নাচের ছন্দে লন্ডন অলিম্পিক মাতাতে চলেছেন এক বাঙালি। প্রবাসী বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান আক্রম খান। তাঁর নির্দেশনায় ২৭ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করবেন ১২ হাজার কলা-কুশলী।
ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছেন, অনেকগুলো ছোট ছোট ‘ডান্স পিস’-এর পরিবর্তে একটিই উপস্থাপনা করবেন তিনি। তার মাধ্যমেই ফুটে উঠবে তাঁর বক্তব্য। অতি অবশ্যই তার সঙ্গে সাযুজ্য থাকবে অনুষ্ঠানের মূল থিমের। এ বারের অলিম্পিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানের থিম শেক্সপিয়রের ‘টেম্পেস্ট’। জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সম্মান জানাতেই বেছে নেওয়া হয়েছে এই বিশেষ থিমটি।
ব্রিটেনের খ্যাতনামা কোরিওগ্রাফারদের অন্যতম আক্রম খান। ছোটবেলা থেকেই নাচ তাঁর ভীষণ প্রিয়। মূলত মায়ের অনুপ্রেরণাতেই সাত বছর বয়স থেকে নাচ শেখা। তবে প্রথম থেকেই আক্রমের মা চেয়েছিলেন দেশ থেকে দূরে থাকলেও ছেলে যাতে দেশের সংস্কৃতি ভুলে না যায়। বাড়িতে তাই বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলা রীতিমতো ‘নিষিদ্ধ’। আক্রমের নাচেখড়িও ভারতীয় ঘরানার কত্থকে। নিজেই বললেন, পড়াশোনায় মন ছিল না একদম। লাজুক হেসে এই বঙ্গ সন্তানের স্বীকারোক্তি, “ছোটবেলায় খুব দুরন্ত ছিলাম। এক জায়গায় বেশি ক্ষণ বসে থাকতে পারতাম না। স্কুলের শিক্ষকরা মা’কে প্রায় রোজই আমার নামে নালিশ জানাতেন। কখনও কখনও ইচ্ছে করেই ফেল করতাম। আমার একদম ভাল লাগত না পড়তে।” |
ব্রিটেনের বেশিরভাগ বাংলাদেশির মতোই আক্রমের বাবারও একটা রেস্তোরাঁ রয়েছে। কিন্তু সেখানে কাজ করতে তাঁর ভাল লাগত না। তাই নাচকেই বেছে নিয়েছেন জীবিকা হিসেবেও। তবে কাজটা এত সহজ ছিল না। বললেন, “নাচ শিখতাম বলে সমবয়সী ছেলেরা আমার সঙ্গে কথা বলত না। এড়িয়ে চলত। মেয়েরা মাঝেমধ্যে কথা বলত, তবে দয়া করে।”
পরিস্থিতি বদলায় স্কুলে একটি ‘ডিস্কো’ প্রতিযোগিতায় জেতার পর। “তখনই বুঝলাম মাইকেল জ্যাকসনের মতো চালচলন করতে পারলেই লোকে ‘কুল’ বলবে।”
কোরিওগ্রাফার আক্রম খান ব্রিটেনে এখন বেশ জনপ্রিয়। ইতিমধ্যেই কাজ করেছেন ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশে, ফরাসি ব্যালে নর্তকী সিলভি গুইলেম এবং ভারতীয় সুরকার নিতিন সওহনে’র সঙ্গে। গত বছরই ‘মাতৃভূমি’ বাংলাদেশকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে উপস্থাপনা করেছিলেন ‘দেশ’ নামের একটি শো’য়ের। সেটিও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এখন কাজ চলছে ফরাসি ব্যালে নর্তকী সিলভি গুইলেমের সঙ্গে পরের শো ‘সেক্রেড মনস্টার্স’-এর। কিছু দিন আগেই তার মহড়ায় গুরুতর চোট পেয়েছেন পায়ে। কিন্তু তাতে থেমে থাকার মানুষ নন আক্রম। শিগগিরই শুরু করবেন অলিম্পিকের অনুষ্ঠানের মহড়া।
গোটা বিশ্বের চোখ যে সে দিন তাঁকেই দেখবে, জানেন আক্রম। |