা না হলে এই সব ব্যাপারে অসুবিধা হতে পারে। উপযুক্ত ক্ষেত্রে মানুষ যাতে রিটার্ন ফাইল করা থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন, তার জন্য ব্যাঙ্কগুলির উচিত হবে, জানুয়ারি মাসের মধ্যে সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ দিয়ে দেওয়া।
পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ২৯ হাজার টাকা স্পর্শ করে সপ্তাহ-শেষে নেমে এসেছে ২৮,২৭৫ টাকায়। ভাল লগ্নির জায়গা হয়ে ওঠায় নিয়মিত ওঠাপড়া দেখা যাচ্ছে সোনা ও রুপোর বাজার দরে। মতিলাল অসওয়াল মিউচুয়াল ফান্ড গত সপ্তাহে বাজারে এনেছে ‘মোস্ট গোল্ড শেয়ার’ নামে একটি গোল্ড ই টি এফ ফান্ড। প্রকল্পের বিশেষত্ব হল, ভবিষ্যতে ইউনিট ভাঙিয়ে টাকার পরিবর্তে প্রকৃত সোনা সংগ্রহ করা যেতে পারে। দেশের ২২টি শহরে এই ভাবে সংগ্রহ করা যাবে অন্ততপক্ষে ১০ গ্রাম বা তার বেশি সোনা। সোনার বিনিময়মূল্য বাজারের তুলনায় কম হবে বলে ফান্ডের তরফে দাবি করা হয়েছে। দেওয়া হবে খাঁটি আমদানি করা সোনা। ইস্যু খোলা ১৬ মার্চ পর্যন্ত।
অন্য দিকে খাঁটি সোনা বিক্রির এক বিশেষ প্রকল্প এনেছে মুথুট প্রেশাস মেটালস কর্পোরেশন। প্রকল্পটির নাম ‘মুথুট কনকবৃষ্টি’। প্রকল্পের অধীনে পাওয়া যাচ্ছে ১/২ গ্রাম, ১ গ্রাম, ৪ গ্রাম, ৮, ১০, ২০ এবং ৫০ গ্রামের স্বর্ণমুদ্রা। এ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে ২০, ৫০ এবং ১০০ গ্রামের রৌপ্যমুদ্রা। সুদ ছাড়া বর্তমান দরে কিস্তিতেও কেনা যেতে পারে ২৪ ক্যারাটের ৯৯.৯% বিশুদ্ধ আমদানি করা সোনা। গোটা মার্চ মাস খোলা থাবে এই স্বর্ণ বিপণন প্রকল্প। একই গোষ্ঠীর মুথুট ফিনান্স বাজারে ছেড়েছে ডিবেঞ্চার, যার উপর সুদ দেওয়া হবে ১৩.২৫%। সাড়ে ৫ বছরে মূল টাকা দ্বিগুণ হবে। এই ডিবেঞ্চার অবশ্য খুব উঁচু রেটিং পায়নি ক্রিসিল ও ইক্রা থেকে। অর্থাৎ লগ্নি করার আগে ঝুঁকির শর্তগুলি ভাল করে দেখে নেওয়া উচিত। ইস্যু খোলা ১৭ মার্চ পর্যন্ত। |
|
|
|
|
|