প্রায় ছ’মাস ধরে টালবাহানা চলছিল। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের ১০ দিনের মধ্যেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় চার্জশিট দেওয়ার অনুমতি দিল রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার শিক্ষা দফতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে ওই অনুমতি দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিবের পাঠানো চিঠির সঙ্গে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের পর্যবেক্ষণের প্রতিলিপিও জুড়ে
দেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠির বয়ান ও আইনমন্ত্রীর দফতরের অভিমত অনুযায়ী, আর্থিক দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহা ও রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১২০ বি ধারায় চার্জশিট দেওয়া যেতে পারে। তবে ১৯৮৮ সালের দুর্নীতি দমন আইনের ধারা প্রয়োগ করে চার্জশিট দেওয়ার জন্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। সে ক্ষেত্রে প্রথমে দু’টি ধারায় চার্জশিট দিয়ে কর্মসমিতির অনুমতি সাপেক্ষে পরে অন্য দু’টি ধারা যুক্ত করা যাবে বলেও আইনমন্ত্রী অভিমত দিয়েছেন।
চিঠি পৌঁছনোর পরেই বিষয়টি রাজ্য পুলিশের ডিজি ও দার্জিলিঙের এসপিকে জানিয়ে দ্রুত চার্জশিট পেশের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার। উপাচার্য অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসেই কর্মসমিতি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন উপাচার্য। সব কিছু ঠিকঠাক চললে মার্চ মাসের গোড়ায় নতুন কর্মসমিতির প্রথম বৈঠকে মামলার বিষয়টি পেশ করা হতে পারে।
পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অফিসার, অধ্যাপক, শিক্ষক ও কর্মী জানান, মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে চার্জশিট পেশের প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করেছেন তাতে তাঁরা আশ্বস্ত। পক্ষান্তরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার-অধ্যাপক-শিক্ষক-কর্মীদের একাংশ গোড়া থেকে মামলার সারবত্তা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে সরব। তাঁরাও মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছেন।
যে মামলা ঘিরে বিতর্ক তা দায়ের হয় ২০১০ সালের এপ্রিলে। তার পরে রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু আগাম জামিন নেন। তদন্ত শেষ করে ২০১১ সালের জুন মাসে পুলিশ প্রাক্তন উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ৩টি ধারায় চার্জশিট পেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলকাতা হাইকোর্টের সরকারি কৌঁসুলির অভিমত সাপেক্ষে পুলিশকে জানানো হয়, দু’টি ধারায় চার্জশিট দেওয়ার জন্য কোনও অনুমতির দরকার নেই। তাই সে দু’টি ধারায় চার্জশিট পেশ করার অনুরোধ করেন উপাচার্য। সেই সঙ্গে কর্মসমিতির অনুমতি সাপেক্ষে পরে দুর্নীতি দমন আইনে ওই মামলায় পরিপূরক চার্জশিট পেশ করা যাবে বলেও বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু, দু’দফায় চার্জশিট দিলে মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে পুলিশ আশঙ্কা প্রকাশ করে। সে জন্য সরকারি অনুমোদন মিললে চার্জশিট পেশ করা হবে বলেও পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানায়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়ি সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে মামলার বিষয়টি জানতে পারেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, ১১ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সচিবালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও তৎপর হন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চার্জশিট দেওয়ার অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর দফতরের মতামত চায় শিক্ষা দফতর। সোমবার সেই মতামত পৌঁছয় শিক্ষা দফতরে। তার পরেই শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি মারফত সব জানিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। |